নীলফামারীর সৈয়দপুরে এক সময় কাঁচা সবজীর বাজার বসতো রেল লাইনের ধারে। এরপর বাজারের রাস্তায়। এভাবে চলতে চলতে এক সময় এ বাজার চলে আসে রেল কোয়াটার সংলগ্ন ফাঁকা জায়গায়। এখনও কলাহাটি রাস্তায় দীর্ঘ লাইন বসে সবজী বাজার। অনেকটা মিলে মিশে সবজী বাজার ভালোভাবে চলে আসছিলো শহরে। তখন সবজী বাজারে একতা সমিতি নামে একটি সংগঠন ছিলো। এ সংগঠনটি অত্যন্ত সুনামের সাথে পরিচালিত হতো। এরই মধ্যে শহরের নিষিদ্ধ পল্লি জনগনের চাপের মুখে পৌর মেয়র উচ্ছেদ করতে বাধ্য হয়। ওই পল্লি উচ্ছেদ করার পর সেখানে চলে যায় সবজী বাজার। পৌর সভার বিধান অনুযায়ী সেখানে ব্যবসা শুরু করে আড়ৎদাররা। এদের মধ্যেও গঠন করা হলো সৈয়দপুর পৌর সবজী বাজার সততা সমিতি নামে আরও একটি সংগঠন। এদিকে বেশ কিছু ব্যবসায়ী থেকে যান পূর্বের স্থানে। এক কথায় সৈয়দপুর শহরে দুই স্থানে চলতে থাকলো সবজী বাজার। করোনা সংক্রমন প্রতিরোধে এবং শহরের মধ্যে যানজট এড়াতে উভয় সংগঠনের সলাপরামর্শে বাইপাস মহাসড়কের পাশে ১১২ শতক জমি ক্রয় করে সেখানে নির্মাণ করা হয় পাকা স্থাপণা। তৈরি করা হয় ৯১টি মালিকানাধীন ঘর। নামকরণ করা হয় সৈয়দপুর কাঁচা পাইকারি সবজী বাজার। এরমধ্যে ১৬টি পান সুপারী দোকান ঘর। এ স্থানটি মুল শহর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দুরে। তারপরও সেখানে তারা ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু সেখানে দোকান ভাড়া বেশি, নিরাপত্তার অভাব, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, ব্যাংক, বিকাশ লেনদেন সমস্যা ইত্যাদি কারণে আড়ৎদার এবং ফড়িয়ারা ব্যবসা করতে নারাজ। তারা পূর্বের স্থানেই থাকতে চায়। সততা সমিতির সাধারণ সম্পাদক মকসুদ আলম গোল্ডেন জানান, নয়াবাজারে আমরা ৪০ জন আড়ৎদার, ২শ জন ফড়িয়া ব্যবসা করে আসছি। প্রতিদিন প্রায় ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকার মালামাল বেচাবিক্রী হয়ে থাকে। পৌর সভা প্রতিদিন প্রায় ৬ হাজার টাকা টোল আদায় করে। তাছাড়া বাৎসরিক প্রত্যেক দোকানদার ১ হাজার টাকা করে ট্রেড লাইসেন্স ফি দিয়ে থাকে। বর্তমানে ব্যবসায়ীরা দুইভাগে বিভক্ত হওয়ায় আমরা নানাদিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বের কারণে অনেক পাইকার এখন বাজারে আসছে না। তারা সৈয়দপুর বাজার না এসে চলে যাচ্ছে নীলফামারী, তারাগঞ্জ, পার্বতীপুর, বদরগঞ্জ বাজারে। তাই সৈয়দপুর কাঁচা বাজার ধরে রাখতে সততা সমিতির সদস্যরা মালিকানাধীন জায়গায় বাজার স্থানান্তর না করে পূর্বের স্থানে বহাল রাখার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর স্বারকলিপি প্রদান করেন। এটিকে রক্ষার্থে দাফনের কাপড় পড়ে সততা সমিতির ব্যানারে আড়ৎদাররা গত ১১ জুন পৌরসভা কার্যালয় ঘেরাও করে । পরে সৈয়দপুর পৌর মেয়র বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেন। পৌর মেয়রকে দেয়া স্মারকলিপিতে বলা হয় সৈয়দপুর পৌরসভা কর্তৃক শহরের নয়াবাজার এলাকায় প্রায় ২৫ বছর থেকে পাইকারী কাঁচা সবজি আড়ত চলে আসছে। সবজি আড়তে কাঁচা শাক-সবজি, আলু, রসুন, আদা, পেঁয়াজ, মরিচ, লেবু, শসা প্রভূতি পাইকারী বেচাবিক্রি হয়ে থাকে। সৈয়দপুর উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকা ছাড়াও আশপাশের দিনাজপুরের পাবর্তীপুর, চিরিরবন্দর, খানসামা, রংপুরের বদরগঞ্জ, তারাগঞ্জ এবং নীলফামারী সদর ও কিশোরগঞ্জ উপজেলার কৃষকরা তাদের জমিতে উৎপাদিত কৃষি পণ্য নিয়ে এসে সৈয়দপুর পৌর পাইকারী সবজি আড়ত নয়াবাজারে বিক্রি করে থাকেন। এদিকে চলমান বৈশ্বিক কারোনা ভাইরাসের সংক্রমন রোধে জনসমাগম এড়াতে সামাজিক দূরত্ব বজায় ও স্বাস্থ্য বিধি মেনে নয়াবাজার পৌর পাইকারী কাঁচা সবজি বাজারটি সৈয়দপুর-দিনাজপুর বাইপাস মহাসড়কের পাশে মিস্ত্রিপাড়া এলাকায় ব্যক্তি মালিকাধীন জায়গায় উপজেলা প্রশাসনের মৌখিক নির্দেশে গত ১৩ মে স্থানান্তর করা হয় কিন্তু গত ৩১ মে সরকারি ছুটি তথা লকডাউন শিথিল করা হলে আড়তদার ব্যবসায়ী নয়াবাজার পাইকারী কাঁচা সবজির আড়তে পুনরায় আড়তদারী ব্যবসা শুরু করেন। ফলে দুই গ্রুপে সৃষ্ঠি হয় বাজার স্থানান্তর নিয়ে দ্বন্দ্ব। যে কোন সময় তাদের মধ্যে বড় ধরনের সংঘর্ষ বাঁধতে পারে বলে শহরের সচেতন মহল মন্তব্য করেন। অনেক ব্যবসায়ি বলেন সংঘর্ষে না গিয়ে পৌর মেয়র দুই স্থানে বাজার বসার অনুমতি দিলে এতে সরকারের রাজস্ব বাড়বে। তাছাড়া দুই স্থানে বাজার বসলে ক্ষতি কোথায়।