সরাইল উপজেলা প্রাণি সম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্র এসেছিলেন প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াসেক উদ্দিন। গতু মঙ্গলবার সকাল ৯ টায় তিনি সরাইল প্রাণি সম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্রে উপস্থিত হন। এর আগেই সকাল ৮টায় এসেছিলেন জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা: মো. সাইফুজ্জামান। কিছুক্ষণ পরই ভুক্তভোগীরা এসে পত্রিকার রিপোর্ট দেখিয়ে বিভিন্ন ধরণের অনিয়মের নালিশ করতে থাকেন। সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা বোরহান উদ্দিন বলেন, আমার নামে ভূয়া ভাউচার তৈরী করে টাকা আত্মসাৎ করেছেন জাহাঙ্গীর আলম। আমি ছাগল প্রকল্পের শেড নির্মাণের জন্য সরকারি কোন টাকা নেয়নি।
সূত্র জানায়, প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা: মো. জাহাঙ্গীর আলম সরাইলে যোগদানের পর থেকে লাগামহীন ভাবে অনিয়ম দূর্নীতি করে যাচ্ছেন। ছাগল প্রকল্প, বিভিন্ন প্রশিক্ষণ সহ বেশ কয়েকটি খাতের ভূয়া বিল ভাউচার তৈরী করে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করছেন। গত ২০ জুন শনিবার ‘ফেয়ার নিউজ ২৪ ডটকম’ ও ২১ জুন রোববার জেলা থেকে প্রকাশিত দৈনিক ব্রাহ্মণবাড়িয়া’ পত্রিকায় ওই দফতরের অনিয়ম দূর্নীতি নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। ফলে ২১ জুন হাসপাতালে আসেন জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা: মো. সাইফুজ্জামান। তিনি ৪-৫ ঘন্টা অবস্থান করে চলে যান। ডা: মো. জাহাঙ্গীর আলম নিজেকে রক্ষার জন্য সাজিয়েছেন নাটক। তিনি (ডা: জাহাঙ্গীর আলম) বিভিন্ন মাধ্যমকে ও কর্তৃপক্ষকে বলেছেন সরাইল সদর ইউনিয়নের সৈয়দ বোরহান উদ্দিনকে ২০১৯ সালে ২০ হাজার টাকায় ছাগল প্রকল্পের শেড করে দিয়েছেন। বোরহান উদ্দিনের নামে ভূয়া বিল ভাউচারও জমা দিয়েছেন। বোরহান উদ্দিনের মূল বাড়ি নবীনগরে। সরাইল সদরের আলীনগর এলাকায় তিনি ভাড়া বাসায় থাকেন। আর জাহাঙ্গীর আলমের বাড়িও নবীনগর। মঙ্গলবার ২৩ জুন ‘দৈনিক ভোরের কাগজ’ ও ‘দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদ’ সহ আরো কয়েকটি মিডিয়ায় জাহাঙ্গীর আলমের দূর্নীতি ও জালিয়াতির খবর বিশদ ভাবে প্রকাশিত হয়। আর হঠাৎ করে গত মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে সরাইল প্রাণি সম্পদ হাসপাতালে হাজির হন প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াসেক উদ্দিন। তিনি ওই দফতরের বসার কতক্ষণ পরই হামিদ মিয়া (৪৫) নামের এক ভুক্তভোগী ‘প্রতিদিনের সংবাদ’ নামের একটি জাতীয় পত্রিকা সচিবের হাতে তুলে দেন। আর আক্ষেপ করে বলেন, ‘স্যার পত্রিকাটি পড়ে দেখেন উনি (জাহাঙ্গীর আলম) এখানে বসে বসে কি করছেন?’ এর কিছুক্ষণ পর ভুক্তভোগী আরেক মহিলা সচিবের কাছে এখান থেকে ওষুধ না পাওয়ার অভিযোগ করেন। সচিবের আগমনের খবরে একে একে হাসপাতালে জড়ো হতে থাকেন ভুক্তভোগী লোকজন ও খামারীরা। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সচিব চলে যান। সরজমিনে বোরহান উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় বাড়ির সামনে সুন্দর গেইট। চমৎকার একটি একতলা ভবনে স্ত্রী পুত্র ও কন্যাকে নিয়ে বসবাস করছেন তিনি। তারা জানায়, এক বছর আগে ২২/২৩টি ছাগল পালন করতেন। বিভিন্ন ধরণের রোগের কারণে ছাগল গুলো নিয়ে ঝামেলায় পড়েন। ওই সময়ে তিনি ভ্যাকসিনের জন্য যেতেন প্রাণি সম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্রে। বোরহান উদ্দিন (৫৫) ও ওঁর ছেলে শাব্বির মিয়া (২৪) বলেন, আমরা সরাইল প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তার দফতর থেকে ছাগলের শেডের জন্য কোন টাকা পায়নি। অনেক আগে নিজেদের টাকায় একটি শেড করেছিলাম। কেউ আমাদের শেডের ছবি দিয়ে বিল করে থাকলে সেটা জালিয়াতি করেছে। এ অপকর্মের বিচার হওয়া উচিত।
প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা: মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমি গত বছরের ৯ অক্টোবর যোগদান করি। গত অর্থ বছরে বোরহান উদ্দিনকে আমার ভেটেনারী সার্জন এর তত্বাবধানে ছাগলের শেডের জন্য সহযোগীতা করা হয়। আর আগেই বোরহান উদ্দিনকে শেডের জন্য অর্থ দেয়া হয়েছিল। যারা শেডের জন্য অর্থ পায়নি। তারাই এ ধরনের বিভ্রান্ত তথ্য প্রচার করছে। আগে যাদের নাম ছিল তাদের ড্রপ আউট করা হয়েছে। অচিরেই আমরা উপজেলার শাহজাদাপুরে একজন খামারীকে শেডের জন্য অর্থ প্রদান করব। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সালেহ মো. মোসা বলেন, ছাগল প্রকল্পের শেডের টাকা কেউ পায়নি। আর প্রশিক্ষণ গুলো দ্রƒত করে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছি। ছাগল প্রকল্পের মেলার প্রস্ততির কথাও বলেছি। মেলা দুইজনকে দুইটি টেলিভিশন দেওয়ার কথা রয়েছে। তাও নিশ্চিত করে র্যালিসহ অন্যান্য কাজ নিয়মের মধ্যে করতে বলেছি।