ঘরের মদে পানি। বাইরোত পানি। কোনটে যাবা, খালি পানি আর পানি। এ্যাংকে যন্তনা, সাড়া বাড়িই পানি- হামরা একন কোনটে যাই। গত দুইদিন হলো ঘরে পানি ওঠায় নিজের ঘর ছেড়ে উঁচু স্কুলের বারান্দায় গিয়ে আশ্রয় নেওয়া গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার বন্যা কবলিত গাড়ামারা গ্রামের বাসিন্দা তছলিম উদ্দিন এভাবেই বলছিলেন। পরিবারের ৬ সদস্য নিয়ে কষ্টেই আছেন বলে জানালেন। একই ভাবে স্কুল কক্ষে পরিবারের ৫ জন সদস্য সহ আশ্রয় নেওয়া ওই গ্রামের ফয়জার হোসেন বললেন, উচে জাগাতেও মানুষ ভর্যা যাচ্চে। এ্যানা কষ্ট করেই আছি হামরা। এভাবেই বন্যার পানিতে ভাসা মানুষ গুলো নিজেদের কষ্টের কথা বলেন এ প্রতিবেদককে। সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বন্যা কবলিত ইউনিয়ন গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অবনতি হয়েছে হলদিয়া ইউনিয়নে। এখানকার কোন গ্রাম জেগে নেই। থৈ থৈ পানিতে লোকজন নিজেদের ঘরের খাবার, আসবাবপত্র ও গবাদি পশু পানি থেকে রক্ষার চেষ্টা করছেন। আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন উঁচু কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা বাঁধ ও সড়কের দিকে। গাড়ামারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কক্ষ ও বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছেন আমিরুল ইসলাম, সুজন মিয়া, হানিফ মিয়া, ফয়জার হোসেন, রাসেল আহম্মেদ ও কানাইপাড়া আশ্রয়ণ কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন ভিকু মিয়া, আশরাফ আলী, ফকির উদ্দিন, বেলাল মন্ডল সহ আরও বেশ কিছু পরিবার। আবার অনেকে উঁচু স্থান তৈরি করে নিজেদের ঘরেই কষ্ট করে বসবাস করছেন। হলদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ইয়াকুব আলী জানান, এ ইউনিয়নের কোন বাড়ি জেগে নেই। সব গ্রামের ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে গেছে। এদিকে গতকাল সরেজমিন ফুলছড়ি উপজেলার কয়েকটি গ্রামে গেলে দেখা যায় ঘরের ভিতর পানি ঢুকে পরায় লোকজন তাদের ধান, চাল ও আসবাবপত্র ঘর থেকে বের করছেন। এখানে দেখা যায় উপজেলার কাতলামারি গ্রামের ছুনু মিয়া তার ঘরের মালামাল বের করছেন। তিনি বলেন, আর একটু দেরি করলে ধান চাল সহ ঘরের খাবার সব নষ্ট হবে। তাই বড় রাস্তায় অস্থায়ী ঝুপড়ি তুলে সেখানে থাকবেন। এদিকে বেড়েই চলছে ব্রহ্মপুত্রও যমুনা নদীর পানি। প্লাবিত হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। সোমবার বিকালে গাইবান্ধার ফুলছড়ি ও সাঘাটায় পানি বাড়তে থাকায় প্লাবিত হয়েছে দুই উপজেলার আরও ৪নতুন নতুন গ্রাম। জানা গেছে, ফুলছড়ি ইউনিয়নের বাজে ফুলছড়ি নামাপাড়া, পশ্চিম কালুরপাড়া, পেপুলিয়া, গাবগাছি, পূর্ব টেংরাকান্দি, খোলাবাড়ি, দেলুয়াবাড়ি, জামিরা, বাগবাড়ি, সন্যাসীর চর, মাগরীঘাট, পশ্চিম জিগাবাড়ী, বুলবুলি, পাগলারচর, কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের রসুলপুর, খলাইহারা, পূর্ব কঞ্চিপাড়া, উড়িয়া ইউনিয়নের রতনপুর, কালাসোনা, উত্তর উড়িয়া, উদাখালী ইউনিয়নের পূর্ব সিংড়িয়া, গজারিয়া ইউনিয়নের গলনা, কাতলামারি, জিয়াডাঙা, ফজলুপুর ইউনিয়নের পূর্ব খাটিয়ামারী, কাউয়াবাধা, উজালডাঙা, কৃষ্ণমনি ও সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া, নলছিয়া, গাড়ামারা, গোবিন্দপুর, সিপি, বেড়া, বাঁশহাটা, ভরতখালী, বরমতাইড়, হাসিলকান্দি, চিনিরপটল সহ অন্তত ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বাড়িঘর ডুবে যাওয়া হলদিয়া ইউনিয়নের নলছিয়া গ্রামের জামাল উদ্দিন জানান, আসবাবপত্র ও ধান চাল নিয়ে বড় বিপাকে পড়েছি। উঁচু সড়কের খোঁজে বের হয়েছি। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ২৪ ঘন্টায় ফুলছড়ির তিস্তামুখঘাট পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ৩২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৬৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির এ ধারা আরও দুইদিন অব্যাহত থাকতে পারে। গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান জানান, আমি সহ পাউবোর লোকজন সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছি।
সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর বলেন, সার্বক্ষনিক খোঁজ খবর রাখছি। বন্যা কবলিতদের সহযোগিতার জন্য উপজেলা প্রশাসন সবসময় প্রস্তুত আছে।