জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের অধিকাংশ মানুষ হতদরিদ্র ও গৃহহীন। তাদের বাপদাদার ভিটায় খড়ের ছাউনিযুক্ত ছোট ঝুপড়ি ঘরে কষ্টে দিনের পর দিন কাটতে হতো ঐসব হতদরিদ্র ও গৃহহীন পরিবারের সদস্যদের। বৃষ্টি এলে খড়ের ছাউনির ভিতর দিয়ে পানি পড়ত। আর দিনের বেলা খড়ের ছাউনির ভিতর দিয়ে আসত সূর্যের কিরণ। তবে তাদের সেই জীর্ণ বাড়িতে থাকার দিন এখন অতীত হয়েছে। তাদের নিজের এক চিলতে জমিতে পাকা বাড়ি করে দিয়েছেন বর্তমান সরকার। এমন একটা বাড়িতে থাকতে পেরে ঐসব হতদরিদ্র ও গৃহহীন পরিবারের সদস্যরা কষ্টের কথা ভুলে গেছেন। স্বপ্নের বাড়িতে তাঁদের এখন স্বস্তির জীবন।
সরেজমিনে ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যেগের যার জমি আছে বাড়ি নেই তার নিজ জমিতে উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ৩২জন গৃহহীন ও হতদরিদ্র পরিবার সরকারের কাছ থেকে বাড়ি উপহার পেয়েছে। চলতি জুন মাসের ২৯ তারিখে একযোগে উপজেলার ৩২জন গৃহহীনদের কাছে নতুন বাড়ি বুঝিয়ে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোবারক হোসের পারভেজ। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন গ্রামীণ অবকাঠামোগত রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচির আওতায় বিশেষ বরাদ্দে গৃহহীনদের জন্য পাকা বাড়িগুলো তৈরি হয়েছে। প্রতিটি বাড়ি নির্মাণে খরচ হয়েছে ২ লাখ ৯৯ হাজার ৮শ ৬০ টাকা। প্রায় ২ শতাংশ জমিতে ২১ ফিট দৈর্ঘ্য ও ১০ ফিট প্রস্থের মজবুত করে তৈরি টিনশেড সেমিপাকা বাড়িতে একটি রান্নাঘর, ৭ফিট চওড়া বারান্দাসহ দুটি থাকার কক্ষে ৪টি দরজা ও ৪টি জানালা রয়েছে। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও সোলার প্যানেল এ ছাড়া পাশে আলাদা টয়লেটও রয়েছে। বাড়ির সামনে রয়েছে কয়েকটি ফলের গাছ ও ফুলের বাগান। সবকিছু মিলিয়ে যেন এক স্বপ্নের নীড়। সরকারের প্রদত্ত সুবিধা পাওয়া ঐসব হতদরিদ্র ও গৃহহীনদের মধ্যে বিনামূল্যে মাথা গুজার ঠাঁই পেয়ে নিজেদের দীর্ঘদিনের শত কষ্টের গ্লানি মুছে ফেলেন তারা। সরকারিভাবে বাড়ি বরাদ্দ পাওয়া এক একটি গৃহহীন পরিবারের সদস্যরা আনন্দে আবেগাপ্লুত হয়ে দু-চোখের জল ফেলে সরকারকে গভীর ভাবে কৃতজ্ঞতার সাথে স্বরন করেছেন।
উপজেলার কুশুমশাড়া গ্রামের সেকেন্দার আলী (৬০) জুন মাসের ২৯ তারিখে নতুন পাকা বাড়ি বুঝে পান। সেই সময় তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, এমন একটা সুন্দর পাকা বাড়িতে থাকতে পারব, জীবনে কখনোও কল্পনা করিনি। নিজের একখন্ড ভিটায় বিনা মূল্যে বাড়িটি তৈরি করে দেয়েছেন বর্তমান সরকার। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি আমাদের মত গরিবদের কথা মনে রাখেন। আল্লাহ তাকে দীর্ঘজীবি করুক।
একই উপজেলার মোলামগাড়ীর মতিউর রহমান (৫০) বলেন, দীর্ঘ দিনের স্বপ্নছিল একটি সুন্দর বাড়ি করার, কিন্তু অভাব অনটনের জন্য তা আর কখনো করার সম্ভব হয়নি। আজ আমাদের সেই স্বপ্নের বাড়ি নির্মাণ করে স্বপ্ন পূরণ করে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ আমরা মহাখুশি, আমাদের এখন আর কোন চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই।
উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আ.ন.ম.শওকত হাবিব তালুকদার লজিক বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোনার বাংলা গড়ার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা করতে পেরেছেন। সরকারের সফল কর্মসূচির মধ্যে বিনা মূল্যে হতদরিদ্র ও গৃহহীনদের মাঝে পাকাবাড়ি বরাদ্দের এই প্রকল্পটি অন্যতম। প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী এ প্রকল্প এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। গ্রামে গ্রামে এ প্রকল্পের বিস্তৃতি হওয়ার ফলে মাথা গোঁজার ঠাঁই পাচ্ছেন সমাজের পিছিয়ে পড়া বিপুল জনগোষ্ঠী। এর ফলে সরকারের ভাবমূর্তি অনেক উজ্জ্বল হচ্ছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) জিয়াউদ্দিন আহমেদ বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী কালাই উপজেলায় ৩২টি পাকাবাড়ি তৈরি হয়েছে। জুন মাসের ২৯ তারিখে একযোগে আনুষ্ঠানিকভাবে উপজেলার ৩২জন সুবিধাভোগীদের নিকট বাড়িগুলোর কাগজপত্র হস্তান্ত করা হয়েছে।
কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোবারক হোসের পারভেজ বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী তা যাচাই-বাছাই করে গৃহহীন ও হতদরিদ্রদের মাঝে বাড়িগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উপজেলার হতদরিদ্র ও গৃহহীনদের মধ্যে বিনামূল্যে মাথা গুজার ঠাঁই পেয়ে তারা অনেক খুশি হয়েছেন।