সরকারের নানমুখী উদ্যোগের ফলে দেশের দক্ষিনের জনপথ পটুয়াখালী শহর এবং সংলগ্ন এলাকাগুলোতে চলছে নানামুখী উন্নয়নের মহড়া। ইতোমধ্যেই চলমান ও গৃহীত একাধিক টুইন সড়ক, নান্দনিক লেক আর ব্রীজ নির্মানের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে গ্রাম হবে শহর, আর স্বাভাবিক প্রবাহে ফিরবে শহরের ঐতিহ্যবাহী খালগুলো। শোভাবর্ধন হবে শহরের প্রত্যস্ত এলাকার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এলাকার মানুষের মেলবন্ধনের মধ্য দিয়ে।
সরকারের এসব উন্নয়ন কর্মকান্ডের ফলে জেলা শহরটি এখন অনেকটাই ব্যস্ততম একটি শহরে পরিনত হয়েছে। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে অদূরেই থাইল্যান্ড কিংবা সিঙ্গাপুরে আদলে একটি উন্নত শহরে পরিনত হবে পটুয়াখালী। এমন পরিকল্পনাকে মাথায় রেখে পটুয়াখালী জেলা শহরের সাথে এর আশপাশের ইউনিয়ন গুলোকে আরও কাছাকাছি সংযুক্ত করতে বেশ কিছু আধুনিক এবং দৃষ্টিনন্দন ব্রীজ নির্মানের উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি)।
পটুয়াখালী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুস ছত্তার জানান, পটুয়াখালী সদর উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নকে জেলা সদরের সাথে সরাসরি সংযুক্ত করার পাশপাশি জেলার ঐতিহ্যবাহী বহালগাছিয়া খালকে আবারও তার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সদর উপজেলার পেছনের বাঁধটি অপসারন করে সেখানে ৮১ মিটার দীর্ঘ একটি দৃষ্টিনন্দন ব্রীজ নির্মান করা হবে। একই ভাবে বহালগাছিয়া খালের উপর নির্মিত গরুর বাঁধ অপসারন করে সেখানেও ৮১ মিটার দীর্ঘ একটি ব্রীজ নির্মান করা হচ্ছে। যা অনেকটা হাতিরঝিলের ব্রীজের আদলে দৃষ্টিনন্দন ডিজাইন করা হয়েছে। এ ছাড়া মাদারবুনিয়া ইউনিয়নের সাথে পটুয়াখালী পৌর শহরকে সংযুক্ত করতে কুড়িরখাল এলাকায় একটি ৪৫ মিটারের ব্রীজ নির্মিত হবে। এর ফলে জেলা শহরের সাথে ছোটবিঘাই, বড়বিঘাই, মরিচবুনিয়া এবং মাদারবুনিয়া ইউনিয়নের নতুন একটি সংযোগ স্থাপিত হবে। একই ভাবে পটুয়াখালী পৌরসভার সাথে কালিকাপুর ইউনিয়নের নতুন সংযোগ স্থাপন এবং ফুলতলা খালটি প্রবাহমান করতে বাঁধ অপসারন করে সেখানে ৪৫ মিটারের একটি ব্রীজ নির্মান করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এমন গুরুত্ব বিবেচনা করে মোট ১২ টি ব্রীজ নির্মানের জন্য ইতোমধ্যে টেন্ডার আহবান করে যাবতীয় কার্য সম্পাদন করা হচ্ছে। এ সকল ব্রীজ নির্মিত হলে এই অঞ্চলের মানুষের সড়ক যোগাযোগ যেমন সহজ হবে পাশপাশি খাল গুলো আবারও তার স্বাভাবিক জীবন প্রবাহ ফিরে পাবে। খালের দখল হওয়া জমি পুনরুদ্বার করে কৃষি কাজে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা যাবে বলেও জানান নির্বাহী প্রকৌশলী।
এদিকে, পটুয়াখালী পৌরসভা মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শতবর্ষ পরিকলল্পনাকে বাস্তবে রুপ দিতে গ্রামেও শহরের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা এবং খাল ও জলাধার গুলোকে তার স্বাভাবিক গতিতে ফিরিয়ে আনতেই এই ব্রীজগুলো নির্মানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ২০২১ সালের জুনের মধ্যে এসব ব্রীজের নির্মান কাজ শেষ করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হচ্ছে। এছাড়াও পৌর এলাকার আনসার ক্যাম্প হতে বিটাইপ হয়ে উপজেলার বাঁধ সংলগ্ন বহালগাছিয়া পর্যন্ত পরিত্যাক্ত খালের সংযোগকে পুনরুজ্জিবীত করে নান্দনিক খালে রুপান্তরিত করার কাজ এগিয়ে চলছে দ্রুত গতিতে। মিনি পার্কের ন্যয় খালের দু’পাড়ে লাগানো হয়েছে নানা জাতের গাছের চারা, বসানো হবে বেঞ্চ। লেকে চড়ানো হবে প্যাডেল বোর্ড আর লেক সংলগ্ন সড়কগুলোকে করা হবে ওয়াকিং জোন। সার্র্কিট হাউজ মোড় হতে চৌরাস্তা পর্যন্ত নির্মান হচ্ছে টুইন সড়ক। ফরেস্ট পুকুর আর আরামবাগ দীঘী পুনঃখননের মধ্য দিয়ে নির্মান হচ্ছে মিনি শিশুপার্ক। শহরের প্রত্যস্ত এলাকার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এলাকার মধ্যে নতুন নতুন সড়ক নির্মানের ফলে মেলবন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছে বসতিরা। এছাড়াও উন্নয়ন পরিকল্পনায় আরো রয়েছে অনেক উন্নয়নের মাষ্টার প্লান।
পটুয়াখালী জেলা জুড়ে উন্নয়নের মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম পায়রা সমুদ্র বন্দর, একাধিক পায়রা তাপ বিদুৎ কেন্দ্র, সাব মেরিন ক্যাবল ষ্টেশন, শেখ হাসিনা সেনানিবাস, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, লেবুখালী ব্রীজ আর কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্র ঘেরা উন্নয়নের যোগসূত্র হবে পটুয়াখালী পৌরসভা। এমন স্বপ্নে বিভোড় হয়ে আছেন পৌর এলাকার লাখো নাগরিক।