কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে রাবেয়াকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগের ঘটনা নিয়ে নানান রকম গুজব রটেছে। একটি ভিডিওকে কেন্দ্র করে কেউকেউ এ হত্যাকান্ডকে আত্মহত্যা বলে প্রচারণা চালাচ্ছে। এনিয়ে এলাকায় কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে। গত রবিবার সকাল ১১টার দিকে উপজেলার জোড্ডা পশ্চিম ইউনিয়নের মান্দ্রা গ্রামের আলী মিয়ার মেয়ে রাবেয়া আক্তারের (২০) লাশ ঘরের মেঝেতে পাওয়া যায়। এ সময় রাবেয়ার বৃদ্ধা নানী জমিলা খাতুন বলেন, তিনজন লোক বাড়িতে এসে দু‘যুবক ঘরে প্রবেশ করে এবং মধ্য বয়সী এক লোক বাহিরে অপেক্ষা করে। জমিলা খাতুন ওই সময়ে ঘরের বাহিরে সবজি কাটতে ছিলেন। ওইদিন বেলা ১১টার দিকে জমিলা খাতুনের মেয়ে রাবেয়ার মা জাহানারা বেগম স্থানীয় মান্দ্রা বাজার থেকে এসে তার মায়ের নিকট মেয়ে রাবেয়া কোথায় জানাতে চায়? রাবেয়া ব্যাংকের দু‘জন লোকের সাথে ঘরের ভিতর কথা বলছে বলে জাহানারা বেগমকে জানান তার মা জমিলা খাতুন। জাহানারা বেগম ঘরে ঢুকে ঘরের মেঝেতে রাবেয়ার নিথর দেহ দেখতে পায়। পরে জাহানারা বেগম বাড়িতে আসা তিনজনের মধ্যে দু‘জন রাবেয়াকে ধর্ষণের পর হত্যা করেছে বলে এলাকাবাসীকে জানায়। রাবেয়া কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ১৮ নং ওয়ার্ডের নুরপুর গ্রামের মাসুদ মজুমদারের ছেলে কাতার প্রবাসী মেহেদী হাছানের স্ত্রী।
এদিকে, গত মঙ্গলবার থেকে রাবেয়াদের ঘরের সিলিংয়ে ঝুলন্ত একটি কাপড়ের টুকরো নামানোর ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওটিতে রাবেয়ার মা, চাচা দুলাল, রাবেয়া বোন এবং বাড়ির অন্যান্য মহিলাদের দেখা যায়। এনিয়ে রাবেয়া আত্মহত্যা করেছে বলে দাবী করে কিছু লোক প্রচারণা চালায়! এছাড়া রাবেয়ার মৃত্যুর একদিন পূর্বে ‘‘তোকে নিয়ে দেখা’’ নামে ফেসবুক একাউন্ট থেকে চেহারা না দেখা যাওয়া একটি মেয়ের অশ্লীল ভিডিও রাবেয়ার নামে ছড়িয়ে দেয়া হয়। তবে অপপ্রচার চালানো সেই ফেসবুক একাউন্টি এখন আর খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এ ভিডিওকে কেন্দ্র করে রাবেয়া হত্যা নিয়ে জনমনে কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে। আবার অনেকে মনে করছে হত্যাকারীরা এ অপপ্রচার চালিয়ে কৌশলে একটি হত্যাকান্ডকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। অপর দিকে, হত্যাকান্ডের ঘটনার পর থেকে রাবেয়াদের বাড়ীতে গণমাধ্যমকর্মীরা যখনি ঘটনার মূল বিষয় জানতে গিয়েছে সাংবাদিকরা উপস্থিত হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে ওই বাড়ীতে স্থানীয় ভবানিপুর গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে নজরুল ইসলাম নামে এক জুতা ব্যবসায়ী উপস্থিত হয়ে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে সংবাদকর্মীদের বিভ্রান্ত ও তাদের সাথে অশোভন আচরণ করেছে। তাছাড়া ওই নজরুল এলাকার কেউ রাবেয়ার বাড়ীতে গেলে তাদেরকেও অপমান করে আসছে। রাবেয়ার পরিবারের কেউ এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাইলে নজরুলের ভয়ে কেউ বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি।
এ ব্যাপারে জুতা ব্যবসায়ী কতিথ সাংবাদিক নজরুল গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, আপনাদের কোন বিষয়ে জানতে হলে থানা পুলিশের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
এ ঘটনায় নাঙ্গলকোট থানা পুলিশের পাশাপাশি, চৌদ্দগ্রাম সার্কেল সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার, সিআইডি, পিবিআই এর স্পেশাল ক্রাইম সিম ম্যানেজমেন্ট টিম ও ডিবির এল আই টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। পরে সোমবার রাবেয়ার পিতা আলী মিয়া বাদি হয়ে ৪ জনের নামসহ ৮জনকে আসামী করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে নাঙ্গলকোট থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নাঙ্গলকোট থানা ওসি (তদন্ত) আশ্রাফুল ইসলাম বলেন, রাবেয়াকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে দাবী করে মামলা করা হলেও সিআইডি, পিবিআই ও ডিবির টিম রাবেয়াকে ধর্ষণের কোন আলামত পাননি বলে জানিয়েছেন। যে ফেসবুক একাউন্ট থেকে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানার অভিযোগ উঠেছে সে বিষয়ে তদন্ত চলমান রয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে ঘটনার মূল বিষয় জানা যাবে।