করোনা প্রাদুর্ভাবের মধ্যেই এবার বন্যাও দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জুলাইয়ের প্রথম থেকে এদেশে বন্যা প্রকোপ শুরু হয়। প্রতি বছর বন্যায় উত্তরের জেলাগুলোই বেশি আক্রান্ত হয়। সাধারণত ওসব এলাকায় মধ্য মেয়াদে বন্যার প্রবণতাই বেশি দেখা দেয়। তারপর থেকে মধ্যাঞ্চল হয়ে নিম্নাঞ্চল দিয়ে বন্যার পানি সাগরে গিয়ে পড়ে। বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হতে থাকে। কিন্তু এবার স্বাভাবিক সময়ের দু’সপ্তাহ আগেই বন্যার প্রকোপ শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোথাও বন্যার কাক্সিক্ষত উন্নতি হয়নি। এই অবস্থায় ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হবে। রূপ নিতে পারে দীর্ঘমেয়াদী বন্যায়। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও আবহাওয়া অধিদফতর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রধান নদ-নদী ছাড়া দেশের প্রায় সব প্রধান নদ-নদীর পানি এখনো বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের ১১ জেলা যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, পদ্মার পানিতে প্লাবিত। উত্তর-পূর্বাঞ্চলেও বন্যার পানি সরেনি। এ অবস্থায় অতি ভারি বর্ষণে ওসব এলাকায় পুনরায় বন্যা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলে আপার মেঘনা অববাহিকায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও উত্তরাঞ্চলে অন্যত্র বন্যা এখনো স্থিতিশীল রয়েছে। তবে মধ্যাঞ্চলে পানি বেড়ে বন্যার অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কয়েক দিন ধরেই যমুনা নদীর পানি স্থিতিশীল রয়েছে। ফলে উত্তরের বন্যারও কাক্সিক্ষত উন্নতি হচ্ছে না। কিন্তু পদ্মা এবং অন্য প্রধান নদীগুলোর পানি এখনো বাড়ছেই। ফলে ওসব নদীর অববাহিকায় নতুন করে বন্যার আশঙ্কা বাড়ছে। এ অবস্থায় উজান থেকে আসা পানির পরিমাণ বেড়ে গেলে এবং দেশের ভেতরে আবারো ভারি বৃষ্টিপাত শুরু হলে বন্যা পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। এমনকি বর্তমান পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার আগেই আরেক দফায় বন্যার কবলে পড়তে পারে।
সূত্র জানায়, হিমালয়ের বরফ গলা পানি থেকে শুরু করে উজানে নেমে আসার পানির শতকরা ৯০ ভাগই দেশের ভেতরের প্রবাহিত নদীর মাধ্যমে সাগরে গিয়ে পড়ে। কিন্তু এই পানি চাপ যখন বেশি পরিমাণ বেড়ে যায় তখন নদী তীরবর্তী এলাকায় উপচিয়ে বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। এবার মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই উজানের পানির কারণে নদ-নদীগুলোতে অস্বাভাবিক পানির চাপ বেড়ে যায়। বিশেষ করে উত্তরের প্রধান নদী যমুনার পানি মধ্য জুন নাগাদই বিপদ সীমার কাছাকাছি পৌঁছে যায়। জুনের শেষ সপ্তাহ থেকেই উত্তরের জেলায় বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হতে থাকে। উত্তরের বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হয়ে পড়লে বন্যার কাক্সিক্ষত কোন উন্নতি হয়নি। দেশের মধ্যাঞ্চলেও পানি বাড়ছে। আর আবহাওয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী বর্তমানে দেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমলেও আবারো ভারি বৃষ্টিপাতের আভাস রয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া তীব্র ¯্রােত বাড়ছে। ওই এলাকায় নৌযান পারাপার ব্যাহত হচ্ছে। পারাপারে সময় লাগছে আগের তুলনায় দ্বিগুণ। নদীতে ¯্রােত বেড়ে যাওয়ায় ওই রুটে ছোট ছোট লঞ্চ চলাচল বন্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত কয়েকদিন দেশে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমলেও আবারো ভারি বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে আবারো সক্রিয় হয়ে পড়ছে মৌসুমি বায়ু। এ অবস্থায় রংপুর ময়মনসিংহ এবং সিলেট বিভাগে ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। ইতিমধ্যে উত্তরের জেলা এবং সিলেট বিভাগের ভারি বর্ষণ শুরু হয়েছে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষ রাজস্থান, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, হিমালয়ের পাদদেশীয়, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল হয়ে অসম পর্যন্ত বিস্তৃত। এর একটি অংশ উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত।