চলবিল অধ্যুষিত পাবনার চাটমোহর,ভাঙ্গুড়া,ফরিদপুরসহ অন্যান্য উপজেলায় কদও বেড়েছে ডিঙি নৌকার। আগাম বন্যার কারণে এ অঞ্চলের বড়াল,গুমানী,চিকনাই নদীসহ খাল-বিল ভরে গেছে। অনেক এলাকায় নৌকাই চলাচলের একমাত্র ভরসা। ফলে বেড়েছে নৌকার চাহিদা। করোনাকালীন এই সময়েও থেমে নেই নৌকার কারিগরেরা। তারা নতুন নতুন নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সকাল থেকে রাত অবধি তারা নৌকা তৈরির কাজ করে চলেছেন। সূত্রধর পাড়ায় তাদের যেন দম ফেলবার ফুসরাত নেই। চাটমোহর উপজেলার মির্জাপুর,ছাইকোলা,হান্ডিয়াল.ভাঙ্গুড়ার উত্তর মেন্দা কালিবাড়ি ও জগাতলা বাজার এলাকার মিস্ত্রী পাড়ার বাসিন্দারা আষাঢ়-শ্রাবণ-ভাদ্র এই তিন মাস নৌকা তৈরির কাজে ব্যস্ত থাকেন। তবে এবার আগাম বন্যার কারণে এই অঞ্চলে নৌকার চাহিদা অনেকটাই বেড়ে গেছে। একজন নৌকা তৈরির কারিগর এই এক বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৫০টি নৌকা তৈরির কাজ করে থাকে।
শুক্রবার সরেজমিন এসব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় ১০টি নৌকা তৈরির কারখানা রয়েছে। চলনবিল পাড়ের বাসিন্দারা বর্ষা আসার শুরুতেই তাদের নৌকার প্রয়োজন দেখা দেয়। আর সে দিকের প্রতি নজর রেখেই ওই সব এলাকার মানুষেদের জন্য নৌকা তৈরির কারখানাতে নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। করোনাভাইরাস তাদের এ পেশাতে তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বছরের অন্যান্য সময় কাঠের মিস্ত্রী পাড়ায় তেমন কোনো কাজ না থাকলেও নৌকা তৈরির কাজে আষাঢ় মাস থেকে শুরু করে ভাদ্র মাস পর্যন্ত ব্যস্ত থাকতে হয়। বিশেষ করে ১০ হাত থেকে শুরু করে ১৪ হাত পর্যন্ত লম্বা ডিঙি নৌকার চাহিদা বেশি। এই ধরণের এক একটি নৌকা তৈরিতে তাদের খরচ হয় ১০ থেকে ১৪ হাজার টাকা। আর নৌকা তৈরিতে সিসা ও আম কাঠের ব্যবহার করে থাকেন। একটি নৌকা তৈরি করে বিক্রিয় করতে পারলে ৬শত থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত একজন শ্রমিকের মুজরীসহ লাভ থাকে। অনেক সময় কারিগররা ক্রেতাদের নিকট থেকে অগ্রীম নৌকার অর্ডার পেয়ে নৌকা তৈরি করে। আবার কখনো কখনো তাদের তৈরিকৃত নৌকা ফরিদপুরের এরশাদনগর,চাটমোহরের মির্জাপুর হাটে নিয়ে বিক্রি করে থাকেন। ফরিদপুরের ধানুয়াঘাটা,বড়বিলা এলাকার হাটগ্রাম,হাদল,চাটমোহরের ডিকসির বিলপাড়ের পৈলজানা,শরৎগঞ্জ,পাশর্^ডাঙ্গা,বালুদিয়ার, বোয়ালিয়া,টেংঙ্গরজানি,ভাঙ্গুড়ার দিলপাশার,কৈডাঙ্গা ও খানমরিচ ইউনিয়ন এলাকার মানুষ নৌকার ক্রেতা বলে জানা গেছে। উত্তর মেন্দা কালিবাড়ি এলাকায় দ্বিজপদ সূত্রধধর, নবকৃষ্ণ সূত্রধর, চৈতন্য সূত্রধর ও জগাতলা এলাকার কুপি সূত্রধর, পলান সূত্রধর, ব্রজেশ্বর সূত্রধর, ভবেশ সূত্রধর বিনয় সূত্রধর ও মোনাই সূত্রধর এই নৌকা তৈরির কাজ দীর্ঘদিন ধরে করে আসছে।
তারা জানান, পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত পিতার পেশাকে মনে প্রাণে লালন করে প্রায় ৩ যুগধরে এই ধরণের নৌকা তৈরি করে আসছি। বর্ষাকালে নৌকা তৈরির কাজে একটু বেশী ব্যস্ত থাকলেও সারা বছর তেমন ব্যস্ত থাকে না।
চলনবিল অধ্যুষিত এ অঞ্চলের নৌকার হাটগুলো এখন জমজমাট।