শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় সোমবার (৬ জুলাই) দুপুর থেকে অক্সিজেন সাপোর্টে রাখা হয়েছে দেশের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোরকে। রাজশাহী মহানগরীর মহিষবাতান এলাকায় বোন ডা. শিখা বিশ্বাসের বাসায় তিনি অক্সিজেন সাপোর্টে রয়েছেন। এন্ড্রু কিশোর সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে রাজশাহীতে আসার পর তার বোনের বাসাতেই উঠেছেন।
এ তথ্য নিশ্চিত করে এন্ড্রু কিশোরের দুলাভাই ডা. প্যাট্রিক বিপুল বিশ্বাস সোমবার দুপুরে জানান, বর্তমানে তিনি কারোরই সাথেই কোনো কথা বলছেন না। তার শারীরিক সুস্থতার জন্য সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করে বলেন, আমরা এন্ড্রু কিশোরকে নিয়েই আমরা ব্যস্ত আছি। তাই এ বিষয়ে পরে কথা বলবো।
এর আগে রোববার (৫ জুলাই) বিকেলে এন্ড্রু কিশোরের শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে। তারপর থেকেই মূলত তিনি কারোরই সাথেই কোনো কথা বলছেন না।
আর এন্ড্রু কিশোরের ফেইসবুক পেজ থেকে তার স্ত্রী একটি স্ট্যাটাসে স্মামীর শারীরিক অবস্থার বিবরণ জানিয়ে বলেন, ‘এখন কিশোর কোনো কথা বলে না। চুপচাপ চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে। আমি বলি কি ভাব, বলে কিছু না, পুরানো কথা মনে পড়ে আর ঈশ্বর কে বলি, আমাকে তাড়াতাড়ি নিয়ে যাও, বেশি কষ্ট দিয়ো না।’
তিনি লিখেছেন, ক্যানসার এর লাস্ট স্টেজ খুব যন্ত্রনাদায়ক ও কষ্টের হয়। এন্ড্রু কিশোরের জন্য সবাই প্রাণ খুলে দোয়া করবেন, যেন কম কষ্ট পায় এবং একটু শান্তিতে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে যেতে পারে।
তিনি আরো লিখেন, আমার মনে হল, কিশোর শুধু আমার বা আমাদের সন্তানের বা আমাদের পরিবারের নয়, বরং দেশের মানুষের একটা অংশ বা সম্পদ। তাই এই কথাগুলো দেশের ভক্ত স্রােতাদের বলা বা জানানো আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
তিনি লিখেছেন, এটাই শেষ পোস্ট, এরপর আর কিছু বলা বা লেখার মত আমার মানসিক অবস্থা থাকবে না। এখনও মাঝে মাঝে দুঃস্বপ্ন মনে হয়, কিশোর থাকবে না অথচ আমি থাকবো, মেনে নিতে পারছি না। এই অসময়ে, সবাই সাবধানে থাকবেন, নিজের প্রতি যত্ন নিবেন, সুস্থ থাকবেন, ভাল থাকবেন আর এন্ড্রু কিশোরের এর প্রতি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টি রাখবেন ও প্রাণ খুলে দোয়া করবেন।
রাজশাহীর ওস্তাদ আবদুল আজিজ স্মৃতি সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক ও এন্ড্রুকিশোরের পারিবারিক বন্ধু শফিকুল আলম বাবু জানান, তিনি ভালোও নেই আবার মন্দও নেই। তিনি উভয় অবস্থার মাঝামাঝি পর্যায়ে রয়েছেন। তবে তার অবস্থা সংকটাপন্ন বলা যায়। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন।
জানা গেছে, ব্লাড ক্যানসার নিয়ে গত বছরের অক্টোবর থেকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পি এন্ড্রু কিশোর। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার পর গত ১১ জুন রাতে বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় আসেন তিনি। পরের দিন তিনি ঢাকা থেকে রাজশাহী চলে আসেন। এরপর থেকে তিনি তার বোন ডা. শিখার বাড়িতে রয়েছেন।
খ্যাতনামা এন্ড্রুকিশোরের জন্ম রাজশাহী নগরীতে। এখানেই কেটেছে তাঁর শৈশব ও কৈশোর। এন্ড্রু কিশোর প্রাথমিকভাবে সংগীতের পাঠ শুরু করেন রাজশাহীর আবদুল আজিজ বাচ্চুর কাছে। একসময় গানের নেশায় রাজধানীতে ছুটে যান। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি রবীন্দ্র সংগীত, নজরুল সংগীত, আধুনিক গান, লোকগান ও দেশাত্মবোধক গান গেয়ে রেডিওর তালিকাভুক্ত শিল্পী হন।
এরপর ১৯৭৭ সালে আলম খানের সুরে ‘মেইল ডেট্রন’ চলচ্চিত্রে ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তাঁর কেউ’ গানের মধ্য দিয়ে এন্ড্রু কিশোরের চলচ্চিত্রে প্লেব্যাকুযাত্রা। এরপর তাঁকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এন্ড্রু কিশোরের খুব জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘আমার বুকের মধ্যে খানে’, ‘আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন শুনেছিলাম গান’, ‘ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা’, ‘সবাই তো ভালোবাসা চায়’ প্রভৃতি। এ খ্যাতনামা শিল্পি আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন বলেও জানা গেছে।