৬ মে কেঁপে উঠলো ভোলাহাট। দীর্ঘদিন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ডাঃ ইসনুস নবী উপজেলার মানুষকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছিলেন। বিশ^ যখন করোনা আতংকে কাঁপছে। কাঁপছে বাংলাদেশের প্রত্যন্তাঞ্চল। তখনো তিনি স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যেতে পিছু হটে যাননি। এক প্রকার উৎসব মুখর পরিবেশে ভোলাহাটে করোনা নমুনা সংগ্রহ করা হয় ৩ মে। রিপোর্ট আসলো ৬ মে। পজেটিভ রিপোর্ট আসলো করোনা যোদ্ধা ডাঃ ইফনুস নবীসহ ৩জনের।
তিনি এ সময় ভাড়া বাড়ী চাঁপাইনবাবগঞ্জে অবস্থান করছিলেন। রিপোর্ট শুনে তিনি যা বললেন তার মুখ থেকে শুনি তার করোনা যুদ্ধে জয়ী হওয়ার গল্প। ডাঃ ইফনুস নবী বলেন, ৬ মে করোনা পজেটিভ শুনে ভীষণ আতংকিত হয়ে পড়লাম। ভাড়া বাড়ী থেকে নিজ বাড়ীতে চলে আসি স্বপরিবারে। চিন্তায় ঘুম আসে না। হয়তো আর বাঁচব না। করোনা হলে মানুষ বাঁচে না। বিশে^র মৃত্যুর মিছিলে আমাকেও যুক্ত হতে হবে। পরিবারে ২সন্তান স্ত্রী বাবা-মা, ভাইসহ স্বজনদের ছেড়ে চলে যেতে হবে পরোপারে। এমন চিন্তায় আতংক খুঁরেখুঁরে খেতে শুরু হলো। কিন্তু আমার কোন করোনা উপসর্গ ছিলো না। পরিবার থেকে আলাদা হয়ে গেলাম। শুরু করলাম স্বাস্থ্য বিধি মেনে শারীরিক দূরুত্বে অবস্থান করতে।
পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে মেশে থাকার কারণে অন্যরা আক্রান্ত কি না এনিয়েও চিন্তার শেষ নাই। পরিবারের সদস্য স্ব স্ত্রী ডাঃ মলিনা খাতুন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার প্রেষণে চাঁপাইনবাবগঞ্জ হাসপাতালে কর্মরত, ৮ বছরের ছেলে আবু সায়েদ, বাবা গোলাম নবী(৬৫), ছোট ভাই আইয়ুব নবী(২২) ও তার ভায়ের স্ত্রী ইমু (১৮)ও নমুনা নেয়া হয় ১০ মে। রিপোর্ট আসলো ১৮ মে। রিপোর্টে ৫জন পজেটিভ। রিপোর্ট পেয়ে ভয় আরো বেড়ে গেলো। সবাই স্বাস্থ্য বিধি মেনে শারীরিক দূরুত্ব মেনে চলা শুরু করেন।
তিনি বলেন, ১সপ্তাহ খুব আতংকে ছিলেন। পরে সুস্থ্য মনে হলে আতংক কেটে যায়। কিন্তু ১ সপ্তাহ পর শুরু হলো পাতলা পায়খানা, জ¦র, গলাব্যাথা। সাথে সাথে ভোলাহাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুল হামিদের সাথে যোগযোগ করেন। তিনি দ্রুত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তির পরামর্শ দেন। ভর্তি হয়ে যায়। চিকিৎসা দিলেন, এ্যাজথ্রমাইসিন রাতে ১টা, ফেকজফেনাজিন রাতে ১টা, প্যারাসিটামল দিনে ৩টা, মেট্রো দিনে ৩টা ও খাবার স্যালাইন। এ সব খাওয়ার ২দিন পর স্বাভাবিক হয়। তিনি বলেন, করোনা পজেটিভ হওয়ার পর গরম পানি খেতেন এবং গড়গড়া করতেন। লং আদা দিয়ে লাল চা খেতেন। রশুন,লং, আদা, তেজপাতা, গোলমরিচ, এলাজ, দারুচিনি পরিমাণ মত নিয়ে আড়াই গ্লাস পানি ফুটিয়ে প্রতিদিন ৪/৫বার গরম ভাপ নিতেন। শরীরিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য মাল্টা, আপেল, খেজুর, কালোজিরা মধু খেতেন।
১৮ মে ২য় নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষায় পাঠানো হয়। ২২ মে ফলাফল নেগেটিভ আসে। ২৪ মে ৩য় নমুনা সংগ্রহ করে ২৪ মে ছুটি দিয়ে বাড়ী পাঠিয়ে দেয়া হয়। ২৭ মে রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। ২৮ মে উপজেলা স্বাস্থ ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুল হামিদ ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজিবুল আলম আনুষ্ঠানিক সুস্থ্যতা ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, তার পরিবোরের সবাই এখন আল্লাহ তালার অশেষ রহমতে সুস্থ্য আছেন। সবাই এখন করোনা নেগেটিভ। করোনা যোদ্ধা সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, সবাই স্বাস্থ্য বিধি মেনে শারীরিক দূরুত্ব মেনে চলা ও করোনা ভয় না সচেতনতায় পারে এ যুদ্ধে জয়ী হতে। তিনি বলেন, করোনা যুদ্ধে জয়ী হতে হলে মনোবল শক্ত করতে হবে। অবশেষে করোনা যুদ্ধে জয়ী হয়ে তার পরিবারের ৫জন স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন এবং তিনি ও তার স্ত্রী উপসহকারী মেডিকেল অফিসার পূর্বের মত কর্মস্থলে যোগ দিয়ে মানুষকে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করছেন।