মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কার্যক্রমে অস্বচ্ছতার অভিযোগ এনে আজ সংবাদ সম্মেলন করেছে স্বীকৃতি না পাওয়া মুক্তিযোদ্ধারা।
আজ ( সোমবার) বিকেলের উপজেলার মেঘনা ভিলেজ হাইওয়ে ক্যাফে এ- রেস্টুরেন্ট আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ও স্বীকৃতি বঞ্চিত মিলিয়ে প্রায় অর্ধশত মুক্তিযোদ্ধা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বিএলএফ ( মুজিব বাহিনীর) মুক্তিযুদ্ধকালীন সহকারী উপজেলা কমান্ডার আকম আক্তারুজ্জামান কামাল বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে গজারিয়া উপজেলা শত্রুমুক্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বিএলএফ তথা মুজিব বাহিনীর। তবে পরিতাপের বিষয় স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৮ বছর পার হলেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বঞ্চিত এ বাহিনীর অধীনে গজারিয়ায় যুদ্ধ করা অনেক মুক্তিযোদ্ধা। তিনি জানান, এ বাহিনীর যে সকল সদস্য ভারতের উত্তর প্রদেশের দেরাদুন ক্যাম্প থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে এসেছিলেন কেবল তাদেরই মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। যার ফলে এ বাহিনীর অধীনে স্থানীয়ভাবে প্রশিক্ষণ নিয়ে যে সকল মুক্তিযোদ্ধা সন্মুখ সমরে অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদের মধ্যে ১৮ জন মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বঞ্চিত হন। তিনি বলেন, যারা আমার অধীনে স্বাধীনতাযুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন তাদের অনেককে যখন আমাকে প্রশ্ন করেন আমাদের পরিচয় কি তখন আমি কিছু বলতে পারি না। সম্প্রতি মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কার্যক্রম চললেও স্বীকৃতি বঞ্চিত ১৮জন মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে মাত্র দুইজনকে নির্বাচিত করেছে যাচাই-বাছাই কমিটি যার ফলে বাকি ১৬ জন মুক্তিযোদ্ধা পাচ্ছেন না তাদের স্বীকৃতি। যাচাই বাছাই কমিটির সদস্যদের ভূমিকা এবং তাদের কর্মকান্ডের প্রতিবাদ জানান তিনি।
এদিকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বঞ্চিত আজিজুল হক, হারেস প্রধান ও আরশাদ আলী সহ বেশ কয়েকজন জানান, ১৯৭১ সালের ২৬ নভেম্বর ও ৯ ডিসেম্বর মেঘনাঘাট ও বাউশিয়াতে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন তারা। সে যুদ্ধে ৪ জন পাক হানাদার বাহিনীর সদস্য এবং একজন সাধারণ মানুষ মারা গিয়েছিলো অথচ যাচাই-বাছাই কমিটি এ যুদ্ধকে অস্বীকার করছে। তারা অভিযোগ করেন, ১৯৭১ গজারিয়ায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিল অনেক কম। আজ যারা নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা বলে দাবি করছেন তাদের অনেকের জন্মই হয়নি সেসময় অথচ যারা প্রকৃত অর্থেই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদের অনেকে স্বীকৃতি বঞ্চিত।
আরেক মুক্তিযোদ্ধা এবিএম জামাল উদ্দিন জানান, শহীদ নজরুল ছিলেন গজারিয়ার বিএলএফ তথা মুজিব বাহিনীর প্রধান। ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনী গজারিয়ায় দশটি ক্যাম্প গড়ে তোলে, তাদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য উন্নত অস্ত্র ও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন ছিল। সেজন্য ১৯৭১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর শহীদ নজরুল ইসলাম ভারতে যান, তিনি যখন দেশে ফেরেন (৮ ডিসেম্বর) তখন গজারিয়ার বিএলএফ তথা মুজিব বাহিনী দুই ভাগে বিভক্ত। এক ভাগে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন আকম আখতারুজ্জামান খান কামাল আর দেশে ফিওে আরেক ভাগের নেতৃত্ব দেন নজরুল ইসলাম নিজে। ৯ ডিসেম্বর যুদ্ধে নজরুল ইসলাম শহীদ হওয়ায় আখতারুজ্জামান কামালের অধীনে যুদ্ধ করা বিএলএফ তথা মুজিব বাহিনীর সদস্যদের স্বীকৃতি নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়।