কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলায় নিহতদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেছে পুলিশ। নিহতদেও বেদিতে পুষ্টস্তবক অর্পন করেছে কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশ।
কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের চেকপোস্টে ২০১৬ সালের ৭ জুলাই ঈদুল ফিতরের দিনে জঙ্গি হামলায় নিহত দুই পুলিশ সদস্য জহিরুল ইসলাম ও আনসারুল হক এবং স্থানীয় গৃহবধূ ঝর্ণা রানী ভৌমিকের স্মৃৃতির প্রতি জেলা পুলিশের পাশাপাশি নিহতের স্বজনেরা গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
চরশোলাকিয়া ঈদগাহ সংলগ্ন সবুজবাগ মোড়ে নির্মিত অস্থায়ী বেদীতে মঙ্গলবার (৭ জুলাই) সকালে পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম (বার) জেলা পুলিশের কর্মকর্তাদের নিয়ে ফুল দিয়ে শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানানো হয়। শ্রদ্ধা জানানোর পর পুলিশ সুপার জঙ্গি হামলায় নিহত গৃহবধূ ঝর্ণা রাণী ভৌমিকের বাসায় গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে তাদের খোঁজ নেন।
এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আনোয়ার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) অনির্বাণ চৌধুরী, কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মো. আবুবকর সিদ্দিক পিপিএমসহ জেলা পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও নিহতের স্বজনেরা উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম (বার) সাংবাদিকদের বলেন, শোলাকিয়া জঙ্গী হামলায় আত্মোৎসর্গকারী বীর পুলিশ সদস্য আনসারুল হক ও জহিরুল ইসলাম এবং একজন স্থানীয় জনসাধারণ ঝরনা রানী ভৌমিক এর প্রতি বিন¤্র শ্রদ্ধাঞ্জলী ও পুষ্পস্থবক অর্পণ করা হয়েছে। তিনি বলেন,গুলশান এবং শোলাকিয়া হামলা একই সূত্রে গাঁথা। শোলাকিয়ায় লাখো মুসুল্লিদের সমাবেশস্থলে হামলা চালানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। পুলিশ জীবন দিয়ে সে হামলা রুখে দিয়েছে।
কিশোরগঞ্জ জজকোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট শাহ আজিজুল হক বলেন, করোনার কারণে মামলাটির কার্যক্রম আপাতত স্থগিত রয়েছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে চাঞ্চল্যকর এ মামলাটির সাক্ষী-প্রমাণ হাজির করা হবে। সরকারের পক্ষ থেকে এ মামলার আসামিদের মৃত্যুদ- নিশ্চিত করতে চেষ্টা করা হবে বলে তিনি জানান।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৭ জুলাই শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল ফিতরের জামাত ও জামাতের ইমাম মুফতি ফরিদ উদ্দিন মাসউদের ওপর হামলার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে জঙ্গিরা চাপাতি, বোমা এবং পিস্তল নিয়ে হামলা চালিয়েছিল। জঙ্গিরা চাপাতি দিয়ে আনসারুল হক ও জহিরুল ইসলাম নামে দু’জন কনস্টেবলকে কুপিয়ে হত্যা করে।
খবর পেয়ে অন্য পুলিশ সদস্যরা এগিয়ে গিয়ে তাদের প্রতিরোধ করলে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কুমিল্লার সন্তান জঙ্গি আবির রহমান (২৩) গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এ ছাড়া নিজ বাসায় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঝর্ণা রাণী ভৌমিক (৪০) নামে এক গৃহবধূ নিহত হয়। এ সময় আহত হন আরও ১২ পুলিশ সদস্য।
বন্দুকযুদ্ধের একপর্যায়ে র্যাবের হাতে বুকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় অপর জঙ্গি দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট এলাকার শফিউল ইসলাম (২২) ধরা পড়ে। শফিউল পরবর্তী সময়ে এনকাউন্টারে মারা যায়। কিশোরগঞ্জ শহরের পশ্চিম তারাপাশা এলাকার জাহিদুল হক তানিম (২৬) নামে এক যুবকও ঘটনাস্থল থেকে আটক হয়।
পুলিশ চাঞ্চল্যকর এ মামলাটির অভিযোগপত্র ২০১৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর আদালতে দাখিল করে। অভিযোগপত্রে মোট ২৪ জন আসামির নামাল্লেখ করা হলেও ১৯ জন আসামি দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। ২০১৮ সালের ২৮ নভেম্বর পাঁচ আসামি জঙ্গি নেতা বড় মিজান, রাজিব গান্ধী, সোহেল মাহফুজ, আনোয়ার হোসেন ও জাহিদুল হক তানিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।