নেত্রকোনার দুর্গাপুরে চাষাবাদের জন্য কেনা ট্রাক্টর দিয়ে বানানো হয়েছে লড়ি ট্রাক। এসব অবৈধ যানের অবাধ চলাচলের কারণে দুষিত হচ্ছে পরিবেশ। অন্যদিকে এসব লড়ি ট্রাক্টরের বিকট শব্দে কেড়ে নিচ্ছে পৌরবাসীর ঘুম আর বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। লাইসেন্সবিহীন এসব অবৈধ লড়ি ট্রাক্ট্ররের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিলেও কোন সুফল পাচ্ছে না ভুক্তভোগীরা। স্থানীয় একটি সিন্ডিকেট চক্র প্রশাসনকে বৃদ্ধাগুলি দেখিয়ে দেদারছে চালিয়ে যাচ্ছে এসব যান।
জানা গেছে, কৃষি কাজের জন্য এসব ট্রাক্টর ক্রয় করা হলেও মালিকরা এগুলো ব্যবহার করছে ইট, বালু, মাটি, পরিবহনের কাজে। লড়ি ট্রাক্টরের বেপরোয়া গতিতে চলাচলের কারণে গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। অনেকাংশে কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কেটে ইটভাটায় সরবরাহ করা হচ্ছে এসব ট্রাক্টর। দাঁপিয়ে বেড়ানো এসব লড়ি ট্রাক্টরের ধুলাবালির কারণে পরিবেশেরও মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। ট্রাক্টরের বেপরোয়া আওয়াজ ও চলাচলে গ্রাম ও পৌর শহরের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। বেপরোয়া গতি ও কানফাঁটা শব্দে হচ্ছে শব্দদুষন। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি ঘটেছে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার মতো ঘটনা। লড়ি ট্রাক্টরের চালকদের জন্য কোনো লাইসেন্সের প্রয়োজন না থাকায় এসব পরিবহন ব্যবসায়ীরা স্বল্পমূল্যে সহজেই কিনে আনেন ট্রাক্টর। তারা এসব ট্রাক্টর কিনে কৃষিকাজের পরিবর্তে পরিবহন কাজে ব্যবহার করায় গ্রাম থেকে পৌর শহরেও ট্রাক্টরের সংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধিপেয়েছে। ট্রাকের চেয়ে ট্রাক্টরের ভাড়া কম থাকায় এই বাহনের চাহিদাও বেড়ে যায় কয়েকগুণ। অবৈধ লড়ি ট্রাক্টর বন্ধে আইন-শৃঙ্খলা মিটিংয়ে আলোচনা ও নিরাপদ সড়কের দাবীতে ছাত্রসমাজ আন্দোলন করলেও কিছু দিন এসব পরিবহন বন্ধ থাকে। স্থানীয় সাংসদ অবৈধ লড়ি ট্রাক্ট্রর পরিবহন বন্ধে জিরোটলারেন্স নীতি ঘোষণা করেণ। জেলা প্রশাসকের বিশেষ প্রতিনিধি সরেজমিন ঘুরে নির্দিষ্ট সময় সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এসব পরিবহন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে। তবে কিসের ইন্ধনে এসব অবৈধ লড়ি ট্রাক্টর চলাচল করছে এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে চায় সচেতন মহল। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, এসব বালু ভর্তি লড়ি ট্রাক্টরের বেপরোয়া চলাচলের কারণে গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। ধুলাবালির কারণে সড়কের দুই পাশের বাড়ি ও গাছপালা ধুলোয় তলিয়ে গেছে। ভিজা বালু পরিবহন,ত্রিপাল বিহীন বালু সরবরাহ, অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশু-কিশোর দিয়ে ড্রাইভিং করানো সহ নানা ধরণের অরাজগতা চালিয়ে যাচ্ছে এসব পরিবহন। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করছে না লড়ি ট্রাক্টরের মালিক- -চালকরা। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে সদ্য নির্মিত শ্যামগজ্ঞ- বিরিশিরি সড়কের বেহাল দশায় পরিণত করেছে। পৌর সদরের সড়কে লড়ি ট্রাক্টরের প্রচন্ড ঝাঁকুনিতে ভিজা বালু পড়ে পাকা রাস্তা এখন কাঁচা রাস্তায় পরিণত হয়েছে। বছর জুড়ে লেগে আছে বর্ষার পানি। পুরো রাস্তাটি উঁচু নিচু হওয়ায় মটর বাইক দিয়ে চলাচল হয়ে পড়ছে প্রচন্ড ঝুঁকিতে। পথচারীরা এ রাস্তা দিয়ে চলাচলে পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। এই রাস্তায় লড়ি ট্রাকের চাকার পানি চিটকে জামাকাপড় ময়লায় নষ্ট হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বিশেষ করে উপজেলার চন্ডিগর ইউনিয়নের কেরনখলা,চন্ডিগর,কচুয়াডহর,গোহালীকান্দা গ্রামীণ সড়ক দিয়ে লড়ি চলাচল করায় ঐ রাস্তাটির পুরোটাই ধসে গেছে। সদর ইউনিয়নের আত্রাইখালী, তিনানী, দেবথৈল সহ আশপাশের বেশকটি গ্রামীণ সড়কও ধ্বংসের পথে। এসব লড়ি ট্রাক্টর চলাচল বন্ধে প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করছেন স্থানীয়রা। অসংখ্য পথচারী ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রতিবেদককে বলেন, উপজেলার বালু ব্যবসায়ীরা এসব লড়ি ট্রাক্টর ব্যবহার করে রাস্তা-ঘাট ভেঙে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। যে কারণে ১০ মিনিটের রাস্তা যেতে ৪০-৫০ মিনিট সময় লাগে। পাশাপাশি ধুলো-বালির কারণে ১০ গজ দূরের কোনো কিছু চোখে পড়ে না। ভিজা বালু পরিবহনে পাকা রাস্তা সারা বছরই কাঁচা রাস্তায় পরিণত হয়েছে। এসব অবৈধ ট্রাক্টর রাস্তা-ঘাট ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করলেও এসব অবৈধ পরিবহন অচিরেই বন্ধের দাবী জানান। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ এ প্রতিবেদককে জানান, লড়ি ট্রাক্টর বন্ধে বিভিন্ন সভা-সেমিনার ও আইন শৃঙ্খলা মিটিয়ে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছে। এসব পরিবহন টোটালি বন্ধ থাকবে। বেশকদিন দিনের বেলা বন্ধ ছিল। এখন দেখছি চব্বিশ ঘন্টাই লড়ি ট্রাক্টর চলছে। কিভাবে চলছে এ বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের খতিয়ে দেখা উচিত। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক। এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জান্নাতুল ফেরদৌস আরা মুঠোফোনে বলেন,দুর্গাপুর উপজেলা সদরে এত পরিমান লরি ট্রাক্টর বেড়েছে। তা কল্পনা করা যায়না। তবে আমরা খুব দ্রুততার সাথে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি রোড পারমিট ব্যতিত অন্যকোন গাড়ী চলবেনা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা খানম প্রতিবেদককে জানান, লড়ি ট্রাক্টর বন্ধে প্রতিদিন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত লড়ি ট্রাক্টর বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে,পুরোপুরি বন্ধের বিষয়টি জটিল তবে চেষ্টা করা হচ্ছে ।