কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদ বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল পাইকানটারি পাড়া গ্রামের শহিদ হোসেন ওরফে কাছুয়ার পরিবারের দিন কাটে খেয়ে না খেয়ে। করোনার প্রভাব বন্যার কারণে সংসারের একমাত্র আয়ের উৎস ঘোড়ার গাড়ি টানা বন্ধ হয়ে গেছে চরম অভাবের মুখে পরে তারা। দীর্ঘ ৩ মাস ধরে গাড়ি বন্ধ, আয়ও বন্ধ থাকায় স্ত্রী সন্তানদের পেটের ক্ষুধা মেটাতে হিমশিম অবস্থা। দোকানদারের কাছে বাকি নিতে নিতে এখন আর দেয় না। ধারকর্জ করে তা শোধ না করার কারণে কেউ আর ধারকর্জও দিতে চায় না। সরেজমিনে ওই পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে ওইসব তথ্য।
সরকারি সবধরণের সাহায্য সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত পরিবারের গৃহবধু সাবিনা খাতুন বলেন, ‘মাইনসে কতপ্রকার সাহায্য সহযোগিতা পায়। আমরা বাচ্চাকাচ্চা নিয়া না খেয়ে আছি সেটা কেউ দেখে না। দুস্থ মাতার চাইল নেয় মেলা ধনী মানুষ। আমরা টেহা দিবার পারি না বইলা আমগর কপালে জোটে না। এই যে, করোনা বন্যা গেল আমরা এক ছটাক সাহায্যও পাই নাই। এ দুঃখের কথা কার কাছে গিয়া কবো। সাহায্যের নামের কথা কইলেই টেহা চায় মেম্বাররা।’
৬ সদস্যের সংসারের একমাত্র আয়ের উৎস ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে মানুষেল মালামাল বহন করা। দিনে ৩ থেকে ৪শ’ টাকা আয় হতো। সেটাও বন্ধ। সহিদ হোসেন কাছুয়া বলেন, ‘তিনমাসের মধ্যে পুরো ৩০ দিনই এক বেলা খেয়ে কাটাতে হয়েছে। দিনে খাবার যোগাতে পারলে, রাতের বেলা যোগাতে পারি না। কামাই না থাকায় কোদালকাটি বাজারের মঞ্জিলের দোকানে চাল ডালের বাকি পড়েছে ৯ হাজার টেহা। এহন আর তিনি বাকি দেন না। কোনো উপায় না পেয়ে আরেক দোকান ফুল মিয়ার কাছে বাকি পড়েছে আড়াই হাজার টাকার বেশি। কাঁচা তরকারির সবুরের দোকানে বাকি হয়েছে দেড় হাজার টাকার মতো। ওদিকে আশা এনজিও থেকে ৪৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ঘোড়াটা কিনছি। আয়ের পথ বন্ধ হওয়ায় তাগরে কিস্তির টেহাও দিবার পারি না। কিস্তির টেহার জন্য কমীরা বাড়ি পারাইয়া ভাঙ্গছে। আশার কমীকে কইয়া দিছি টেহার জন্য চাপ দিলে বিষ খাইয়া মরন ছাড়া কোনো উপায় থাকব না আমার।’
কোদালকাটি ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডভুক্ত এলাকা পাইকানটারি গ্রাম। এ ওয়ার্ডের সদস্য ইব্রাহিম। সাহায্য সহযোগিতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার ভাগে যে ত্রাণ পৌঁছে তার চেয়ে অনেক বেশি অভাবি দুঃস্থ মানুষ। ফলে ওই পরিবারটির ভাগ্যে সরকারি ত্রাণ পৌঁছেনি।’ তবে ওই পরিবারের গৃহবধু সাবিনা খাতুন বলেন, ‘ভোট না দেয়ার কারণে আমগর মেম্বার কোনো ত্রাণ দেয় না। ত্রাণের জন্য গেলে মেম্বার কয় তোমরা তো আমাকে ভোট দেওনি। গত বছর বন্যায় ৭কেজি ও ঈদে ৮ কেজি চাল সাহায্য দিয়েছিলেন চেয়ারম্যান নিজে। এরপর হারা বছরেও আমরা সরকারি কোনো ত্রাণ পাইনি।’
স্থানীয় স্কুল শিক্ষক আমিনুর রহমান জানান, পরিবারটি খুবই গরীব ও অসহায়। ঘোড়ার গাড়ির ওপর তাদের সংসার চলে। আমি অনেক সময়ে দেখি মাল বোঝাই গাড়ি ঠেলছে ছোট মাছুম বাচচারা। কিন্তু দীর্ঘধরে তা বন্ধ থাকায় বিপদে পড়েছে পরিবারটি। সরকার অভাবি দুঃস্থদের জন্য ভিজিডি সুবিধা ছাড়াও ১০ টাকার চাল দিচ্ছে। বন্যার সময়ে ত্রাণ সামগ্রী দিচ্ছে। দুই ঈদে সহায়তা দিয়ে থাকে সরকার। এত সাহায্য সহযোগিতা যায় কোথায়।
কোদালকাটি ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির ছক্কু বলেন, ‘এর আগে আমি নিজেই ওই পরিবারকে সহায়তা দিয়েছি। ওই ওয়ার্ড মেম্বারকেও বলা হয়েছে সরকারি সহায়তা দেয়ার জন্য। কিন্তু মেম্বার যে পরিবারটিকে বঞ্চিত করেছে এ বিষয়টা আমার জানা ছিল না। এরপর ওই পরিবারকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সাহায্য সহযোগিতা দেয়া হবে।’