রাজশাহীর আমের কদর শুধু দেশে-ই নয়, বিশ্ব বাজারেও। কিন্তু চলতি বছর বিশ্ব মহামারীর থাবার মধ্যে প্রতিকূল আবহাওয়ায় উৎপাদিত আম নিয়ে বিপাকে এখানকার ব্যবসায়ী ও চাষিরা। কারণ চলতি মৌসুমে গাছ থেকে আম নামানোর পরই শুরু হচ্ছে পচন। সব মিলিয়ে এ বছর আম তার গুণগত মান হারিয়েছে বলে মন্তব্য ফল গবেষকের। ফলে উৎপাদিত আম নিয়ে এবার বিপাকে পড়েছে সংশ্লিষ্টরা। যদিও ইতিমধ্যেই রাজশাহীর ৮০ শতাংশের বেশি আম শেষ হয়েছে। তারপরেও এমন পরিস্থিতিতে পরিবর্তিত আবহাওয়ায় নতুন জাতের আম উদ্ভাবন করাসহ পচনরোধে হট ওয়াটার টিটমেন্ট প্লান্ট ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ও ফল গবেষক।
সংশ্লিষ্টদের মতে, চলতি মৌসুমে দেরিতে গ্রীষ্ম আসায় মুকুল ধরেছিল প্রায় দুই সপ্তাহ পর। সে কারণে শুরুতেই মুকুল ও কিছু গাছের গুটি আম ঝড়-বৃষ্টির কবলে পড়ে ধাক্কা খায়। এরপর মৌসুম জুড়ে বাতাসে ৭১ থেকে ৮৬ শতাংশ আর্দ্রতা থাকায় পরিপক্ক পক্রিয়ায় ব্যহত হয়েছে। শত চেষ্টাতেও ঠেকানো যায়নি পোকার আক্রমণ আর আমের ত্বকের কালচে দাগ। এসব কারণেই চলতি বছরে আমের চিরোচেনা স্বাদ ও মিষ্টি হারিয়েছে।
রাজশাহী পুঠিয়া উপজেলার তারাপুর এলাকার আম চাষী সরকার হাসান মোহাম্মাদ তরিকুল ও চারঘাট উপজেলার মিজানুর রহমান রনি বুধবার (০৮ জুলাই) বলেন, চলতি মৌসুমে বিশ্ব মহামারীর কারণে নানা প্রতিকূলতার সম্মুখিন হওয়ায় গাছের প্রয়োজনীয় পরিচর্যা করার সুজোগ হয়ে ওঠেনি। ফলে বৃষ্টির হওয়ায় গাছের পাতাতে থাকা ময়লায় পানিগুলো আমে লেগে আবরণ পড়েছে। আর সেই আবরণের কারণে অনেক ধরণের ছত্রাক সহজেই আক্রমণ করতে সক্ষম হয়েছে। ফলে অন্য বছরের মত এবার আমেরও সুন্দর রঙ ফোটেনি। আর আবহাওয়ার তারতম্যে ক্ষতিগ্রস্ত আম নামানোর অল্পদিনেই দেখা দিচ্ছে গোড়াপচন। ফলে আম বিক্রি করে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। এবার আমের চিরোচেনা রঙ না থাকা ও গোড়া পচনের কারণে ক্রেতারাও সাধারণত ২য় বার আম ক্রয়ে আগ্রহ হারিয়েছে। তবে চলতি মৌসুমে রাজশাহীর আম নির্ভেজাল ছিল বলেও মন্তব্য করেছেন অনেক ক্রেতা-বিক্রেতা।
এদিকে রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বিগত বছরগুলোতে বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠে প্রায় ৪১ ডিগ্রি পর্যন্ত রাজশাহীর তাপমাত্রা উঠেছে। কিন্তু চলতি আম মৌসুমে এর গড় তাপমাত্রা ছিল ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এ বিষয়ে রাজশাহী ফল গবেষণা ইন্সটিটিউট প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলিম উদ্দীন বলেন, বর্তমান সমস্যা উত্তরণে ৫৫ ডিগ্রি সেন্টিমিটার তাপমাত্রায় ৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখা হলে আমের পচন রোধ করা সম্ভব হবে।
আর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ড. এম মনজুর হোসেন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়াতে পারে এমন জাতের আম সম্প্রসারণে গবেষকদের নজর দিতে হবে।