সরাইলে পূর্ব বিরোধের জের ধরে দুই দল গ্রামবাসীর সংঘর্ষে উভয় পক্ষের শতাধিক লোক আহত হয়েছে। দফায় দফায় সংঘর্ষে ৮-১০টি বসতঘর ভাংচুরের পর লুটপাট ও হয়েছে। বুধবার সকালে ও গত মঙ্গলবার রাতে উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের কাটানিশার গ্রামের ইউপি সদস্য মিজান মিয়া ও অলি মিয়ার লোকজনের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তারা দুইজনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচনি বিরোধ চলে আসছিল। সংঘর্ষে আহত আনোয়ারা বেগম (৬৫) এক বৃদ্ধার মৃত্যুর গুজব রটিয়ে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। একসময় একটি দলের পক্ষে সংঘর্ষে অংশ নেয় পার্শ্ববর্তী তেরকান্দা গ্রামের একটি গোত্রের লোকজন। পুলিশ অভিযান চালিয়ে মহিলাসহ উভয় পক্ষের ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছেন।
পুলিশ ও গ্রামবাসী সূত্রে জানা যায়, গত ইউপি নির্বাচনে ৫ নং ওয়ার্ডে অলি মিয়ার চেয়ে ৩ ভোট বেশী পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন মিজান মিয়া। নির্বাচনের পর থেকেই তাদের মধ্যে বিরাধ চলছে। অতি সম্প্রতি একটি খালে পানি সেচের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মনসুর মিয়ার স্বজনদের সাথে সংঘর্ষ বাঁধে মিজান মেম্বারের লোকদের। চলছে মামলা মোকদ্দমা। এ ঘটনায় প্রায়ই কাটানিশার গ্রামে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। আর পূর্ব বিরোধের জের ধরেই গত মঙ্গলবার রাত নয়টার দিকে উভয় পক্ষের লোকজন গ্রামে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। রাতের এ সংঘর্ষে ৭ নং ওয়ার্ড তেরকান্দা গ্রামের হাবাজের বাড়ির সাবেক ইউপি সদস্য মামুন মিয়ার লোকজন ও লঙ্গুর বাড়ির লোকজন অলি মিয়ার পক্ষে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। তারা প্রতিপক্ষের বেশ কয়েকটি বসতঘর ভেঙ্গে চুরমার করে ব্যাপক লুটপাট করে। সরাইল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে বেশ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ারসেল ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। বুধবার সকাল নয়টার দিকে ফের উভয় পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সংঘর্ষেও অত্মীয়তার সূত্র ধরে নোয়াগাঁও ইউনিয়নের তেরকান্দা গ্রামের লোকজন অলি মিয়ার পক্ষ নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। একপর্যায়ে প্রায় পুরো কাটানিশা গ্রামে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। দুই দিনের দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের শতাধিক লোক আহত হয়। গুরুতর আহত মিজান মিয়া, ইয়ার হোসেন (৪৫), মাসুক মিয়া (৪০) ও জাবেদ মিয়া (৩২), বাচ্চু মিয়া (৬০), শরীফ মিয়া (১৫), মিজানের পক্ষের আবুল কাশেমের স্ত্রী আনোয়ারা বেগমকে (৬৫) জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আলি মিয়ার পক্ষের আহত আলী মিয়া (৭০), আশিক মিয়া (৪০), দিলু মিয়া (৪৫), এরশাদ আলী (৩৫), মজিবুর রহমান (৬৫), হেলাল উদ্দিন (৪৫), কামাল মিয়া (৪০), বকুল মিয়া (৫০), জাকির হোসেন (৩৫), তাহের মিয়া (৬০), সাদ্দাম হোসেন (৩০), ইয়াকুব মিয়াকে (৫০) সরাইল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ৬ নারীসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সরাইল থানার ওসি এ এম এম নাজমুল আহমেদ বুধবার দুপুরে বলেন, কাটানিশা গ্রামের পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। গ্রামে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আসামিদের বৃহস্পতিবারে জেলহাজতে পাঠানো হবে। পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে।