কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার মোহনগঞ্জ ইউনিয়নে গত তিন বছর আগে নদী ভাঙ্গা ভূমিহীনদের জন্য সরকারী বরাদ্দে তৈরী করা হয় নাওশালা আশ্রয় কেন্দ্র। যেখানে মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছিল সর্বহারা ৭৫টি পরিবারের। তিন বছর যেতে না যেতেই সর্বনাশা ব্রহ্মপুত্র নদ কেঁড়ে নিলো আশ্রয় কেন্দ্রটি। আবারও নিঃস্ব হলো পরিবার গুলো।
সেনা বাহিনীর তত্বাবধানে ২০১৪-১৫ অর্থ বছরের বরাদ্দে কাজ শুরু করে নাওশালা আশ্রয়ণ প্রকল্পে ২৫টি ব্যারাক তৈরীর কাজ শেষ হয় ২০১৬ সালে। যেখানে প্রতিটি ব্যারাকে ৫টি করে মোট ৭৫টি পরিবারের আশ্রয় দেয়া হয়েছিল। ২০১৯ এর বন্যায় ৫টি ব্যারাক ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গণে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যায়। আশ্রয় হারায় ২৫টি পরিবার।
একই চিত্র ২০২০ এর বন্যায়। এবছর আগাম বন্যায় ব্রহ্মপুত্রের আগ্রসী থাবায় ভাঙ্গতে শুরু হয় আশ্রয় কেন্দ্রটি। এর ফলে ৪ জুন আবারও ভেঙ্গে যায় ৫টি ব্যারাক। এতে আরও ২৫টি সহ ৫০টি পরিবার নিঃস্ব হয়ে পরে। বাকী ৫টি ব্যারাক রয়েছে হুমকির মুখে। ভেঙ্গে যেতে পারে যেকোন মূহুর্তে।
একদিকে করোনা ও বন্যায় কর্মহীন, অন্যদিকে নদী ভাঙ্গণে গৃহহীন। রোধ বৃষ্টি উপেক্ষা করে না খেয়ে অর্ধাহারে চরম ভোগান্তিতে দিন পার করছে এসব কর্ম ও গৃহহীন পরিবার।
আশ্রয় কেদ্রে গিয়ে সরেজমিনে দেখা গেছে, ভাঙ্গন কবলিত আশ্রয় কেন্দ্রগুলোর দরজা জানালা, এঙ্গেল, রট, ইট খুলে নিয়ে প্রভাবশালী একটি চক্র। কারণ হিসেবে জানতে চাইলে তারা জানান, “নদীতে ভাঙ্গি যাইচ্ছে, তাই খুলি নিতাছি।”
আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রিত মুক্তিযোদ্ধা রহিজল হক অভিযোগ করে সাংবাদিককে জানান, “এখানে আশ্রয় নিতেও প্রত্যেক পরিবারকে জনপ্রতিনিধিদের ৫ থেকে সাড়ে ৫ হাজার করে টাকা ঘুষ দিয়ে আশ্রয় নিতে হয়েছে। এখন সব কিছু ভেঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে যে যার ইচ্ছেমত। আমাদের যাওয়ার কোন জায়গা নাই, নাই খাবার। সরকার যেন আমাদের একটা সু-ব্যবস্থা করে দেন।”
এ বিষয়ে আশ্রিত শাহাদত হোসেন, বাহেজ আলী, হাসনা, রহিমা, দুঃখু মিয়াসহ অনেকেই জানান, “কোকিল মন্ডল, আশরাফ, রহিম, রহিজ এর মাধ্যমে টাকা উঠিয়ে মোহনগঞ্জ ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুরুল হক, ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনকে দিয়েছি। এ ছাড়া আজম, সোহেল, সালাম, শুক্কুরসহ অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েও ঘর দেয়া হয় নাই। এখন ভাঙ্গা মালামাল গুলোও নিয়ে যাচ্ছে। এগুলো আমাদের দিলে কিছু উপকারে আসতো।”
ইতোপূর্বে ২০১৯ এর বন্যায় আশ্রয় কেন্দ্রের আংশিক গদীগর্ভে বিলিন হয়েছে। বিলিন হওয়া অংশের মালা-মাল ৫টি টিউবওয়েল, ৩৫টি ষ্টীলের দরজা, ৫০টি জানালা, ৫মণ রড, ১০ হাজার ইট ও ৩৫২টি টিন নুরুল মেম্বরসহ তার লোকজনে নিয়ে বিক্রি করে দিয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে নুরুল হক মেম্বরের নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান, “আমাকে কেউ টাকা দেয় নাই। গত বছর যে মালা-মাল ছিল সেটা বিক্রি করে শ্রমিক মজুরী দিয়ে শেষ হয়েছে। এবছর কে বা কারা ভেঙ্গে নিয়েছে তা আমি জানি না।
এ বিষয়ে আশ্রয় কেন্দ্রের মুক্তিযোদ্ধা রহিজল হক অভিযোগ তুলে পুলিশ সুপার কুড়িগ্রাম, দুর্নীতি দমন কমিশন রংপুর, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিবপুর বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করায় রাজিবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আদেশে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা দিয়ে তদন্ত করেন। তদন্তের রিপোর্টে অসংগতি থাকায় পুনঃরায় ৯ জুলাই উপজেলা চেয়ারম্যান ও নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ভূক্তভোগীরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নবীরুল ইসলাম জানান, “অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা চেয়ারম্যান আকবর হোসেন জানান, “আশ্রিত সকলেই অন্যের বাড়ীতে, রাস্তায়, খোলা আকাশের নিচে কষ্টে দিন পার করছে। তাদের সু-ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উপর মহলে কথা বলবো।”