নেত্রকোনার দুর্গাপুরে সারে ৩ বছর ধরে শিকলবন্দি জীবন থেকে মুক্তি পেতে আকুতি জানিয়েছেন ফুল মিয়া (৬১) নামের এক বৃদ্ধ। উপজেলার বিরিশিরি ইউনিয়নের পিপুলনারী গ্রামের মৃত: মোহাম্মদ আলীর পুত্র ও মেয়েরা সারে তিন বছর ধরে একটি রুমের নির্জন কক্ষে পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছে ঐ বৃদ্ধকে।
গত শনিবার বিকেল ৩টার দিকে শিকলবন্দি অবস্থায় এ বৃদ্ধকে দেখা গেছে। মিডিয়াকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চেষ্টা করে সংশ্লিষ্ট মৃত: মোহাম্মদ আলীর পুত্র মোঃ সুরুজ আলী ও মাওলানা রফিকুল ইসলাম। মোঃ ফুলমিয়া আকুতি স্বরে প্রতিবেদককে বলেন,আমার কথাটি আপনারা মনযোগ দিয়ে শুনেন আমি কোন পাগল নই আমি সম্পূর্ন সুস্থ মানুষ। আমাকে শিকলবন্দি করে পাগল বানানো হয়েছে। এ ঘটনার সাথে জরিত মোঃ সুরুজ আলী, মাওলানা রফিকুল ইসলাম সহ আরো ৩/৪ জনের নাম উল্লেখ করে পুরো ২৫ মিনিট প্রতিবেদকের সাথে কথা বলেন তিনি। শিকলবন্দি দশা থেকে মুক্ত পেতে মিডিয়াকর্মীদের মাধ্যমে উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছেন বৃদ্ধ মোঃ ফুল মিয়া। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ফুল মিয়া মাটির নিচ থেকে (ধাতব জাতীয়) মূল্যবান একটি পাথর খুঁজে পান(তিনি নিজেই সেই ধাতবদ্রব্যের বর্ণনা দেন)। সেটি ২০০৩ সালের চৈত্র মাসে শুরুর দিকে পাথরটি পাটের বস্তাদিয়ে পেচিয়ে তার স্ত্রীর কাছে দেন, পাশাপাশি স্ত্রীকে বলেন সেটি লুকিয়ে রাখতে। তিনি এটিকে বিক্রি করতে পার্টি বা ক্রেতার খোঁজে বের হন। তিনদিন পরে বাড়ি ফিরে এসে স্ত্রীর কাছে পাথরটি চাইলে,তখন তার স্ত্রী বলে পাথরটি আমি সুরুজ ও রফিকুল ভাইয়ের কাছে দিয়েছি তারা আমাকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছে। এমন কথা শুনা মাত্রই বটি দা দিয়ে কুপিয়ে স্ত্রীকে হত্যাকরে ফুল মিয়া। তৎকালীন বৈশাখ মাসের ৬ তারিখ এ হত্যার ঘটনা ঘটে। পুলিশ ফুল মিয়া’কে গ্রেপ্তার করে। পরে নিহতের ভাই বাদী সুরুজ আলী বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। এ মামলায় ১২ বছর ৫ মাস ১৭ দিন জেল হাজতে ছিলেন ফুল মিয়া। জেল থেকে মুক্তি পেয়ে দীর্ঘদিন এলাকায় ঘুরাফেরা করেন। পরে পাথর বিক্রির টাকার বিষয়টি অনেকের সাথে বলাবলি করলে ক্ষেপে যান সুরুজ ও রফিকুল ইসলাম। এরই জের ধরে ফুল মিয়ার পুত্রদের অসহায়ত্বের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পিতাকে শিকলবন্দি করে রাখার মতামত দেন সুরুজ আলী ও রফিকুল ইসলাম। হঠাৎ করে ঘরে বন্দি করে দুই পায়ে শিকল দিয়ে বেঁেধ রাখে। সারে ৩ বছরেও আলোর মুখ দেখেননি শিকল বন্দি এই বৃদ্ধ। শিকলবন্দি মোঃ ফুল মিয়া জানান, মাওলানা রফিক ও সুরুজ আলীর এক সময়ে দিন আনতে পানতা ফুরাইতো। এখন তারা স্থাবর অস্থাবর মিলিয়ে শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। ঐ ধাতবজাতীয় পাথর বিক্রি করেই আজ তারা শত কোটি টাকার মালিকে রুপান্তর হয়েছেন। ওরা আমার সন্তানদেরকে পুষ্য আর আমাকে পাগল বানিয়ে রাখছে। আমি এ শিকলবন্দি থেকে মুক্তি হতে চাই। এ পৃথিবীতে আমার সন্তানরা এত স্বার্থপর, বাবা হিসেবে আমি অভিশাপ দিয়ে গেলাম। তোদের কোন দিন শান্তি হবে না বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি মোঃ ফুল মিয়ার দুই ছেলে এক মেয়ে রয়েছে। তাঁর ছেলে আবু হানিফা প্রতিবেদককে জানান, বাবার মাথায় সমস্যা থাকার জন্যে একঘরে করে রাখা হয়েছে এ কারণে তাঁকে গত সারে ৩ বছর ধরে ঘরের খাটের সঙ্গে শিকল দিয়ে দুই পায়ে বেঁধে রাখা হয়। শিকল বাঁধা অবস্থায় ঘর থেকে বারান্দা পর্যন্ত চলাচল করতে পারে। ঐ নির্জন কক্ষের ভিতরেই পায়খানা-প্রসাব করে। খাওয়া দাওয়া,ঘুমানো ও ওষুধ খাওয়ানো চলে ভিতরেই। মাথায় সমস্যা(পাগল)এ ব্যাপারে তার সন্তানদের কাছে কোন প্রেসক্রিপশন আছে কিনা বা কোন চিকিৎসা করানো হয়েছে কিনা তা জানতে চাইলে কোন সদুত্তর দিতে পারেনি তারা। এ বিষয়ে বাকলজোড়া ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম সফিক প্রতিবেদককে বলেন ফুল মিয়া মুলত পাগল না তাঁকে শিকলবন্দি করে রাখা হয়েছে এটা অমানবিক ঘটনা। ফুল মিয়াকে আটকের ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে সুরুজ আলী বলেন এসব ঘটনা সঠিক নয়। বন্দি দশার সাথে ওপর অভিযুক্ত মাওলানা রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের এগুলি ঠিক নয় তাছাড়া আমি এ বন্দি দশার সাথে জড়িত নই।