জামালপুর জেলায় প্রাণঘাতি করোনা ও বন্যার কবলে পড়ে মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশুর চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে জেলার অনেক গরুর খামার। কোরবানীর মূল্যবান গরু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে খামার মালিক ও গরু পালনকারী প্রায় ১২ হাজার মানুষ। জেলা পশু সম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলা সদরে ১৩৪, মেলান্দহ উপজেলায় ৪১, ইসলামপুরে ২৫, দেওয়ানগঞ্জে ১১, মাদারগঞ্জে ২৩৬, সরিষাবাড়িতে ১১৭ ও বকশিগঞ্জে ২৭টি গরুর খামার রয়েছে। এসব খামারে দেশীয় পদ্ধতিতে ৪৯ হাজার ৩৩৪টি কোরবানীর গরু ঈদ উপলক্ষে দেশীয় ভাবে মোটাতাজাকরন কার্যক্রম চলছে। এ ছাড়া জেলার ১১ হাজার ৬’শ ১৯ জন কৃষক পারিবারিক ভাবে ৬ লাখ ৬৫ হাজার ৮২০টি গরু-মহিষ লালন-পালন করছেন।জামালপুরে বিভিন্ন জাতের গরু রয়েছে সাহিওয়াল,ফিজিয়ান, ইন্ডিয়ান উরবাইরা ষাড়, হারিয়ানা ও পাকিস্তানি। আসন্ন কোবানির ঈদ উপলক্ষে জেলা পশু সম্পদ বিভাগের তত্ত্বাবধায়নে বিভিন্ন খামারের প্রায় ৫০ হাজার গরু রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করে থাকে। কিন্তু এ বৎসর ভয়াবহ বন্যা ও করোনায় গরু খামারিদের সকল স্বপ্ন যেন ধুলিস্যাত করে দিয়েছে। নিভিয়ে দিয়েছে যেন,তাদের সারা বছরের আশার প্রদীপ। করোনা ও ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে বিপুল সংখ্যক গরুর মালিক নানা সমস্যায় পড়েছেন। জেলা ৭টি উপজেলার গরু খামার পানিতে তলিয়ে গেছে। খামারিরা গরু নিয়ে উঁচু রাস্তা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের উপর খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছে। অনেকেই পলিথিন টানিয়ে ঝড় বৃষ্টি থেকে গরুকে নিরাপদে রাখার চেষ্টা করছে। দুর্গত এলাকায় মাঠ ঘাট ডুবে যাওয়ায় গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। এতে করে আসন্ন কোরবানির ঈদে গরু বিক্রি করতে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন খামারিরা। দুর্গত এলাকার অনেক খামারির হাতে টাকাণ্ডপয়সা না থাকায় তারা কোরবানীর আগে গরু নিয়ে রাজধানী ঢাকায় যেতেও হিমসিম খাচ্ছেন। জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার চরভাটিয়ানী পশ্চিমপাড়া জাকারিয়া গাভির খামারের মালিক মোঃ রুহুল আমীন বলেন, আমার খামারে ২৫০টি গরু রয়েছে। খামার দেখাশুনার জন্যে ৬জন কর্মচারী রয়েছে। প্রতি বছর তদেরকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা বেতন দিতে হয়। বর্তমানে আমার খামারে ৩ লাখ টাকা থেকে ৭ লাখ টাকা দামের কোরবানির গরু রয়েছে। যদি কোরবানির ঈদে ঢাকার গাবতলি বাজারে গরু বিক্রি করতে না পারি, তাহলে আমাকে পথে বসতে হবে। কারণ এত দামের গরু এলাকায় বিক্রির গ্রাহক নাই। অপর দিকে গরু বিক্রির ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা দিবে কি’না তাই নিয়েও দূচির্šÍায় আছি। জামালপুর সদর উপজেলার মেষ্টা বাদুরীপাড়া গ্রামের গরু খামারী ফরহাদ হোসেন, আকবর আলী ও সাইদ মিয়াসহ অনেকেই জানান বাড়ি-ঘর ও খামারে পানি ওঠায় তারা গরু নিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের খাবারের পাশাপাশি গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। প্রতি বছর কোরবানি ঈদের আগে গরু বিক্রির জন্য রাজধানী ঢাকায় নিয়ে যায়। কিন্তু এবার ঈদের পূর্বে মুহুতে বন্যা ও করোনার কবলে পড়ে তারা এখন দিশেহারা। বর্তমানে তাদের পরিবহন খরচ না থাকায় গরু নিয়ে ঢাকা যেতে পারছেন না। জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মো. নুরুল ইসলাম বলেন, বন্যার পানিতে ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ ও মাদারগঞ্জ, বকশিগঞ্জ ও সরিষাবাড়ি উপজেলার সবগুলো গরুর খামার ডুবে গেছে। তাই খামারিরা গরু নিয়ে রাস্তা বা বাঁধের ওপর খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। বন্যা দুর্গত এলাকায় গো-খাদ্য কাঁচা ঘাস, খড়, ও দানাদার খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।