নেত্রকোনার দুর্গাপুরে সাড়ে ৩ বছর ধরে শিকলবন্দি জীবন থেকে মুক্তি কামনা করে ১১ জুলাই দৈনিক আমার সংবাদসহ ১০ জুলাই বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে ”দুর্গাপুরের পল্লীতে সাড়ে ৩ বছর যাবত শিকলবন্দি বৃদ্ধ ফুল মিয়া”শিরোনামে সংবাদটি প্রকাশতি হয়। এ সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জড়িয়ে পড়লে দুর্গাপুর উপজেলা প্রশাসন সহ সংশ্লিরা নড়েচড়ে বসে। আজ ১১ জুলাই শনিবার সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা খানম ঐ বাড়ীতে উপস্থিত হয়ে বৃদ্ধ শিকলবন্দি ফুল মিয়াকে উদ্ধার শিকল মুক্ত করে আসেন। এ ঘটনায় স্থানীয় ও সুশীল সমাজের ব্যক্তিদ্বয় উপজেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান। শিকল বন্দি থেকে মুক্তি পেয়ে ঐ বাড়ির উঠোনে বৃদ্ধ ফুল মিয়া উপস্থিত ইউএনও ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ জানান তিনি বলেন আমি সাড়ে ৩ বছর পর আজ মুক্ত আকাশের নিচে আপনাদের সাথে বসতে পেরে খুবই খুশি। স্থানীয়রা জানান, বিরিশিরি ইউনিয়নের পিপুলনারী গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলীর পুত্র ফুল মিয়ার মাথায় সমস্যা বলে সাড়ে ৩ বছর ধরে তার সন্তানরা একটি রুমের নির্জন কক্ষে পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখে ঐ বৃদ্ধকে। গত বুধবার ১ জুলাই বিকেল ১টার দিকে ঐ আবদ্ধ রুমে শিকল বন্দি অবস্থায় এ বৃদ্ধকে দেখা যায়। ১১ জুলাই শুক্রবার আমার সংবাদ পত্রিকা এফএনএস পোর্টালের সংবাদটি প্রশাসনের দৃষ্ঠিগোচর হলে ইউএনও ঐ বৃদ্ধের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে শিকল মুক্ত করেণ। উল্লেখ্য যে,সূত্রে জানা গেছে, ফুল মিয়া মাটির নিচ থেকে প্রায় সতের বছর পূর্বে (ধাতব জাতীয়) মূল্যবান একটি পাথর খুঁজে পান। সেটি ২০০৩ সালে চৈত্র মাসের শুরুর দিকে। পাথরটি তাঁর স্ত্রীর কাছে দেন লুকিয়ে রাখতে। ফুল মিয়া ওই পাথরটি বিক্রি করতে পার্টির খোঁজে বের হন। তিন পরে বাড়ি এসে স্ত্রীর কাছে পাথরটি চাইলে,তখন তার স্ত্রী বলে উঠে পাথরটি সুরুজ মিয়া ও মাওলানা রফিকুল ভাইয়ের কাছে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন। এ কথা শুনে উত্তেজিত হয়ে স্বামী ঘরে থাকা বটি দা দিয়ে স্ত্রীকে গলায় কুপ দেয়। ঘটনাস্থলেই স্ত্রী ফাতেমা খাতুন মারা যান। ২০০৩ সালের বৈশাখ মাসের ৬ তারিখ এ হত্যার ঘটনা ঘটে বলে জানান বৃদ্ধের পুত্র আবু হানিফা। এ হত্যার ঘটনায় ১২ বছর ৫ মাস ১৭ দিন জেল খাটে ফুল মিয়া। পরে পাথর বিক্রির বিষয়টি নিয়ে অনেকের সাথে বলাবলি করলে ক্ষেপে যান সুরুজ মিয়া ও রফিকুল ইসলাম। এরই জের ধরে ফুল মিয়ার পুত্রদের অসহায়ত্বের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পিতাকে শিকলবন্দি করে রাখার মত দেন সুরুজ আলী ও রফিকুল ইসলাম। হঠাৎ করে ঘরে বন্দি করে দুই পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখে শিকল বন্দি সাড়ে ৩ বছরেও আলোর মুখ দেখেননি এ বৃদ্ধ। অবশেষে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে শিকল মুক্ত হলো ফুল মিয়া। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা খানম বলেন,ঐ বৃদ্ধকে শিকল দিয়ে বেঁধে বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমে জেনেছি। আমি নিজে ঐ বৃদ্ধের বাড়িতে গিয়ে শিকলবন্দি থেকে অবমুক্ত করে আসছি। যারা এটি ঘটিয়েছে নিঃসন্দেহে অমানবিক কাজ করেছে। আমি ধন্যবাদ জানাই রিপোর্টারকে এরকম একটি অনুসন্ধান মূলক রিপোর্ট সংবাদ মাধ্যমে আনার জন্য।