গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কুড়িগ্রামে ধরলা, তিস্তা, ব্রহ্মপূত্রসহ সবকটি নদণ্ডনদীর পানি আবারো বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে দ্বিতীয়দফা বন্যার কবলে পরেছে এই জনপদের মানুষ। ধরলা নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে ৭ ও তিস্তা নদীর পানি ২ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্রহ্মপূত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৮ ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ১৪ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে এসব নদীও রাতে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের নীচু চরগুলো আবারো তলিয়ে যাচ্ছে। চর পার্ব্বতীপুরের ছকমল ও তহিজল জানান, দুদিন হয় ফিরেছি। বাড়িঘর ঠিকঠাক করে একটু স্বস্থি নেবো তারও উপায় নেই। আবারো পানি বাড়ন্ত। পরিবার নিয়ে অন্যত্র চলে যেতে হবে।
পৌরসভা এলাকার চর ভেলাকোপার মহিতুল, আর্জিনা ও মিয়াজন বিবি জানান, কেবলমাত্র ঘরদুয়ার ঠিকঠাক করছি। আঙিনার কাদো এ্যালওাও শুকায় নাই। ফির পানি বাড়িত পানি উঠপের নাগছে। কন তো এ্যালা কী করি।
এমন দুর্ভোগ ছড়িয়ে পরছে ধরলা, তিস্তা ও ব্রহ্মপূত্র নদনদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চল এলাকায়। টানা ১২দিনের প্রথম দফা বন্যার রেশ কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই দ্বিতীয় দফা বন্যার আগমনে আশঙ্কা আর আতঙ্ক বিরাজ করছে এসকল মানুষের মধ্যে। যে সকল কৃষক জেগে ওঠা পাট কাঁটার প্রস্ততি নিচ্ছিলেন তারাও পরেছে বিপাকে। সবজি মাঠেই ধ্বংস হয়ে গেছে। পানি নেমে গেলে যারা দ্বিতীয়বার আমন বীজতলা করার পরিকল্পনা করছিলেন তারাও হতাশ। পানি বাড়ার ফলে নদণ্ডনদী সংলগ্ন এবং চরাঞ্চলে প্লাবিত এলাকার মানুষজন আবার নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আরো দুটি ভারি বৃষ্টিপাত বয়ে যাবে এ অঞ্চলের উপর দিয়ে। ফলে দু’একদিনের মধ্যে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে আবারো বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হবে।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, কুড়িগ্রামের বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলা নিয়ে জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয়ের সচিব জিয়াউল হাসান উপস্থিত ছিলেন। ইতোমধ্যে আমরা বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। সভায় জেলা ও সকল উপজেলার কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়ে প্রস্তুত করে রেখেছি। বন্যায় যখন যা প্রয়োজনীয়তা দেখা দিবে তাই করা হবে।