কোভিড-১৯ এর প্রভাবে অর্থনৈতিক মন্দায় বাংলাদেশ তথা এশিয়া অঞ্চলে শিশুর ক্ষুধা, সহিংসতা ও দারিদ্র বৃদ্ধি শুরু হয়েছে। পরিবারের আয় কমে যাওয়ায় পর্যাপ্ত খাবার কেনার সামর্থ্যরে অভাবে শিশু ভিক্ষাবৃত্তি, শিশু শ্রম ও বাল্য বিবাহের মত ঝুঁকিতে রয়েছে এ অঞ্চল বলে দাবী করেছে আন্তর্জাতিক শিশু কেন্দ্রিক উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন।
ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ এর অন্তর্বর্তীকালিন ন্যাশনাল ডিরেক্টর চন্দন গোমেজ জানিয়েছেন সম্প্রতি তাদের পরিচালিত একটি র্যাপিড অ্যাসেসমেন্ট এর ‘আউট অফ টাইমস’ শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে কোভিড-১৯ এ লকডাউনের প্রভাবে পরিবারের আয় কমার ফলে পিতামাতা ও অভিভাবকদের চাপ তৈরি হওয়ায় বাংলাদেশে শতকরা ৮৭ ভাগ শিশু ক্রমাগত নিঃসঙ্গতা অনুভবসহ উদ্বিগ্ন ও মানসিক চাপে আছে। এ ছাড়া করোনা সংকটকালিন পরিস্থিতিতে খাপ খাওয়ার কৌশল হিসেবে চাহিদা অপেক্ষা কম খাবার গ্রহন করায় শিশু, গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী নারীরা সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে কোভিড-১৯ এর কারণে এশিয়া অঞ্চলে ৮.৫ কোটি পরিবারের সঞ্চিত খাবার অপ্রতুল বা নেই বললেই চলে এবং ১১ কোটি শিশু ক্ষুধার্ত থেকে যাচ্ছে।
ওয়ার্ল্ড ভিশন লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা ও এশিয়ায় ওই র্যাপিড অ্যাসেসমেন্ট পরিাচলনা করে পেয়েছে করোনার এ মহামারিতে সংকটের শীর্ষে এখন শিশুরা। প্রতিষ্ঠানটি বলছে প্রতিটা অ্যাসেসমেন্ট থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে উপার্জন ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে এবং খাদ্য ক্রয়ের সামর্থের অভাবে পরিবারগুলোকে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছে। যা শিশুদের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারগুলো সবচেয়ে ক্ষতির শিকার হচ্ছে। বিশেষ করে নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে থাকা দেশগুলো যারা সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তন, অস্থিরতা, বাস্তুচ্যুতি এবং মানবিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল।
ওয়ার্ল্ড ভিশন তাদের প্রতিবেদনে বলেছে কমিউনিটি পর্যায়ে এশিয়ার ১৪ হাজার পরিবার, আফ্রিকার প্রায় আড়াই হাজার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা এবং ভেনিজুয়েলার ৩৬০ জন শরণার্থীর কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে নিশ্চিত হওয়া গেছে মহামারীর প্রভাব নিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো যে আশঙ্কা করেছিল তা ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে।
ওয়ার্ল্ড ভিশন এর ওই আউট অব টাইমস প্রতিবেদনে বিভিন্ন দেশের সরকার, জাতিসংঘের সংস্থাসমূহ, দাতাগোষ্ঠী, এনজিও ও বেসরকারি খাতের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেছে শিশু-সংবেদনশীল সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি বৃদ্ধি, খাদ্য ও বাজার ব্যবস্থাপনা সচল রাখা, চাকরী ও জীবিকার সুরক্ষা এবং অন্তর্ভূক্তিমূলক সহনশীল ও সবুজ অর্থনীতিপুনরুদ্ধারে যেন বিনিয়োগ আরও বাড়ানো হয়।