করোনা প্রাদুর্ভাবের জেরে সরকারি কল-কারখানাগুলোর লোকসানের বোঝা দিন দিন আরো ভারি হচ্ছে। ইতিমধ্যে লোকসানে থাকা সরকারি কারখানাগুলোর লোকসান আরো বেড়েছে। এমনকি সরকারি লাভজনক কারখানাও লোকসানে পড়েছে। অবশ্য করোনাকালীন সঙ্কটের মধ্যেই সরকারি কল-কারখানাগুলোতে উৎপাদনের স্বাভাবিক ধারা বজায় রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু করোনা মহামারিতে বিশে^র বিভিন্ন দেশে ও শহরে লকডাউন চলছে। আমদানি-রপ্তানিতে স্বাভাবিক ধারা নেই। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার থেকে চাহিদা অনুযায়ী কাঁচামাল সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না। আর করোনা সংক্রমণের কারণে কারখানায় শ্রমিক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি কম। দোকানপাট বন্ধ থাকায় উৎপাদিত পণ্য বিক্রির সুযোগ কমে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে করোনা থেকে মুক্তি পাওয়া না গেলে কোনো পদক্ষেপেই সুফল আসবে না। আর করোনা থেকে কবে মুক্তি পাওয়া যাবে তাও অজানা। এমন পরিস্থিতিতে সরকারি কল-কারখানার বোঝার পরিমাণ দিন দিন কেবল ভারিই হচ্ছে। শিল্প মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকারি ৩৮টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতায় পরিচালিত হয়। তার মধ্যে ৮টি সার কারখানাসহ ছাতক সিমেন্ট কম্পানি লিমিটেড, উসমানিয়া গ্লাসশিট ফ্যাক্টরি, বাংলাদেশ ইনসুলেটর অ্যান্ড স্যানিটারি ওয়্যার ফ্যাক্টরি লিমিটেড (বিআইএসএফ), খুলনা হার্ডবোর্ড মিলস লিমিটেড, কর্ণফুলী পেপার মিলস লিমিটেড রয়েছে। তাছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা এটলাস বাংলাদেশ থেকে মোটরসাইকেল, প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে জিপ গাড়ি সংযোজন করা হয়। আর রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন টিউবস, ইস্টার্ন কেবলস, গাজী ওয়্যার লিমিটেড, জেনারেল ইলেকট্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং কম্পানি ও ন্যাশনাল টিউবস থেকে ইলেকট্রিক পণ্য উৎপাদন করা হয়। তাড়াও ঢাকা স্টিল ওয়ার্কস লিমিটেডসহ চিনি উৎপাদনকারী আরো ১৫ রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা রয়েছে।
সূত্র জানায়, শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ১৩টি রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা নিয়ন্ত্রণকারী সবচেয়ে বড় করপোরেশন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)। কিন্তু স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় বিসিআইসির কোনো কোনো কারখানা সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। পরবর্তী সময় পর্যায়ক্রমে ধাপে ধাপে খোলা হয়েছে। বর্তমানে কারখানাগুলোতে সরকারি নির্দেশ মেনে কর্মকর্তা-কর্মচারীর উপস্থিতি কমানো হয়েছে। রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অবস্থিত রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা বাংলাদেশ ইনসুলেটর অ্যান্ড স্যানিটারি ওয়্যার ফ্যাক্টরি লিমিটেড (বিআইএসএফ) করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় ৩১ মে থেকে বন্ধ রাখা হয়। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি সীমিত আকারে চালু করা হয়েছে। তাছাড়া করোনার শুরুতে অনেক এলাকায় লকডাউন থাকায় সার সরবরাহে কিছুটা সমস্যা হলেও এখন তা কমে এসেছে। বর্তমানে জরুরি পণ্য হিসেবে বিভিন্ন এলাকায় সময়মতো সার পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
সূত্র আরো জানায়, লোকসানি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোতেও করোনার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে থাকে। ফলে সরকার লোকসানি পাটকলগুলো করোনার মধ্যেই বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। আর রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলোর লোকসান বেড়েই চলেছে। গত অর্থবছরে ওসব প্রতিষ্ঠানের লোকসান ৮০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। আর কভিড-১৯-এর কারণে বিআইএসএফ বন্ধ ছিল। লকডাউন থাকায় দেশের অনেক জায়গায় পরিবহন ঠিকভাবে চলেনি। আবার অনেকে দোকানপাটও ঠিকমতো খুলছে না। অনেক প্রতিষ্ঠান পণ্য বিক্রি কমিয়ে দিয়েছে। ওসব কারণে কারখানায় চাহিদামতো কাঁচামাল সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না। আবার উৎপাদিত পণ্য আগের মতো বিক্রি করাও যাচ্ছে না। বিআইএসএফে আগেই লোকসানে ছিল। করোনায় উৎপাদনের স্বাভাবিক ধারা না থাকায় লোকসানের পরিমাণ আরো বেড়েছে। এখন বিসিআইসি থেকে ঋণ নিয়ে বিআইএসএফ চালিয়ে রাখা হয়েছে।
এদিকে বিদ্যমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন টিউবস লিমিটেডের পরিচালক প্রকৌশলী মো. আবুল খায়ের সরদার জানান, করোনার কারণে উৎপাদনের স্বাভাবিক ধারায় কিছুটা সমস্যা হয়েছে। মহামারির কারণে কিছুদিন কারখানা বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। এখন আবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে চালু করা হয়েছে। এতে ৎ্পাদন কমেছে। আয়ও কমেছে। তবে আশা কররা যায় করোনা থেকে মুক্ত হলে আবারো উৎপাদনের স্বাভাবিক ধারা ফিরে আসবে। পণ্য বিক্রিও বাড়বে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন দাবি করেছেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই শিল্প মন্ত্রণালয় কাজ করে চলেছে। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখেই উৎপাদন চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।