ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রামের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সোমবার ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, দুধকুমারসহ প্রধান নদ-নদীর পানি ঘন্টায় ৫ সেন্টিমিটারের বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে। নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় দেড় শতাধিক চর ও নি¤œাঞ্চলের গ্রামগুলি প্লাবিত হয়েছে। ফলে ৯ উপজেলায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষজন। ঘর বাড়িতে পানি ওঠায় অনেকেই রাস্তা ও বাঁধের উপর আশ্রয় নিয়েছেন। এদিকে পানি বৃদ্ধি পেয়ে দ্বিতীয়বার বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ায় বিপাকে পরেছে চরাঞ্চল ও নদনদী তীরবর্তি এলাকার মানুষ। প্রথম দফা বন্যার পানি নেমে যেতে না যেতেই আবারো বন্যার কবলে পড়ে চরম দুর্ভোগে পরেছে তারা।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের বিস্তির্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়েছে ২০গ্রামের মানুষ। পাঙ্গারচরের অধিবাসী দারোগ আলীর পরিবার ১৮দিন ধরে পানিবন্দী হয়ে আছে। নীচু এলাকায় বাড়ি হওয়ায় প্রথমদফার বন্যার পানি উঠোনে থাকা অবস্থায় দ্বিতীয় দফা বন্যার কবলে পরে সড়কে আশ্রয় নিয়েছে। দারোগ আলী (৪৫) ও তার স্ত্রী হালিমা (৩৫) জানান, আমার পরিবারে ছোট ছোট ৭টি সন্তান। বন্যার কারণে ১৭দিন ধরে ঘরছাড়া। প্রথম দফায় ১০ কেজি চাল পেয়েছি। তা শেষ হয়ে গেছে। এখন নাবালক শিশুদের নিয়ে খুব কষ্টে আছি। আপনারা একটু দেখবেন।
মহাসড়কে আশ্রয় নেয়া শহিদুল (৪৫) ও তার স্ত্রী মেরিনা (৩৪) জানান, প্রথম দফা বন্যায় বাড়ি ছেড়ে ১০দিন এখানে ছিলাম। পরে পানি নেমে গেলে বিধ্বস্ত বাড়িঘর ঠিক করে দুটোরাত ঘুমুতে না ঘুমুতে আবার বন্যা। কামকাজ নাই। কেউ ত্রানও দিল না। এখন কার কাছে হাত পাতি।
এখানকার বয়োজ্যেষ্ঠ আনোয়ারা জানান, ছবি তুলি কি হইবে। হামাকগুলাক কাঁইয়ো কিছু দেয় না। এটে কাঁইয়ো খোঁজখবর নিবারো আইসে না।
ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইদুল ইসলাম জানান, আমার ইউনিয়নের প্রায় ২০টি গ্রামের কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে বীজতলার। এই পানি বেশিদিন অবস্থান করলে বীজতলাসহ বন্যাকবলিতরা খাদ্য সমস্যায় ভুগবে। এই মূহুর্তে বন্যা কবলিতদের উদ্ধারসহ ত্রাণ সহায়তা দরকার।
এদিকে ধরলার পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের কালুয়ার চর ও সদর উপজেলার সারডোব বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। একইভাবে তিস্তার ভাঙনে দলদলিয়া ইউনিয়নের সরদারপাড়ায় বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ভাঙনের কবলে পড়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আরিফুল ইসলাম জানিয়েছেন, জেলায় ১৯টি পয়েন্টে ভাঙন তীব্ররুপ নিয়েছে। এরমধ্যে ১১টি পয়েন্টে জরুরি ভিত্তিতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চলছে।
জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা দিলীপ কুমার সাহা জানান, দ্বিতীয় দফা বন্যায় ৪শ’ মে.টন চাল, ৮লাখ জিআর ক্যাশ, ২ লাখ টাকার শিশু খাদ্য, ২ লাখ টাকার গো-খাদ্য এবং ৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ পাওয়া গেছে। যা দ্রুত বন্যা কবলিত এলাকায় বিতরণ করা হবে।