আমার বিয়ে হয়েছে ৩০ বছর। দুই ছেলে ও এক কন্যা সন্তানের জননী আমি। বিয়ের কিছু দিন পরই বুঝতে পারি আমার স্বামী আবু কালাম মাদকাসক্ত। অনেক চেষ্টা করেছি। ফেরাতে পারিনি। স্ত্রী সন্তানদের প্রতি কোন দায়িত্বই পালন করেননি স্বামী। উল্টো অত্যাচার সয়েছি। একে একে ৩টি সন্তান হল। সংসারের অবস্থা খুবই খারাপ। সব সময় ভেবেছি বিয়ে মানুষের একবারই হয়। এমনটি ভেবেই কষ্ট স্বীকার করে সংসার করেছি। বীমাতে চাকরি করেছি। ছোট খাট অনেক ধরনের কর্ম করেছি। নিজের এবং সংসারের কষ্ট কাউকে বুঝতে দেয়নি। সন্তানদের পড়া লেখার জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করেছি। শুধু তিনটা সন্তানের দিকে চেয়ে জীবন কাটিয়েছি। বড় ছেলেটাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়িয়েছি। কাজ শিখিয়েছি। সে এখন মটর মেকানিকের কাজ করছে। খুবই ভাল আছে। আর মেয়েটা মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে এক বিষয়ে ফেল করে। কিছুদিন পর বিয়ে হয়ে যায়। আর ছোট ছেলে হৃদয় (২৬) সে ও মটর মেকানিকের কাজ করছিল। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে হৃদয় বিপথে চলছে। মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। অনেক চেষ্টা করেও তাকে ভাল করতে পারছি না। ৩ বছর আগে নিজের পছন্দ ও ইচ্ছায় বিয়ে করে। মা হিসেবে দূরে ঠেলতে পারিনি। ছেলে সন্তানের বাবা হয় হৃদয়। দূর্ভাগ্য ছেলেটি প্রতিবন্ধি। হৃদয় তার স্ত্রীকেও মারধর করত। মাদকাসক্ত স্বামীর অত্যাচার সইতে না পেরে স্ত্রী চলে যায়। প্রতিবন্ধি নাতিটাকে আমিই লালন পালন করতে থাকি। পিতার আদর সোহাগ আমার ওই অবুঝ নাতির ভাগ্যে জুটেনি। ছয় মাস পর আমাকে কাঁদিয়ে ওই নাতিটাও চলে যায় পরপারে। যত দিন যায় ততই বেপরোয়া হতে থাকে হৃদয়। সম্প্রতি মাদকের টাকার জন্য ঘরের আসবাপপত্র ভাংচুর করে। আমাকে মারধর করে। তার অত্যাচার নির্যাতন আর সইতে পারছি না। গত ৯-১০ দিন আগে হৃদয়ের বাবাকে ৬ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট সহ ধরে ফেলে পুলিশ। বর্তমানে সে কারাগারে আছে। আমার সবার ছোট ছেলে হৃদয় তার পিতার পথেই হাঁটছে। ধৈর্য্য হারা হয়ে গেছি। আর পারছি না। কথা গুলো সোমবার সকালে সরাইল উপজেলা চত্বরে বলছিলেন শাহবাজপুর গ্রামের মাদকাসক্ত ছেলে হৃদয়ের মা। কথা গুলো বলেই তিনি হাঁউমাউ করে কাঁদতে শুরূ করেন। নিজের ছেলে নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে ব্যবস্থা নিতে লিখিত আবেদন করেন ইউএনও’র কাছে। মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল সকালে বাড়ি থেকে হৃদয়কে গ্রেপ্তার করে নির্বাহী কর্মকর্তার দফতরে হাজির করে পুলিশ। পরে ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও নির্বাহী কর্মকর্তা এ এস এম মোসা হৃদয়কে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদ- প্রদান করেন। মাদকাসক্ত পিতার ৯ দিন পর কারাগারে চলে গেল পুত্রও। মায়ের চোখের সামনে দিয়ে যখন ছেলেকে জেলে নিয়ে যাচ্ছিল পুলিশ। তখন অঝরে কাঁদছিলেন মা। হৃদয়ের মা বলেন, তাদের পিতাকে নিয়ে আমি কখনো ভাবিনি। তারা তিন ভাই বোনই ছিল আমার পৃথিবী। তাদেরকে নিয়ে আমি স্বপ্ন দেখেছি। কিন্তু আমার ছেলে হৃদয় কিভাবে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ল বুঝতে পারছি না। জেলে পাঠিয়েছি ঠিকই কিন্তু এখন তো তার জন্য আমার কলিজাটা ছিঁড়ে যাচ্ছে। আল্লাহ যেন তাকে ভাল করে জেল থেকে বাহির করে। ইউএনও এ এস এম মোসা বলেন, করোনার প্রাদূর্ভাবের কারণে আগের মত অবাধে চলাফেরা করতে পারছে না লোকজন। ফলে সরাইলে অন্যান্য সময়ের তুলনায় মাদকাসক্তের সংখ্যা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে হচ্ছে।