নাটোরের লালপুর উপজেলার ওয়ালিয়া গ্রামসহ উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তারা বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা কারণে চরম ভোগান্তির শিকার হয়ে আসছেন। জলাবদ্ধতা থেকে পরিত্রান পেতে ওয়ালিয়া এলাকাবাসী লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট লিখিত আবেদন জানিয়েছেন।
স্থানীয় ও এলাকাবাসীর আবেদন সূত্রে জানাযায়, লালপুর উপজেলার ওয়ালিয়া গ্রামের পানিবন্দী এলাকাবাসী ১২ জুলাই (২০২০) জলাবদ্ধতা থেকে পরিত্রান পেতে লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট লিখিত আবেদন জানিয়েছেন। এলাকাবাসী জানায়, ৯৮’র বন্যাতে যখন গোটা লালপুর পানির নিচে নিমজ্জিত তখনও ওয়ালিয়া গ্রাম বন্যা কবলিত হয়নি। অথচ বর্ষার পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় এই এলাকার ৪টি বৃহৎ মহল্লা (পূর্ব সাজি পাড়া, পূর্ব কারিগর পাড়া, আমিন পাড়া এবং পালপাড়া) সামান্য বৃষ্টিতেই পানির নিচে তলিয়ে যায়। প্রায় ২মাস যাবত এই এলাকার প্রায় ৫’শতাধিক মানুষ পানি বন্দি হয়ে জীবন যাবন করছে। এরইমধ্যে গত ৪/৫ দিনের ভারী বর্ষনে এখন মানুষের ঘরের মধ্যে পানি উঠে গেছে। এলাকাটির চারি দিকে পাকা রাস্তা থাকলেও বর্ষার পানি নিষ্কাশনের কোন সু-ব্যবস্থা নেই। ভারী বর্ষনে মসজিদ সহ পাকা রাস্তায় পানি উঠে গেছে।
এই এলাকার বর্ষার পানি আগে নিষ্কাশন হতো ওয়ালিয়া আমিন পাড়া গোরস্থান হয়ে ওয়ালিয়া আইডিয়াল কিন্ডার গার্টেন স্কুল এর পাশর্^ দিয়ে পল্লব চৌধুরীর জমির উপর দিয়ে ওয়ালিয়া মাঠ হয়ে খলিষা ডাঙ্গা নদীতে। কিন্তু গত ৩/৪ বছরে নতুন বাড়ীঘর নির্মান হওয়ায় এবং ওয়ালিয়া মাঠ, নাওদাঁড়া মাঠ ও ময়না মাঠের মধ্যে কার্লভাট গুলোতে পানির স্বাভাবিক গতিতে হয়েছে প্রতিবন্ধকতা, যার ফলে বর্ষার পানি নিষ্কাশন না হয়ে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। বিগত ৩/৪ বছর ধরে বর্ষার সময় এই এলাকার সাধারণ মানুষ পানি বন্দি এক অসহনীয় ভোগান্তির স্বীকার হয়। এছাড়াও উপজেলার লালপুর বাজার, উত্তর লালপুর, বিলামড়ীয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ জলাবদ্ধতার কারণে চরম ভোগান্তির শিকার হয়ে আসছে।
দীর্ঘ সময় জলাবদ্ধতার কারণে যেমন পানিবাহিত ও চর্মরোগের সৃষ্টি হচ্ছে তেমনি-বয়স্ক মানুষ, নারী-শিশুসহ গৃহপালিত পশু, হাঁস-মুরগী নিয়েও এলাকার মানুষ অসহনীয় ভোগান্তির মধ্যে বসবাস করছে, সেই সাথে শিশুদের নিরাপত্তা নিয়েও চিন্তিত অভিভাবকরা, একটু অসাবধান হলেই ঘটতে পারে অপ্রতাশিত দূর্ঘটনা। ইতোমধ্যে খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে, বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে পাশের এলাকা থেকে। চারিদিকে জলাবদ্ধতার কারণে বিভিন্ন এলাকা থেকে মলমুত্র ভেসে এসে ইতোমধ্যে পরিবেশ দূষিত হয়ে উঠেছে। এলাকাবাসী’র মধ্যে সাদ্দাম, আনিছ, সোহাগ, রফিকসহ অনেকই জানান-বাড়ীর স্বাভাবিক রান্না-বান্নার কাজ করতে হচ্ছে দূরের কোন পরিচিত জনের বাড়ীতে। রান্না করবে কোথায়? চুলাতো পানির নিচে! একই সাথে এই এলাকায় মুমুর্ষ রোগীর জন্য যেমন এ্যাম্বুলেন্সসহ গাড়ী সেবা পেতে ব্যহত হচ্ছে ঠিক তেমনি কেউ মারা গেলে, চারিদিকে জলাবদ্ধতার কারণে দাফন কার্য সম্পন্ন করতে চরম অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয়।
তারা বলেন- বর্তমানে গ্যাস ব্যবহারের সুফল হিসাবে অনেক সময় বিছানার উপরে বসে কোন রকমে খাবার তৈরী করে দিন অতিবাহিত করতে হচ্ছে। তারা আরও জানান- দ্রুত সময়ের মধ্যে এই পানি নিষ্কাশন না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যাবে। স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বর এবং গ্রাম প্রধানদের সহযোগীতায় প্রতি বছর এ সমস্যার সাময়িক সমাধান হলেও ভুক্তভোগীরা চায় এর স্থায়ী সমাধান।
এ ব্যাপারে লালপুর উপজেলা ৭নং ওয়ালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান জানান, এই এলাকার বর্ষার পানি প্রাকৃতিক ভাবে আমিন পাড়া গোরস্থান হয়ে আইডিয়াল কিন্ডার গার্টেন এর পাস দিয়ে ওয়ালিয়া মাঠ হয়ে খলিষাডাঙ্গা নদীতে চলে যেত, কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের নতুন ঘর-বাড়ীও বৃদ্ধি হচ্ছে, যার কারণে প্রাকৃতিক বহমান ধারায় প্রতিবন্ধকতার কারনেই এই জলাবদ্ধতা, সাধারন মানুষ কষ্টের মধ্যে বসবাস করছে, বিষয়টি জরুরী ভিত্তিতে নিরসন না হলে ভোগান্তি আরও বেড়ে যাবে। তাই সরকারী প্রকল্পের মাধ্যমে এটার স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন।
জলাবদ্ধতা থেকে পরিত্রান পেতে এলাকার ভূক্তভোগী মানুষ স্থায়ী সমাধানের লক্ষে লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর গণস্বাক্ষরসহ একটি লিখিত আবেদন করেছেন।
আবেদনের বিষয়ে লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মুল বানীন দ্যূতি জানান, আবেদন পেয়েছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে এলাকাটি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।