কয়েক দিনের অবিরাম বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে জামালপুর জেলায় দ্বিতীয় দফা বন্যা ব্যাপক হারে পানি বৃদ্ধির ফলে জামালপুর জেলার ৭টি উপজেলায় বন্যার পরিস্থিতি চরম অবনতি হয়েছে। গত বুধবার (১৫জুলাই) বিকাল ৩টা নাগাদ ২৪ ঘন্টায় ১৫সেন্টি মিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে যমুনার বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বিপদ সীমার ১২৭ সেন্টি মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পউবো)’র জামালপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু সাঈদ এবং পানি মাপক গেজ পাঠক আবদুল মান্নান। এদিকে দেওয়ানগঞ্জ বাজার রেলষ্ট্রেশনে বন্যার পানি সয়লাভ করায় দেওয়নগঞ্জ ট্রেন চলাচল বন্ধ ঘোষনা করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। তবে তিস্তা-ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস ট্রেন দু’টি ইসলামপুর পর্যন্ত চলাচল অব্যাহত রাখা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জামালপুর রেল স্টেশনের ভার প্রাপ্ত স্টেশন মাস্টার শেখ উজ্জ্বল মাহমুদ এবং দেওয়ানগঞ্জ বাজার স্টেশন মাস্টার আবদুল বাতেন। তারা জানান, ইসলামপুর পর্যন্ত ট্রেন আসবে এবং ইসলামপুর স্টেশন থেকেই ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবে। তারা আরো বলেন, এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে জামালপুর থেকেই ট্রেন ঢাকা ফেরত যাবে। অপরদিকে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চিকাজানী ইউনিয়নের মন্ডল বাজার অদুরে পাকা রাস্তাটি নদীতে বিলিন হচ্ছে। জেলার দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, মাদারগঞ্জ, মেলান্দহ, সরিষাবাড়ি,বকসিগঞ্জ ও জামালপুর সদর ৭টি উপজেলার ৬৮টি ইউনিয়নের মধ্যে প্রায় ৪০টি ইউনিয়নের বিস্তৃর্ণ এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় সাড়ে ৫লাখ মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে।
এদিকে ইসলামপুর উপজেলার সাপধুরী,বেলগাছা,চিনাডুলী,কুলকান্দি ইউনিয়নের যমুনার দ্বীপ চরের লোকজন নৌকার অভাবে তাদের ঘরের ধান চাল এমনকি গৃহপালিত পশু নিরাপদ স্থানে নিতে পারছে না বলে বেলগাছা ইউপির চেয়ারম্যান আবদুল মালেক জানিয়েছেন। বন্যা কবলিত এলাকার গুলোর মধ্যে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা চুকাইবাড়ী, চিকাজানী, বাহাদুনাবাদ,চর আমখাওয়া ইউনিয়ন,ইসলামপুর উপজেলার পার্থর্শী কুলকান্দি, বেলগাছা, চিনাডুলী, নোয়ারপাড়া, ইসলামপুর সদর, পলবান্দা, ইসলামপুর পৌরসভা, গোয়ালের চর,গাইবান্দা, চরগোয়ালীনী ও চরপুটিমারী ইউনিয়ন। মেলান্দহ উপজেলার, মাহমুদপুর, শ্যামপুর, মেলান্দহ পৌরসভা, নাংলা, আদ্রা,ফুলকোচা, ঝাউগড়া, ও ঘোষেরপাড়া ইউনিয়ন। মাদারগঞ্জ উপজেলার গুনারীতলা জোড়খালী, বালিজুড়ি ও চর পাকেরদহ ইউনিয়ন। সরিষাবাড়ী উপজেলার পিংনা, আওনা, পোগলদিঘা, সাত পোয়া ও কামরাবাদ ইউনিয়ন। বকশিগঞ্জ উপজেলার সাদুরপাড়া, মেরুরচর, বগারচর, ইউনিয়ন, জামালপুর সদর উপজেলার লক্ষীরচর,তুলশিরচর ইউনিয়ন বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষসহ গৃহপালিত পশু গরু,মহিষ, ছাগল হাঁস, মরগি পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় বন্যা কবলিত মানুষ গুলো উঁচু বাঁধে,বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে। বানভাসিদের শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধা পানির, গো খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। ইসলামপুরে বন্যার পানিতে ডুবে কটা মন্ডল (৩৫) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। গত বুধবার (১৫ জুলাই) সকালে উপজেলার সাপধরী ইউনিয়নের কাশারী ডোবা এলাকায় এঘটনা ঘটে। সে ঐ এলাকায় মৃত নয়ান মন্ডলের ছেলে।এলাকাবাসী জানায়, মৃত কটা মন্ডল ছোট বেলা থেকেই মৃগী রোগী ছিলেন। ওইদিন সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে স্থানীয় বাজার যাচ্ছিলেন। পথে পানিতে ডুবে নিখোঁজ হয়। পরে তার মরদেহ পানিতে ভেসে উঠে। সাপধরী ইউপি’র চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সকালে বানের পানিতে ডুবে কটা মন্ডলের মৃত্যু হয়েছে। চলতি বন্যায় জামালপুর জেলায় বন্যার পানিতে ডুবে এ পর্যন্ত প্রায় ১৩জন মারা গেছে। অপর দিকে ্ওইদিন উপজেলা চিনাডুলি ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ৩৫০ প্যাকেট উপহার বিতরণ করেন স্থানীয় এমপি আলহাজ ফরিদুল হক খান দুলাল। এ সময় তার সাথে ছিলেন,উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডঃ জামাল আব্দুন নাসের বাবুল,উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান টিটু প্রমুখ।