শ্যামনগর উপজেলার সর্বত্র বিশেষ করে সেটেলমেন্ট অফিস থেকে শুরু করে শ্যামনগর সদর তহশীল অফিস হয়ে উপজেলা সহকারী (ভূমি) অফিসে পর্যন্ত তার দৌর্দন্ড প্রতাপ। এমনকি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের তহশীল অফিসেও মাঝেমধ্যে তার সরব পদচারনা ঘটে সুনির্দিষ্ট কোন পক্ষের ন্যায় অন্যায় যেকোন ধরনের তদবীরের জন্য।
লেখাপড়ায় খুব বেশীদুর এগুতে না পারলেও মোঃ রফিকুল ইসলামকে গোটা শ্যামনগরের মানুষ জমিজমা সংক্রান্ত কাগজের পোকা হিসেবে গন্য করে। পিতা জহুর আলী কারিগরের হাত ধরে নব্বই দশকের শুরুতে নকিপুর বাজারে লেপ তোষক তৈরী করতে পাশর্^বর্তী কালিগঞ্জের নেঙে ফরিদপুর এলাকা থেকে শ্যামনগরে তার আগমন ঘটে।
অন্য ভাইয়েরা পুর্ব পুরুষের পেশায় নিয়োজিত থেকে কোনমতে রুটি রুজির ব্যবস্থা করলেও মোঃ রফিকুল ইসলাম এক্ষেত্রে একেবারে ব্যতিক্রম। কাগজ-পত্রাদী একটু ভালভাবে বুঝতে পারার সুযোগে সে পুর্ব পুরুষের পেশা ত্যাগ করে নব্বই দশকের শুরু থেকে জমিজমা নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে। হয় কাজ নয়, আর নয় কাজ হয়- করার ক্ষেত্রে তার বিশেষ সুখ্যাতি মানুষের মুখে মুখে।
কিন্তু নিজ মেধা আর বুদ্ধি খাটিয়ে মাত্র দুই দশকের মধ্যে শ্যামনগর উপজেলা সদরের প্রানকেন্দ্র বাদঘাটা মৌজায় স্বনামে বেনামে তিনি যে পরিমান জমি নিজ নামে রেকর্ড করিয়েছেন তা রীতিমত বিস্ময়কর। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে স্বল্পভাষী স্বভাবের রফিকুল অত্যন্ত ঠান্ডা মাথার মানুষ। ছলে বলে কলে কৌশলে কাজ উদ্ধারে তার জুড়ি মেলা ভার। একাধিকবার কোন ধরনের কাগজপত্র ছাড়াই নিজ মক্কেলের পক্ষে জমির রেকর্ড দেয়ার বিনিময়ে প্রকাশ্য এজলাসে উৎকোচ “অফার” করার মত ধৃষ্টতা দেখাতে কার্পন্য করেনি রফিকুল।
অভিযোগ রয়েছে উপজেলা সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসের পাশাপাশি সদর তহশলী অফিসের মুষ্টিমেয় দুর্নীতিবাজ ও অর্থলোভী কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সহায়তা নিয়ে মোঃ রফিকুল ইসলাম শ্যামনগরের বাদঘাটা গ্রামে অনেকের জমি নিজ নামে রেকর্ড পর্যন্ত করিয়েছেন। এমনকি চল্লিশ বছর পুরানো রাস্তা, যা মাঠ পর্শ্চা ও রেকর্ডে পর্যন্ত শ্রেনী ‘পথ’ হিসেবে উল্লেখ করা রয়েছে সেই জায়গা ব্যক্তি মালিকানায় রেকর্ড করিয়ে স্থানীয়দের থেকে আর্থিক সুবিধা আদায়সহ নানামুখী অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে রফিকুল।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে সরকার জলাকার বা জলাশয় শ্রেনী বন্দোবস্ত বন্ধ করে দেয়ার পরও রফিকুল কতিপয় দুর্নীতিবাঁজ তহশীলদার ও তার দোসরদের পাশাপাশি সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসের লোকজনসহ উপজেলা ভূমি অফিসের দুষ্টু চক্রের সহায়তায় (বাদঘাটা-কাঁচড়াহাটি ও নন্দীগ্রাম খাল) এস ম্যাপের খাল এর শ্রেনী পরিবর্তন করে নিজ নামে বন্দোবস্ত নিয়ে লাখ লাখ টাকায় প্রতি শতক বিক্রি করেছে। অদ্যাবধি তার এ প্রচেষ্টা চলমান রযেছে বলেও অনেকে অভিযোগ করেছেন।
এদিকে আরও অভিযোগ উঠেছে যমুনা নদী সরকার পুনঃউদ্ধারসহ পুনঃখননের সিদ্ধান্ত নিলেও রফিকুল নিজ স্ত্রীসহ স্বনামে বেনামে যমুনা নদীর পাড় বা ভেড়ী কৌশলে রেকর্ড করিয়ে নিয়েছে। এমনকি কাঁচড়াঘাটি এলাকার নিতাই মন্ডল নামের এক ব্যক্তি ক্রয়কৃত জমিতে দীর্ঘদিন বসত করার পর সম্প্রতি জানতে পারেন যে রফিকুল তার বসতভিটা নিজ নামে রেকর্ড করিয়ে নিয়েছেন। এক্ভাবে মশিউর রহমানের বেশ কয়েক জনের বড় অংকের জমি রফিকুল নিজ নামে রেকর্ড করিয়ে নিয়ে রীতিমত বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছেন।
তবে শুধু নিতাই না। বাদঘাটা, কাঁচড়াঘাটিসহ আশপাশের অসংখ্যা মানুষের প্রাণের দাবি লেপ তোসক সেলাই করার পেশা থেকে মাত্র বিশ বছরের ব্যবধানে বাদঘাটা মৌজার মত জায়গায় কিভাবে রফিকুল কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি গড়ে তুলেছে তার অনুসন্ধান হোক।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে ইতঃপূর্বে কাঁচড়াঘাটি এলাকার বেশ কয়েক জনের প্রায় বার বিঘা জমি রফিকুল নিজ নামে রকর্ড করিয়ে নেয়ার পর বিষয়টি জানাজানি হলে তার গ্রেফতারের দাবিতে শ্যামনগওে মানববন্ধন হয়। চল্লিশ বছরের পুরানো রাস্তা শ্রেনী হিসেকে ‘পথ’ বলে উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও রফিকুল তা নিজের বলে দাবি করে চলেছে। এমনকি ঐ রাস্তা ব্যবহার করতে হলে তাকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিতে হবে বলেও সে নানা সময়ে হুমকি ধমকী দেয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।
নিতাইসহ এমন শত শত ভুক্তোভোগীর দাবি শুধু রফিকুল নয়। বরং রফিকুল ইসলামের এমন দুষ্কর্মের সাথে যেসব সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী সহায়তা করেছে তাদের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান করা হোক। যারা ইতঃপূর্বে অন্যত্র বদলী হয়েছে কিংবা অবসর গ্রহন করেছেন তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হোক রফিকুলের এধরনের অন্যায় এবং জালিয়াতিতে সহায়তার অভিযেগে। প্রয়োজনে দুদক দিয়ে হলেও রফিকুলসহ সেসব সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের অর্থ সম্পর্দের তথ্য অনুসন্ধানেরও দাবি স্থানীয় ভুক্তোভোগীদের।