নেত্রকোণার কলমাকান্দায় গত সোমবার থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত বৃষ্টি না হওয়া এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানির চাপ না থাকায় ধীরগতিতে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে প্লাবিত এলাকার মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। ঘরবাড়ির চারপাশে এখনও পানি থাকায় প্রায় শতাধিক গ্রামে পানিবন্দি হয়ে আছেন প্রায় ৫০ হাজার মানুষ।
দুর্গত মানুষদের অভিযোগ, খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। গবাদি পশু নিয়েও বিপাকে পড়েছেন তারা। ভেঙে পড়েছে উপজেলার সদরের সাথে অভ্যন্তরীণ যোগযোগ ব্যবস্থা। এ বন্যার পানিতে উপজেলার রাস্তাগুলোর বুকে দেখা দিয়েছে খানা-খন্দ, ছোট-বড় গর্ত ও ক্ষতের। এদিকে নেত্রকোণা জেলার সঙ্গে কলমাকান্দা সড়কে যান চলাচল পুরোপুরি চালু হয়নি। তবে কলমাকান্দা উপজেলা শহরতলী থেকে মন্তলা, গুতুরা, বাউশাম, বরুয়াকোনা, ডাইয়ারকান্দা, বিশরপাশা নয়াপাড়া ও মুক্তিচর জলে বাধা জীবন যাপনে নৌকাই ভরসা! এদিকে নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘন্টায় কলমাকান্দা প্রধান নদী উব্দাখালী নদীর পানি বিপদসীমার ৬ সে.মি. প্রবাহিত হচ্ছে ১৫ জুলাই বুধবার সকাল পর্যন্ত।
বুধবার সরেজমিন পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পানিতে তলিয়ে যাওয়ার প্রায় ২৫ কি.মি. রাস্তা-ঘাট ভেসে উঠতে শুরু করেছে। উপজেলার সাথে যোগাযোগের অভ্যন্তরীণ রাস্তাগুলোর ওপর দিয়ে এখনেও কোথাও ১-৩ ফুট বন্যার পানি বয়ে যাচ্ছে। তবে ওইসব এলাকায় এ বন্যায় পানির তীব্র স্রোতে ব্রীজের সংযোগ সড়কের মাটি ধসসহ গ্রামীন পাঁকা ও কাঁচা রাস্তাগুলোর অধিকাংশই ভেঙে গেছে।
এ বন্যায় উপজেলার ১৪ একর আমন বীজতলা, ৫১০ একর আউশ জমি পানিতে তলিয়ে যায়। এর সপ্তাহ আগে পাহাড়ি ঢলের বন্যায় ১ হাজার ৬০৪টি পুকুরসহ ৭৪৫টি সহ ২ হাজার ৩৪৯টি পুকুর পানিতে তলিয়ে মাছ বেরিয়ে যাওয়ায় স্থানীয় কৃষক ও মৎস্য চাষীরা দিশেহারা। তবে উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বন্যার পানি পুরোপুরি নেমে গেলে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্ক ধারণা করা যাবে।
উপজেলা জুড়ে যে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে, প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয় বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। পাহাড়ি ঢলের বন্যার পানির তোড়ে বিধ্বস্ত হওয়া ঘর এবং ভেতরে জমে থাকা বালু-কাদার স্তুপ সরাতে ব্যস্ত রয়েছেন।
এদিকে বন্যার পরিস্থিতির মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসনের সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে প্রতিবেদককে জানান ইউএনও মো. সোহেল রানা। তিনি আরও বলেন, এ বন্যায় বানভাসি মানুষের খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিতে এরইমধ্যে ৮ ইউনিয়নের পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সহ ২৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার শুঁকনো খাবার বিতরণ করেছি। এ প্রাকৃতিক দুর্যোগে ৭০ টন জিআর চাল ও দুইশ’ শুকনো খাবার প্যাকেট জেলা প্রশাসন থেকে আমরা বরাদ্দ পেয়েছি। যেসব এলাকা বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ওই এলাকাগুলোকে চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান ইউএনও।