বিয়ের প্রলোভন দিয়ে ধর্ষণ করলেও সালিশ সভায় দেড়লাখ টাকা দিয়ে এক অনার্স পড়-য়া ছাত্রীকে বিদায় দিতে চায় সালিশ সভার মাতাব্বরগণ। চেয়ারম্যান অফিসে সালিশ সভা প্রত্যাখান করে ওই ছাত্রী থানায় চলে আসে। গতকাল সন্ধ্যায় এ ঘটনা নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয় সারা কসবায়। কসবা থানা পুলিশ রাতেই গ্রেফতারের চেষ্টা চালায় ধর্ষক সাইফুলকে।
ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, কসবা উপজেলার গোপীনাথপুরে স্কুল জীবন থেকে একই সাথে পড়তো ওই ছাত্রী এবং তার সহপাঠী সাইফুল। সাইফুল উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের ফতেহপুর গ্রামের আজিজ মিয়ার পুত্র। তাদের দু’জনের বন্ধুত্ব একপর্যায়ে প্রেমের দিকে গড়ায়। স্কুল, কলেজের গন্ডি পেরিয়ে সাইফুল ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। অন্যদিকে ওই ধর্ষিতা ছাত্রী ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারী কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। ওই ছাত্রীর দাদা ও নানা উভয়ই মুক্তিযোদ্ধা।
ছাত্রীর বাবা মা দরিদ্র হওয়ার সুবাদে সাইফুল ওই পরিবারে অবাধে যাতায়াত করতো। ওই ছাত্রীর সাথে কৌশলে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করে। সাইফুল বিভিন্ন সময় ওই ছাত্রী ও তার মার কাছ থেকে টাকা পয়সা নিয়েছে। গত ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর সাইফুল যখন ওই ছাত্রীকে নিয়ে আবাসিক হোটেলে গিয়ে রাত যাপনের প্রস্তাব করে তখনই এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে সাইফুলকে বিয়ের জন্য চাপ দেয়। তখন সাইফুল গা ঢাকা দেয়। এ নিয়ে ওই ছাত্রী এবং তার মা এলাকার চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের ধারস্ত হন। সবাই তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে তাড়িয়ে দেন।
পরে নিরুপায় হয়ে গত ২ জুলাই ওই ছাত্রী কসবা থানায় সাইফুলকে আসামি করে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেন। এ অভিযোগ পেয়ে কসবা থানা ওসি (তদন্ত) আসাদুল ইসলাম ঘটনাস্থলে যান এবং ঘটনাবলীর সত্যতা খুঁজে পান। দ্রুত মামলা রেকর্ড না করার সুবাদে স্থানীয় চেয়ারম্যান মান্নান জাহাঙ্গীর, ইউপি সদস্য খোরশেদ আলম, বিল্লাল মিয়াসহ ২৬ জন সালিশকার বুধবার (১৫ জুলাই) গোপীনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে সালিশ সভায় মেয়েটিকে নানাভাবে মানসিক নিপীড়নমূলক কথাবার্তা বলে। সালিশসভায় কোনো মহিলা সদস্য উপস্থিত না থাকলে পুরুষ সালিশকারগণ নানাভাবে তাকে অপমানমূলক কথা বলে। ২৬ জন সালিশকারী জুরি বসে রায় দেন সাইফুল ওই নির্যাতিতা ছাত্রীকে দেড়লাখ টাকা জরিমানা দেবে। তাৎক্ষণিক ওই ছাত্রী এই বিচার প্রত্যাখান করে এবং চিৎকার করতে করতে সালিশসভা ত্যাগ করে থানায় চলে আসে। পথে স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান রাশেদুল কাওসার ভুইয়া জীবন, কসবা প্রেসক্লাব সভাপতির সংগে এই প্রহসনমূলক বিচারের কথা বলেন। সকলেই তাকে থানায় যেতে পরামর্শ দেন।
নির্যাতিতা ছাত্রী সাংবাদিকদের বলেন, স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের কাছে গত ৬/৭মাস যাবত ধন্যা দিয়ে প্রত্যাখাত হয়ে থানায় অভিযোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে এবং আমার পরিবারকে চাপ দিয়ে সালিশে বসানো হয়। সাইফুল আমার সাথে যা করেছে এর সমাধান বিয়ে নয়তোবা তার শাস্তি। ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রী আরো বলেন, বিল্লাল মেম্বার আসামীর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আমাকে আত্মহত্যা করার জন্য প্ররোচনা দিয়েছেন এবং গরিবের বিচার নেই বলে তাচ্ছিল্য করে নানা রকম অশালীন কথা বলেছেন। সালিশে আমাকে তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করতে সুযোগ দেয়া হয়নি। আমি কথা বলতে চাইলে আমাকে গালমন্দ করা হয়।
তদন্তকারী কর্মকর্তা আসাদুল ইসলাম জানান, গতকাল রাতেই আমরা সাইফুলের বাড়িতে হানা দিয়েছি। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। মেয়েটিকে তার নিরাপত্তার কথা ভেবে থানা হেফাজতে রাখা হয়েছিলো। কারণ সে বলছিলো, সাইফুল বিয়ে না করলে সে আত্মহত্যা করবে। কসবা উপজেলা চেয়ারম্যান রাশেদুল কাওসার ভুইয় জীবন বলেন, এটা আইনমন্ত্রীর এলাকা। আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা এলাকায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। কোনো প্রহসনমূলক সালিশ করে নারী অধিকারকে খর্ব করতে দেয়া হবে না। তিনি চেয়ারম্যান অফিসে সালিশকারীদের আপত্তিজনক কথাবার্তা দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন। সর্বশেষ খবরে জানা যায়, ওই ছাত্রীকে গতকাল (১৬ জুলাই) ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে ডাক্তারী পরীক্ষা করার জন্য নেয়া হয়েছে।
ধর্ষিতা ছাত্রীর মা বলেন, আমি গরীব বলে বিচারকরা আমার মেয়ের বিষয় বিবেচনা করেনি। সবাই ছিলো ছেলের পক্ষে।