একদিকে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের ভয়! অপর দিকে নদী ভাঙ্গনে আতঙ্ক! এভাবে জীবন যাপন করছে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার মেঘনা নদীর তীরে বসবাসরত নয়ানগর গ্রামের হাজারো মানুষ ও স্থায়ী বাসিন্দারা। নদী ভাঙ্গন কবলিত মানুষের চোখে-মুখে এখন শুধুই হতাশা আর আর্তনাদের ছাপ। মেঘনা নদী প্রতিনিয়ত ভাঙ্গনের ফলে আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন মেঘনার তীরবর্তী নয়ানগর গ্রামের প্রায় ৩শতাধিক পরিবারের হাজারো লোকজন। যেখানে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারণে অসহায় পরিবার গুলোর মানুষের খাবার জুটানোই অসুবিধা। সেখানে নদী ভাঙ্গনের ফলে ঘর হারা তীরবর্তী মানুষগুলোর দিন কাটছে ভাঙ্গা গড়ার আতঙ্ক নিয়ে। এ যেন বর্তমানে মরার ওপর খাঁড়ার ঘা। সরজমিনে দেখা যায়, গজারিয়া ইউনিয়নের নয়ানগর গ্রামের মেঘনা নদীর তীরবর্তী এলাকার প্রায় ৫০০মিটার এলাকা জুড়ে শুরু হয়েছে ভাঙ্গন। এরইমধ্যে নয়ানগর পশ্চিম পাড়ার বাসিন্দা আবদুল মিয়ার ও গাজীর বাড়ির অধিকাংশ স্থান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙ্গন থেকে বাঁচতে বসত ঘরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সমূহ সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন তীরবর্তী মানুষ গুলো। একই অবস্থা আশপাশের বাসিন্দাদের। ভাঙ্গন কবলিত এলাকাবাসী জানান, পানির উচ্চতা কম থাকলেও প্রবল বাতাসের সাথে বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে তীরে। এতে ভেঙে যাচ্ছে নদীর তীরবর্তী এলাকাসহ স্থাপনা। তারা আরও জানান, গত কয়েক দিনের ক্রমাগত ঢেউ আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে মেঘনা তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের মনে। যে কোনও সময় ভয়াল রূপ ধারণ করে তীরবর্তী এলাকায় ভাঙনের প্রবল আকার ধারণ করতে পারে।
এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, প্রতি বছর ভাঙনের সময় আশ্বস্ত করা হলেও কার্যত দীর্ঘ দিনের এ দাবি পূরণ হয়নি মেঘনা পাড়ের ভাঙ্গন কবলিত মানুষের। নদীর অনবরত ভাঙ্গনের শিকার হওয়া পরিবারের লোকজনের মধ্যে চলছে শুধু কান্না আর কান্না। প্রিয় বসত ভিটাটিও শেষ পর্যন্ত নদী গর্ভে চলে যাওয়ায় কাঁদতে কাঁদতে অনেকে হয়েছেন বাকরুদ্ধ। তাদের প্রিয় জন্মভূমি নয়ানগর গ্রামকে বাঁচাতে জরুরি ভিত্তিতে একটি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করতে সরকারের উচ্চ মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন স্থানীয়রা।
গজারিয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবুতালেব ভূইয়া জানান, খবর পাওয়ার সাথে সাথে ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। তিনি বলেন, প্রতি বছরই কিছু না কিছু অংশে ভাঙনের সৃষ্টি হয়ে গর্ভে চলে যায় অনেক বাড়িঘর। তবে এবার পানি বেশি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীতে প্রবল স্রােত ও ঢেউ বেশি থাকায় পুরো এলাকা জুড়ে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ভাঙ্গন কবলিত এলাকা ভাঙ্গন রোধে পাড় বাঁধাইয়ের জন্য অর্থ সহায়তা চেয়ে উপজেলা প্রশাসন বরাবর চিঠি পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানান, নদী ভাঙ্গনের বিষয়টি অবগত হওয়ার সাথে সাথে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করার জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে। নদী ভাঙ্গন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন তিনি।