স্থানীয় সরকারের অধীনে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দুর্নীতি, অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অসদাচরণের অভিযোগে প্রায় সময়ই ইউপি চেয়ারম্যান, পৌর চেয়ারম্যান, মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের অনাস্থা, বরখাস্ত এবং আদালতের নির্দেশে আবার স্বপদে পূর্ণবহাল হতে দেখা যায়। রাজনৈতিক বিবেচনায় আবার তাদেরকে নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নও দেয়া হয়ে থাকে। এ বিষয়ে অনেকেরই প্রশ্ন অপাংক্তেয়দের মনোনয়ন না দিলেই কী হয় না।
সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ব্যতিরেখে ইচ্ছা করলেই কাহাকেও অপসারণ, অনাস্থা ও বরখাস্ত করা যায় না। এর মধ্যে দুর্নীতি, অনিয়ম, আত্মসাৎ, অসদাচরণ ও ক্ষমতার অপব্যবহার উল্লেখযোগ্য। তদোপরি স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে কেহ যেকোন ভাবে নির্বাচিত হলে এবং গেজেট প্রকাশিত হওয়ার পর পরবর্তী সময় কোনো অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ ওঠলে ভোটার বা জনগণের কিছু করার থাকে না। অপরদিকে আইনের দ্বারস্থ হওয়ার সুযোগ থাকলেও স্বপ্রনোদিত হয়ে তাদের বিরুদ্ধে অনেক সময় মামলা মোকদ্দমার ঝামেলায় অনেককেই খুব একটা জড়িত হতে দেখা যায় না।
তবে প্রায় সময়ই ইউপি চেয়ারম্যান, পৌর চেয়ারম্যান, মেয়র ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অপসারণ, অনাস্থা বা বরখাস্তের নজির কম নহে। আবার আইনের ফাঁক ফোকরে অনেক সময় উচ্চ আদালত বরখাস্তের আদেশ স্থগিত করে স্বপদে পূর্ণবহালের আদেশ দিয়ে থাকেন। ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যগণ, পৌর চেয়ারম্যান, মেয়রদের বিরুদ্ধে পৌরসভার কমিশনারগণ এবং উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট উপজেলার চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট উপজেলায় কোনো পৌরসভা থাকলে সেই পৌরসভার মেয়র বা চেয়ারম্যান সমন্বিতভাবে অনাস্থা প্রস্তাব দিলে তা যাচাই, বাছাই করে সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসক এই প্রস্তাব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে থাকেন। যা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় অনাস্থার কারণ যাচাই, বাছাই করে যদি ইহার বাস্তবতা প্রমাণিত হয়, তখন সেই ইউপি চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, চেয়ারম্যান ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দিয়ে থাকেন বলে জানা যায়। এ আদেশ প্রাপ্তির পর এ ব্যাপারে আদালতে যাওয়ার সুযোগ থাকাতে অনেকেই আপীল করে স্বপদে বহাল হওয়ার কথা জানা যায়। তাই অনেক সময় অনাস্থা প্রস্তাব ও বরখাস্তের আদেশ আইনী প্রক্রিয়ার কারণে অনেক সময় আলোর মুখ দেখেনি।
টিআইবির এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে ১০ জুন ২০২০ ইং পর্যন্ত ২১৮টি দুর্নীতির ঘটনায় ৪ লাখ ৫৯ হাজার ৮৭০ কেজি চাউল উদ্ধারসহ ৮৯ জন জনপ্রতিনিধিকে দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত করা হয়েছে। ২৮ জুন দৈনিক যুগান্তর, দৈনিক মুক্তখবর ও অন্যান্য গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, সারা দেশের ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বার ৯৪ জন জনপ্রতিনিধির দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুর্নীতি
দমন কমিশন অনুসন্ধ্যান চালাচ্ছে। এরই মধ্যে দুদক ২১টি পৃথক মামলা করেছে বলে জানা যায়। জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব হয়, অনেক সময় বরখাস্ত হয়। কিন্তু অনিয়ম, দুর্নীতি, অসদাচরণ ও হেনিয়াস অপরাধে অভিযোগের কারণে কোনো বিচার হয়নি এবং অনেক সময় দুদক স্বপ্রনোদিত হয়ে দায়ীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা নেয়নি বলে শুনা যায়। আরও জানা যায়, উচ্চ আদালত থেকে বরখাস্তকারীকে স্বপদে পুর্ণবহালের আদেশ দিয়ে কেন এবং কী কারণে তাহাকে অনাস্থা ও বরখাস্ত করা হয়েছে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কারণ ও জবাবদিহীতা জানতে চাইলে অনেক সময় ইহাও নাকি কালক্ষেপন হয়ে থাকে বলে জানা যায়।
আইনের এহেন ফাঁকফোকরে অনাস্থা ও বরখাস্তকৃত জনপ্রতিনিধি পুর্ণবার স্বপদে বহাল হয়ে প্রতিপক্ষ অভিযোগকারীদেরকে আমলেই আনেনা। ফলে কাজে স্থবিরতা ও উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। তদোপরি পূর্ণবহালকৃত জনপ্রতিনিধি মনোপলিভাবে যা ইচ্ছা তা করার সুযোগ পেয়ে থাকে। ফলশ্রুতিতে দুর্নীতি, অনিয়ম, অসদাচরণ একচেটিয়া বৃদ্ধি পায় এবং তাদের বিরুদ্ধে অনেকেই নতুন করে আবারও অনাস্থা ও অপসারণের দিকে যেতে চায় না।
কিছুদিন আগে কিশোরগঞ্জ থেকে সড়ক পথে সুখিয়া, পাকুন্দিয়া, মঠখোলা, মনোহরদী ও শিবপুর হয়ে ঢাকা যাওয়ার পথে রাস্তায় ব্যানার, ফেস্টুনসহ একটি মিছিল দৃশ্যমান হয়। মিছিলটির স্লোগান ছিল, গরীবের চাউল খেকো লাডু ভাই যেখানে আমরা নাই সেখানে। লাডু ভাইয়ের দুর্নীতির বিচার চাই ইত্যাদি। মিছিলটি দেখে রাস্তার পাশে গাড়ী থামিয়ে একটি চা দোকানে উপস্থিত লোকদের কাছ থেকে জিজ্ঞাসা করে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর দেয়া সাশ্রয়ী মূল্যের ১০ টাকা কেজির চাউল এদিক সেদিক হওয়াতে জনপ্রতিনিধি লাডু ভাইয়ের বিচারের দাবীতে এলাকার জনগণ মিছিল করছে। আরও জানতে পাই লাডু ভাইয়ের বিরুদ্ধে অজ¯্র দুর্নীতি ও অনিয়মের কমতি নেই। সারাদেশে প্রায় সময়ই এমন দৃশ্যপটের শেষ থাকেনি। এদিকে সড়ক পথে পার্বতীপুর ও সৈয়দপুর হয়ে নীলফামারী শহরে একটি অনুষ্ঠানে যাওয়ার সময়ও রাস্তায় এমন ধরণের মিছিল ও স্লোগান শুনতে পাই। এছাড়া পথে পথে এমন অনেক মিছিল দৃশ্যমান হয়। তারপরও লাডু ভাইরা বহাল তবিয়তেই থাকে। যা দীর্ঘদিন ধরে এদেশের চালচিত্র। বিশিষ্ট কলামিস্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) এ.কে.এম শামছুদ্দিন একটি কলামে লিখেছেন, বঙ্গবন্ধু এক সময় একটি অনুষ্ঠানে নাকি বলেছিলেন, হানাদাররা এদেশের সব কিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে লুন্ঠন করে, মা বোনদের ইজ্জত সম্ভ্রম নষ্ট করে, লাখ লাখ নিরপরাধ মানুষ ও কোলের শিশুদেরকে হত্যা করে গেছে। কিন্তু কিছু চোর রেখে গেছে। এই চোরদের নিয়ে গেলে দেশটা বাঁচত। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে এমন অসংখ্য অভিযোগের শেষ নেই। যে কারণে অনেকে অতিষ্ট হয়ে বলে থাকে কাবিখা ও সাশ্রয়ী মূল্যের চাউল গম হালুয়াছে লুটে পুটে খাবিতো খা, কুছনেহি পরওয়া।
এদিকে চাকরির প্রলোভনে শত শত সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা নিয়ে কুয়েতে মানব পাচার করে থাকে লক্ষীপুর- ২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য শহিদ ইসলাম পাপুল। জানা যায়, এদেশের শত শত লোক চাকরি না পেয়ে কুয়েতে মানবেতর জীবন যাপন করছে। পাপুল বর্তমানে কুয়েতের কারাগারে থাকলেও প্রতিদিন তার বিচারের দাবীতে ভূক্তভোগীরা যেমন মিছিল করছে তেমনি সংসদেও তার বিচার দাবী ও সংসদ সদস্য পদ খারিজ করার দাবী জানানো হচ্ছে। যেমনিভাবে অনেক ইউপি মেম্বার, ইউপি চেয়ারম্যান, পৌর চেয়ারম্যান, মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম, আত্মসাৎ ও অসদাচরণের সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে তেমনিভাবে সংসদ সদস্য (এমপি) পাপুলের মানব পাচারের দুর্নীতিও সামনে চলে আসছে। এ ব্যাপারে ৮ জুলাই সংসদে পাপুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ আকারে প্রস্তাব আনা হলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সংসদনেত্রী বলেছেন, সংসদ সদস্য পাপুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য হলে তার আসন খালি হবে (যুগান্তর ০৯/৭/২০২০ ইং)। এমনিভাবে স্থানীয় সরকারের অধীন নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দুর্নীতি, অনিয়ম, অনাস্থা, বরখাস্তের পাশাপাশি যোগ হলো বিদেশে (কুয়েত) মানব পাচারে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎকারী মানুষ খেকো দানবের বিরুদ্ধে নতুন উপাখ্যান।
কিশোরগঞ্জ- ৪ (ইটনা-মিটামইন-অষ্টগ্রাম) সংসদীয় আসনের এমপি ও রাষ্ট্রপতির পুত্র রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক সংবাদপত্রে বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, শাহিন আল মামুন নামে এলাকার এক ব্যক্তি রাষ্ট্রপতির ভাতিজা পরিচয় দিয়ে দুর্নীতি ও প্রতারণা করে যাচ্ছে। সেই ব্যক্তি আদৌ রাষ্ট্রপতির ভাতিজা নহে। তার বিচার চেয়ে উক্ত এমপি আইন শৃংখলা বাহিনীর সহযোগিতা কামনা করেছেন (যুগান্তর ২৯/৬/২০২০ ইং)। এসব দেখে জনৈক ব্যক্তি অভিমত ব্যক্ত করে বলেছে, এই যদি হয় দেশের অবস্থা তবে দেশের সাধারণ মানুষ কোথায় আছে, তা যথেষ্ট চিন্তাভাবনার বিষয়।
এছাড়া প্রতিদিনের বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, সরকারি বেসরকারি অফিস ও বিভিন্ন প্রজেক্টে যেন দুর্নীতিতে করোনা কোভিট- ১৯ এর মতো দানব বিচরণ করছে। এই মধ্যে সুনামগঞ্জের আলোচিত হাওর অঞ্চরে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শর্তানুযায়ী সম্পন্ন না করেই প্রায় ৮৩ কোটি টাকা ছাড় করে নেয়া হয়েছে। এমনকি নির্ধারিত সময়ের আরো দুই দফা সময় বাড়িয়েও সেই কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইপি)। এমন পরিস্থিতির মধ্যেও সমাপনী বিল পরিশোধের নামে আরও ২০ কোটি টাকা চেয়েছে পিআইপি প্রধান সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক (যুগান্তর ০৭/৭/২০২০ ইং)।
অনেকেই মনে করে সর্বগ্রাসী দুর্নীতি, অনিয়ম যেভাবে জন প্রতিনিধিসহ সর্বক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়েছে যদি দুর্নীতির এ দাবানল, সোনামী ও রাহুগ্রাস থেকে এখনই মুক্তি না মেলে তবে সেই দিন বেশী দূরে নয়, যেদিন দুর্নীতিবাজদের শরীরের সাথে
ধাক্কা লাগলেও বলা ও কওয়ার কিছু নাও থাকতে পারে। যদিও এসব কিছু তদারকির জন্য রয়েছে প্রত্যেক উপজেলার ইউএনও, সমন্বিত দুর্নীতি দমন কমিশন, জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট এলাকার জাতীয় সংসদ সদস্য।
এ প্রসঙ্গে অভিমত ব্যক্ত করে জনৈক কলেজ শিক্ষক বলেছেন, আমাদের দেশে ঘুষ, দুর্নীতি, চুরি চামারির অভিযোগে প্রকাশ্যে হাতের কব্জি কাটার নিয়ম বা আইন নেই। কিন্তু সৌদি আরবে এসব অপরাধে কাজীর (বিচারক) নির্দেশে হাতের কব্জি কর্তনের বিধি বিধান রয়েছে। তেমনিভাবে জানা যায়, এক সময় ব্রিটিশ রাজত্বকালে ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়ম, চুরিচামারির শাস্তি ছিল অভিযুক্ত লোকটিকে ধরে প্রথমে থানার পুলিশি হেফাজতে নেয়া। ২য় কাজটি ছিল সেই অভিযুক্ত ব্যক্তিটিকে নাকে মুখে চুনকালি মেখে গলায় জুতা ও ঝাড়– ঝুলিয়ে এলাকায় ঘুরানো ও প্রকাশ্য স্থানে গাছে বেধে রাখা। তৃতীয় পর্বটি ছিল ওই ব্যক্তিকে থানার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট আদালতে বিচারের জন্য সোপর্দ করা। স্বাধীন বাংলাদেশে যেমন কারও চুরিচামারির অভিযোগে কাজীর (বিচারক) দরবারের মতো হাতের কব্জি কর্তনের বিধি বিধান বা আইন নেই তেমনি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলের ন্যায় নাকে মুখে চুনকালি, গলায় জুতা, ঝাড়– বেঁধে দেয়ার মতো সেই অমানবিক, বর্বর প্রথা, রেওয়াজ ও বিধিবিধান নেই। যা একটি সভ্য ও স্বাধীন দেশের মানুষ হিসেবে কেহ প্রত্যাশাও করে না।
অনেক সময় ভূয়া র্যাব, ডিবি, পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট, মেজর, ক্যাপ্টেন, জাল টাকা ও নকল পাসপোর্ট ও প্রতারক ধরা পড়ার ঘটনা আজ মামুলি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু সিআরপিসির প্রথাগত ও মামুলি আইনে ওদেরকে সাধারণত ৪২০ ধারার দন্ডবিধিতে আদালতে সোপর্দ করা হলে আইনের লঘু ধারার কারণে এসব দুষ্কৃতিকারীরা (ঈৎরসরহধষ) অনেক সময় আইনের ফাঁকফোকরে জামিনে চলে আসে। তাতে কঠোর আইনের ধারা না থাকাতে আদালতের উঁংঃরপ অপঃরড়হ নেয়ার অভিপ্রায় থাকলেও সিআরপিসির লঘু আইনের জটিলতার কারণে তা সম্ভব হয়নি বলে জানা যায়।
এমনিভাবে স্থানীয় সরকারের অধীন কোনো জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, অসদাচরণ ও আত্মসাতের ব্যাপারে কোনো মামলা, অনাস্থা ও বরখাস্ত হলে ওরা আইনের ফাঁক ফোকরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে যেমন বেড়িয়ে আসে, তেমনি স্বপদে পুর্ণবহাল হয়ে থাকে। পরবর্তী সময় আরও উৎসাহে নতুন করে মামলা মোকদ্দমার খরচ তুলে নেয়ার জন্য যা খুশী তা করতে ওঠে পড়ে লেগে যায়। তদোপরি তাদের কথিত সহায়তাকারী নাটের গুরু, চামচা চাটুকাররা আনন্দ উল্লাসে মিছিল, মিটিং করে স্লোগানে আকাশ বাতাস স্তম্ভিত করে থাকে। এমনকি লাডু ভাইয়ের কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে বাইরে এমন পোস্টার ব্যানার ফেস্টুনে ছেয়ে ফেলে। তারপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিতেও কুন্ঠাবোধ করেনি।
অনেকেরই অভিমত প্রতারক, দুর্নীতি প্রতিরোধ ও জনপ্রতিনিধিদের বেলায় অনাস্থা ও বরখাস্তের বিচারের ক্ষেত্রে প্রচলিত যে আইন রয়েছে এই আইন সংশোধন করে গতানুগতিক আইন প্রনয়ন করলে এসব কিছু প্রতারণা, জালিয়াতি, অনিয়ম, দুর্নীতি অনেকাংশে শিথিল হয়ে যাওয়ার কথা। অন্যদিকে অনাস্থা ও বরখাস্ত হওয়ার পর স্বপদে পূর্ণবহালের সুযোগ যেমন রহিত হবে তেমনি তাদের তল্পিবাহকদের পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন বানিয়ে ঢাকঢোল ও বাদ্যবাজনা বাজিয়ে আনন্দ, উল্লাস ও জয়গানের স্লোগান সংগত কারণেই কমে যাবে।
এসব ব্যাপারে দলমত নির্বিশেষে সময়োচিত দৃঢ় পদক্ষেপ, আইনী ব্যবস্থার যথাযথ সংস্কার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আপোষহীন এ্যাকশনই প্রতিষেধক। এদেশ কোনো ব্যক্তি, গোষ্টি, দলের নয়। এদেশ সকলের। জনপ্রতিনিধিদের দুর্নীতি, অনিয়ম, অসদাচারণ, আত্মসাৎ কারও কাম্য হতে পারে না। শুধু অনাস্থা ও বরখাস্তই নহে, প্রচলিত আইনের সংস্কার করে বিচারের মাধ্যমে তাদের মুখোশ উন্মোচন করা না হলে পূর্ণবহালের সুবাধে গডফাদার তাদের চামচা, চাটুকার, নাটেরগুরু ও নেপথ্যের কুশীলবরাও ঢাকঢোল, বাদ্যবাজনা বাজিয়ে শুধু আনন্দ উল্লাস নয় নৃত্য করলেও হয়তো করার কিছু নাও থাকতে পারে। যত তাড়াতাড়ি প্রচলিত আইন সংস্কার হয় এবং দুর্নীতির বিচার হয় এদিকে ব্যবস্থা গ্রহণই মুখ্যম ও জনপ্রত্যাশা। পরিশেষে, বলব রোগ সনাক্ত না করে ডাঃ কদম আলীর চিকিৎসায় ঔষধ খাওয়া যেমন বিষ, তেমনি গাছে ঠান্ডা পানি দেওয়ার বদলে ফুটন্ত গরম পানি ঢালাও জীবন্ত গাছকে মেরে ফেলারই নামান্তর। সুচিন্তিত ব্যবস্থাই দিতে পারে এসব কিছুর সমাধান। দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজ যেমন জাতীয় উন্নয়নের অন্তরায়, তেমনি দেশ, জাতি ও জনগণের দৃষ্টিতে বিষাক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইডেরই নামান্তর।
এ.কে.এম শামছুল হক রেনু
লেখক কলামিষ্ট