করোনার ধাক্কায় ধস নামা রাজস্ব আদায় বাড়াতে বড় অংকের রাজস্ব ফাঁকিবাজদের দিকে বিশেষ নজর দেয়া হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, বড় কর ফাঁকিবাজদের থেকে বড় অংকের বকেয়া আদায়ের উদ্যোগ করোনার ধাক্কায় রাজস্ব আদায়ের ভাটা কাটাতে সহায়তা করবে। রাজস্ব আদায়ে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাছাড়া বিভিন্ন আদালতে অনিষ্পত্তি হওয়া রাজস্ব মামলাগুলো বিকল্প বিরোধ আইনের আওতায় এনে নিষ্পত্তি করতে পারলেও রাজস্ব আদায় হবে। বিদ্যমান অবস্থায় বড় রাজস্ব ফাঁকিবাজ চিহ্নিত করতে একযোগে মাঠে নেমেছে এনবিআরের তিন গোয়েন্দা সংস্থা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, করোনাকালীন সঙ্কটে সাধারণ ব্যবসায়ীরা লোকসানে পড়ে নিয়মিত রাজস্ব পরিশোধ করতে পারছে না। কিন্তু রাজস্ব না পেলে সরকার চলবে কিভাবে? এমন পরিস্থিতিতে চলতি অর্থবছরে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে দীর্ঘদিনের রাজস্ব ফাঁকিবাজদের কাছ থেকে বড় অঙ্কের বকেয়া আদায়ে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সেজন্য এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা শাখা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি), শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এবং ভ্যাট নিরীক্ষা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত একাধিক টিম মাঠে নেমেছে। ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে দীর্ঘদিনের ভ্যাট ফাঁকিবাজদের থেকে রাজস্ব আদায়ে জোর দেয়া হচ্ছে। বিনা নোটিশে বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে গোয়েন্দারা হাজির হয়ে অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণ করার বিষয় খতিয়ে দেখছে। প্রয়োজন মনে করলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট পরিশোধের তথ্যও যাচাই করা হবে। সম্প্রতি এনবিআর থেকে অনলাইনে গ্রহণ করা ভ্যাট নিবন্ধন নম্বর বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে প্রদর্শিত স্থানে রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশ না মানলেও প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভ্যাট গোয়েন্দারা জবাবদিহি করবেন। পাশাপাশি চলতি অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বন্ড দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধেও বাড়ানো হচ্ছে।
সূত্র জানায়, উচ্চ আদালতে ২৪ হাজার ৫৭২টি বিচারাধীন রাজস্ব মামলা রয়েছে। ওসব মামলা নিষ্পত্তিতে রাজস্ব খাতে সরকারের আদায় হওয়ার কথা ৩০ হাজার ৯৪৬ কোটি টাকা। বছরের পর বছর ওসব মামলা অমীমাংসিত থাকায় সরকারের তহবিলে একটি টাকাও জমা হচ্ছে না। ওসব মামলা নিষ্পত্তিতে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি আইনে জোর দেয়ার সুপারিশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। সদ্যঃসমাপ্ত অর্থবছরে এনবিআর রাজস্ব আদায় করেছে ২ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরে আদায়ের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ২৩ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা। অর্থাৎ আদায় কমেছে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা বা ৪ শতাংশের মতো।
এদিকে এ প্রসঙ্গে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কমিশনার শওকত হোসেন জানান, রাজস্ব ফাঁকিবাজদের ছাড় নেই। বন্ড দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করে বড় অঙ্কের পাওনা রাজস্ব আদায় করা হবে।
অন্যদিকে ভ্যাট নিরীক্ষা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান জানান, করোনার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য চরম খারাপ যাচ্ছে এটা গোপন কোনো বিষয় না। আয় না থাকলে সাধারণ ব্যবসায়ীরা কিভাবে ভ্যাট দেবেন এটা যেমন সত্য, তেমনি সত্য সরকার রাজস্ব না পেলে কিভাবে চলবে?