প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি করে ফেসবুক স্ট্যাটাস দেয়ার ঘটনায় মামলার প্রেক্ষিতে শেরপুর থানা পুলিশ গত শুক্রবার রাতে বাগড়া কলোনি জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আবদুর রহমান দিদারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
শেরপুর থানা পুলিশ জানায়, বগুড়া জেলার নন্দীগ্রাম উপজেলার ধুন্দার গ্রামের আবদুল কুদ্দুসের ছেলে বাগড়া কলোনি জামে মসজিদের ইমাম কট্টর মৌলবাদী আবদুর রহমান দিদারী মসজিদে ঈমামতি ও ওয়াজ মাহফিল করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। তিনি কারণে অকারনে সরকারের বিরুদ্ধাচরণে সোচ্চার ছিলেন। বিশেষ করে মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদি মানবতা বিরোধী অপরাধের কারণে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দন্ডিত হলে তিনি আরো ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেন। এরই প্রেক্ষিতে
বিভিন্ন মসজিদ ও ইসলামি জালসায় সরকারের বিরুদ্ধে উস্কানীমূলক বক্তব্যের পাশাপাশি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি মাওলানা আবদুর রহমান দিদারী এবং গধষিধহধ অনফঁৎ জধযসধহ উরফধৎু থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে এবং সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় এমন বিভিন্ন ধরনের আপত্তিকর ও মানহানীকর পোস্ট করে। গধষিধহধ অনফঁৎ জধযসধহ উরফধৎু আইডি হতে সে পোস্ট করে “বিড়ালের মত ৫০০ বছর বাঁচতে চাই না। সিংহের মত ১ ঘন্টা বাঁচতে চাই”। একই ফেসবুক আইডি থেকে গত ০৫ এপ্রিল বেলা ১১.৩৪ মিনিটে নিজের একটি ছবি পোস্ট করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে শিরোনাম দেয় যে, “এই ব্যায়াদব মুনাফিক মহিলা শুরুতেই কোরআন সুন্নাহ বিরোধী কাজ করেছে। মহামারী সংক্রান্ত হাদিস বীশ্ব নবী জনাবে মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, যে শহরে এমন রোগ আসবে ঐ শহরের কেউ বাহিরে যাবে না। আবার বাহিরের কেউ ঐ শহরে প্রবেশ করবে না। তাহলে সরকার কোরআন সুন্নাহ মানলেন না। আর কিছু সরকারী কুকুর আলেম ফতুয়া দিচ্ছে, জামায়াতে নামাজ পরা যাবে না, মসজিদ বন্ধ করে দেও। এই আলেম সমাজকে আওয়ামী লীগের দালালদের মহামারী করোনা দিয়ে শেষ করে দাও ইয়া আল্লাহ।”
একই আইডি থেকে গত ৬ এপ্রিল দুপুর ০১.৫৬ মিনিটে নিজের একটি ছবি পোস্ট করে শিরোনাম দেয় যে, “সরকার কি চায় দেশের মানুষ মরে যাক?? আওয়ামী লীগ সরকারের জনগণ থাকলেই কি আর না থাকলেই বা কি যায় আসে”। ০৭ এপ্রিল সন্ধ্যা ০৭.২২ মিনিটে একইভাবে নিজের একটি ছবি পোস্ট করে শিরোনাম দেয় যে, “শেখ হাসিনা ও শেখ হাসিনার আশেপাশের ইসলাম বিরোধী কিছু মানুষের জন্য আজ করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে এসেছে।”
একইভাবে ১৩ এপ্রিল রাত ০৮.৪০ মিনিটে নিজের আর একটি ছবি পোস্ট করে শিরোনাম দেয় যে, “চাল চুরি দেখলেই বোঝা যায় আওয়ামী লীগ চোরের দালাল। আর এই দলের প্রধানকে আগে হাত কেটে দেওয়া হোক। তারপর পাতি নেতাদেরও দেওয়া হোক। তাহলে করোনা বন্ধ হবে। নাহলে এই আওয়ামী লীগের জন্য আল্লাহতায়ালা করোনা বাজেট করে রেখেছেন। এদেরকে শেষ করে দেওয়ার জন্য।”
একইভাবে ১৮ এপ্রিল বেলা ১২.৫৮ মিনিটে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি ছবি পোস্ট করে শিরোনাম দেয় যে, “আপনি সারাদিন খেয়ে কাজ পান না। সব সময় নামাজ যেন মসজিদে না হয়। মসজিদ বন্ধ করার পায়তারা। তুই কবে হেদায়েত হবি। আল্লাহর ধ্বংশ অপেক্ষা করছে”। গত ২১/১০/২০১৯ খ্রিঃ তারিখ তার গধষিধহধ অনফঁৎ জধযসধহ উরফধৎু আইডি থেকে স্ট্যাটাস দেয় যে, “পুলিশ নামটা এখন অভিশপ্ত। এরা ইসলামের দুষমন। নবী করিম সাঃ এর দুষমন। সাহস থাকলে কমেন্ট করেন।” এ ছাড়া বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে “এটা কোন মানুষের আচরণ হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী মরলে জানাজা নছিব হবে না। অপেক্ষায় থাক।” ইত্যাদি উস্কানীমূলক প্রচার-প্রচারনা করতে থাকে।
মাওলানা আবদুর রহমান দিদারী তার ব্যক্তিগত ফেসবুকে এইসব আপত্তিকর ও উস্কানীমূলক প্রচার-প্রচারনা বিভিন্ন স্থানের লোকজনের দৃষ্টিতে আসলে শেরপুর উপজেলার ১নং কুসুম্বী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মো. জুলফিকার আলী সঞ্জু গত শুক্রবার রাতে মাওলানা আবদুর রহমানের বিরুদ্ধে শেরপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার প্রেক্ষিতে
বগুড়ার পুলিশ সুপার মো. আলী আশরাফ ভুঞা বিপিএম (বার) স্যারের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেরপুর সার্কেল মো. গাজিউর রহমানের নেতৃত্বে কর্মকর্তা ইনচার্জ মো. মিজানুর রহমান, পুলিশ পরিদর্শক(তদন্ত ) আবুল কালাম আজাদ ও এসআই সাচ্চু বিশ্বাসসহ শেরপুর থানা পুলিশের একটি চৌকস টিম তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে ওই রাতেই মাওলানা আবদুর রহমান দিদারীকে বাগড়া কলোনি এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকালে তার হেফাজত থেকে একটি স্যামফনি এন্ড্রোয়েট মোবাইল ফোন সেট উদ্ধার করে। পুলিশ তার মোবাইল ফোনে থাকা ফেসবুক আইডি মাওলানা আবদুর রহমান দিদারী এবং গধষিধহধ অনফঁৎ জধযসধহ উরফধৎু পর্যালোচনা করে তার দেওয়া উল্লিখিত পোস্ট গুলির প্রাথমিক সত্যতা খুঁজে পায়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় যে মাওলানা সাঈদীকে যাবজ্জীবন কারা দন্ড দেওয়ায় ক্ষোভ থেকে সে এ স্ট্যাটাসগুলো দিয়েছিল। শনিবার মাওলানা আবদুর রহমান দিদারীকে বিজ্ঞ আদালতে উপস্থাপন করে ০৭ দিনের পুলিশ রিমান্ডের আবেদন করা হবে।