রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে করোনা টেস্ট বৃদ্ধিসহ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে সামাজিক সংগঠন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ। একই কর্মসূচি থেকে উত্তরাঞ্চলের বৃহৎ সামাজিক সংগঠন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবি করা হয়।
শনিবার (১৮ জুলাই) বেলা ১০ টা থেকে ঘন্টাব্যাপী মহানগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, দেশে মহামারি করোনা পরিস্থিতি চলছে। মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। চিকিৎসার জন্য প্রতিনিয়ত হাসপাতালে ছুটছেন কিন্তু কাঙ্খিত সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। সাধারণ মানুষ তাদের নমুনা টেস্ট করাতে পারছেন না। করোনাকালের অজুহাতে চিকিৎসকরা সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছে না। ফলে রাজশাহীতে ক্রমাগতভাবে করোনা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ঈদের আগ পর্যন্ত রাজশাহী নগর করোনামুক্ত হলেও এখন চিকিৎসকদের অবহেলার কারণে আশঙ্কাজনকহারে করোনা রোগী বাড়ছে। তারা কোনো চিকিৎসা পাচ্ছে না। এ ছাড়া রাজশাহীতে করোনা রোগীদের জন্য ডেডিকেটেট হাসপাতাল হিসেবে রাজশাহীর খ্রীষ্টান মিশন হাসপাতালে ব্যবস্থা করা হলেও সেখানকার ভুতুড়ে পরিবেশ ও চিকিৎসকদের অবহেলার কারণে রোগীরা সুস্থ্য হওয়ার পরিবর্তে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে। সমাবেশ থেকে রাজশাহীতে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ হয়ে পড়ে থাকা সদর হাসপাতালেও চিকিৎসাসেবা চালুর জোর দাবি জানানো হয়।
বক্তারা বলেন, চিকিৎসকরা করোনাকালে সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও চিকিৎসা দিতে নানা গড়িমশি করছেন। অনেক সিনিয়র চিকিৎসক রোগীর কাছে পর্যন্ত পৌছেন না। এ কারণে সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে চিকিৎসকদের প্রতি সাধারণ মানুষের বিশ্বাস ও আস্থা হারিয়ে গেছে। সমাবেশ থেকে চিকিৎসকদের প্রতি রোগীবান্ধব হয়ে করোনা রোগীদের পাশে দাড়ানো ও গুরুত্বর করোনা রোগীদের চিকিৎসায় রামেক হাসপাতালের আইসিইউ-এর বেডে চিকিৎসার দাবি জানানো হয়।
রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি মো. লিয়াকত আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচিতে রাজশাহীর বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে রাজশাহী রক্ষা সংগ্রম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. জামাত খান, সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট হামিদুল হক, সাংগাঠনিক সম্পাদক দেবাশিষ প্রামানিক দেবু, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, রাজশাহী চেম্বারের সাবেক পরিচালক হারুনার রশিদ, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি নুরুল ইসলাম মতিন, আইনজীবী সমিতির নেতা এন্তাজুল হক বাবু, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন রাজশাহীর নেত্রী সেলিনা বেগম, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ রাজশাহীর সাধারণ সম্পাদক অঞ্জনা সরকার, রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হক, উন্নয়ন কর্মী সুব্রত কুমার পাল, মিনহাজ উদ্দিন মিনু, রাজশাহী ওয়েবের সভাপতি আঞ্জুমান আরা লিপি, মুক্তিযোদ্ধ বজলার রহমান, জেলা লোকমোর্চার সহসভাপতি আকলিমা খাতুন লিমা, মাওলানা মাকসুদ উল্লাহ, কেএম জোবায়েদ হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সমাবেশ থেকে জামাত খান বলেন, ১৯৯৭ সালে রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। এ সংগঠনের ব্যানারে উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্প, নদী ভাঙন থেকে রাজশাহী নগরকে রক্ষা, গ্যাস সরবরাহ, রাজশাহী-ঢাকা সরাসরি ট্রেন সার্ভিস, চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতের দাবিতে প্রতিষ্ঠার পর থেকে আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছেন। পাশাপাশি মানুষের মৌলিক অধিকার আন্দোলনেও অদ্যবদি সোচ্চার রয়েছে। কিন্তু একটি মহল মানহানীসহ অপপ্রচার করে চলেছে।
বক্তারা বলেন, রাজশাহীতে একটি সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। তারা বিভিন্ন দফতর থেকে সুবিধা নিয়ে থাকে। সুবিধা করতে না পারলেই কথিত আন্দোলনের নামে নানা কর্মসূচি পালন করে। ওই চক্রটিই তার (জামাত খান) বিরুদ্ধে অপপ্রচার লিপ্ত রয়েছে। বক্তারা অবিলম্বে এ সিন্ডিকেটের হোতাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতার নেওয়ার জোর দাবি জানান। একইসঙ্গে রাজশাহী নিউমার্কেট কেন্দ্রীক বখাটে মাদকাসক্তদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। সেখান থেকে প্রতিনিয়িত অসামাজিক কার্যকলাপ চলছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে অবিলম্বে আইনি ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি জানানো হয়।