রাজশাহী মেট্টোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) কাশিয়াডাঙ্গা থানার এএসআই সোহেল রানার বিরুদ্ধে সমবায় সমিতির সভাপতিকে তুলে নিয়ে নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে সাজানো পাওনাদারকে ৫ লক্ষ টাকা প্রদানের চুক্তিতে জোরপূর্বক স্বাক্ষরে বাধ্য করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ১৬ জুলাই রাতের এই ঘটনার প্রতিকার চেয়ে গতকাল রোববার (১৯ জুলাই) ভুক্তভোগী ‘আল ফাতাহ সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি’ রাজশাহীর সভাপতি মো. এনামুল হক আরএমপির কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আর অভিযোগের অনুলিপি দেওয়া হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র সচিব ও আইজিপিকে।
অভিযোগে বলা হয়, সমিতির কর্মচারী ইমন ও লিটন কর্তৃক সদস্যদের টাকা আত্মসাতের ঘটনা জানাজানির পর লিটন চাকরি ছেড়ে দেয়। তবে ইমন আত্মসাৎকৃত টাকা ফেরত দেয়ার কথা বলে ১৬ জুলাই সন্ধ্যায় সভাপতি এনামুলকে কাশিয়াডাঙ্গা থানা সংলগ্ন সমিতির অফিসে যেতে বলে। তিনি সমিতির অফিসে গেলে কাশিয়াডাঙ্গা থানার এএসআই সোহেল রানাসহ তিনজন পুলিশ তার মোবাইল কেড়ে নেন। এরপর তাকে থানার আটকে রেখে এএসআই সোহেল রানা তাকে অকথ্যাভাষায় গালাগাল করে বলেন, ‘এক সদস্যের থেকে ৫ লক্ষ টাকা নিয়েছেন। এ নিয়ে কাশিয়াডাঙ্গা থানায় জি.ডি রয়েছে। অভিযোগকারীর এখনই ৫ লক্ষ টাকা ফেরত দিতে হবে। তিনি আমানত নেয়ার ঘটনা মিথ্যা এবং টাকা দিতে অস্বীকার করলে এএসআই সোহেল রানা বলেন, ‘কোন তারিখে টাকা ফেরত দিবে, তা তিনশত টাকার স্ট্যাম্পে লিখে দিতে হবে।’ এরপর এএসআই সোহেল রানা মোবাইলে ফোন করে একজনকে ডাকেন। অল্প সময়ের মধ্যে কথিত অভিযোগকারী ও স্বাক্ষীসহ কয়েকজন থানায় উপস্থিত হন। এসময় এএসআই সোহেল রানা কথিত অভিযোগকারীদের নিয়ে তিনশত টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প আনিয়ে তাতে কথিত পাওনা ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা পরিশোধের চুক্তিকপত্র লিখে তাতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেন। তবে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়ার পর কথিত অভিযোগকারী এনামুলের কাছে দুই লক্ষ টাকা দাবি করেন। এরপর এএসআই সোহেল রানার কথামত তার লোকজনের পাহারায় সভাপতিকে বাসায় পাঠিয়ে ওই দুই কর্মচারীর জমাকৃত চেক ফেরত দিতে বাধ্য করেন। পরে সমিতির একজন সদস্য দিপু তার মোবাইলে বারবার ফোন করছিলেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে এএসআই সোহেল রানা ফোনটি ফেরত দিলে তিনি ফোন ব্যাক করে কাশিয়াডাঙ্গা থানায় ঝামেলার কথা বললে সে জনৈক সনেটসহ থানায় যায়। তারা এএসআই সোহেল রানার সাথে একান্তে কথা বলার পর ঝামেলা থেকে মুক্তির জন্য নগদ ৫০ হাজার টাকা দিতে বলে। এক পর্যায়ে তারা টাকার জন্য দিপুর সাথে তাকে দ্বিতীয়বার বাসায় পাঠায়। এদিকে এনামুল ৩০ হাজার টাকা দিপুকে দেয়। ইতোমধ্যে সনেট ও এএসআই সোহেল রানাসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজন নগরীর কোর্টস্টেশন এলাকায় যান।
সেখানে দিপু তাকে বলেন, এএসআই সোহেলের ডিমান্ড ৫০ হাজার টাকাই। এসময় নিজের পকেট থেকে ৫ হাজার টাকাসহ এএসআই সোহেল রানার হাতে ৩৫ হাজার টাকা দেয়ার কথা বলে দিপু এএসআই সোহেল রানার হাতে ৫ হাজার টাকা দেয়। আরও ৪৫ হাজার টাকায় পরের দিন দিতে বলে তাকে ছেড়ে দেয়। ঘটনাস্থল কাশিয়াডাঙ্গা থানা হওয়ায় এবং এএসআই ঐ থানায় কর্মরত হওয়ায় তিনি সেখানে অভিযোগ করতে পারেন নি।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত এএসআই সোহেল রানা প্রথমে বলেন, এ ব্যাপারে আমি কিছু বলবো না। তবে স্ট্যাম্পে জোরপূর্বক স্বাক্ষরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, থানার সাথেই ওই সমিতির অফিস, সেখানেই ঘটনা। তিনি ওই স্ট্যাম্প উদ্ধার করেছেন। যোগাযোগ করা হলে আরএমপির মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপ-কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুছ বলেন, অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।