রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের ছয়টি গ্রাম পদ্মার পানি বাড়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে করে দুর্ভোগে পড়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজবাড়ী শহরের উত্তরদিকে পদ্মা নদী। সদর উপজেলা শহর থেকে পদ্মার নদীর গোদার বাজার ঘাটের দুরত্ব তিন কিলোমিটার। গোদার বাজার ঘাট থেকে ইঞ্চিন চালিত ট্রলারে এসব গ্রামে প্রবেশ করতে অন্তত পৌনে একঘন্টা সময় লাগে। আর স্রােত থাকলে আরও বেশি সময় লাগে। গ্রামগুলো হলো আমবাড়িয়া, চর আমবাড়িয়া, মৌকুড়ি, চর মৌকুড়ি, কাঠুরিয়া ও চর বহরাকাঠুরিয়া। মূল নদীর ভেতরের দিকে গ্রাম হওয়ায় এদিকে কেউ একটা আসে না। কারণ নৌকা বা ট্রলার ছাড়া গ্রামে পৌছানো যায় না। নদীতে পানি কম বা স্রােত না থাকলে সাধারণ নৌকায় আসা যায়। কিন্তু পানি বেশি বা স্রােত থাকলে ট্রলার বা বড় নৌকার প্রয়োজন হয়।
কাঠুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা শফিকুল সরদার বলেন, আট-দশ দিন ধরে চারপাশে পানি ঘিরে রেখেছে। সবকিছু পানিতে তলিয়ে গেছে। আগাম পানি আসায় খেতের কোনো ফসল ঘরে তুলতে পারি নাই। পরিবারের সদস্য নিয়ে খুব কষ্টে আছি। তারপরে রয়েছে বাড়িতে গবাদিপশু।
আমবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা জিলাল মন্ডল বলেন, কৃষি কাজ করি। চর এলাকায় ফসল ভালো হয়। আমাদের সংসার মোটামুটি চলে যায়। কারো কাছে হাতপাততে হয় না। কিন্তু এবার একটু আগেই পানি চলে এসেছে। খেতের কোনো ফসল ঠিকমতো ঘরে তুলতে পারলাম না। পরিবার-পরিজন নিয়ে খুব কষ্টে আছি। গরু-ছাগল বেড়িবাধের পাশে আত্মীয় বাড়িতে রেখে এসেছি। বন্যা গেলে নিয়ে আসবো।
একইগ্রামের বাসিন্দা খালেদা বেগম বলেন, বাড়িতে ছোট ছোট ছেলেমেয়ে। নাতি-নাতনিও রয়েছে। পানিতে সব তলিয়ে গেছে। বাড়িতে খাওয়ার কিছু নেই। আজ ত্রান পেয়েছি। কয়েকদিন ভালো ভাবে চলতে পারবো। বাড়িতে কচুরিপানি জড়ো করে তার ওপর গরু-ছাগল রেখেছি। ফুলি বেগম বলেন, আমাদের বাড়িতে পানিতে থৈ থৈ করছে। মেয়ের দুই বাচ্চা রয়েছে। বাড়িতে থাকার জায়গা নেই। একারনে আজ কয়েকদিন নৌকাতে থাকি। রাতে নৌকাতেই ঘুমাই। নৌকায় ছৈ পেতেছি। বৃষ্টিতে আসলে যাতে কোনো মত মাথা গোঁজার ঠাঁই পাই।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, রাজবাড়ীর তিনটি পয়েন্টেই পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রাজবাড়ী সদর উপজেলা মহেন্দ্রপুর পয়েন্টে পানি দুই সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাংশা উপজেলার সেনগ্রাম পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে চার সেন্টিমিটার। গতকাল পানি বিদৎসীমার ৬২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে দৌলৎদিয়া পয়েন্টে পানি দুই সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ১০৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলাম শেখ বলেন, রাজবাড়ীর তিনটি পয়েন্টে পানি প্রবাহের মাত্রা পরিমাপ করা হয়। এরমধ্যে সদর ও পাংশায় উপজেলার পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। অপরদিকে দৌলৎদিয়া পয়েন্টে পানি দুই সেন্টিমিটার কমেছে। সার্বিক ভাবে পানি বৃদ্ধির পরিমান প্রায় স্থির রয়েছে। অল্প দুই-এক স্থানে হালকা ভাঙন শুরু হয়েছে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাঈদুজ্জামান খান বলেন, মিজানপুরের চর এলাকায় কয়েকটি গ্রাম সরেজমিন গিয়েছিলাম। বাসিন্দারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বরাট ইউনিয়নের কারিতাস আশ্রয় কেন্দ্র ও আকিরুন্নেছা মাদ্রাসায় ৭৫টি পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে।