ঈদণ্ডউল-আযহার আর মাত্র বাকি আছে ৯ দিন। কিন্তু সরাইলে এখনো জমে ওঠছে না পশুর হাট। বাজারে পশুর তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা কম। দাম ছাড়ছেন না বিক্রেতারা। আর ক্রয়ে তেমন একটা আগ্রহ নেই ক্রেতাদের। একক থেকে অংশীদার ভিত্তির কোরবাণী বেশী এবার। এজন্যই হয়ত অপেক্ষা করছেন ক্রেতারা। বাজারে অভিযান চালিয়ে মুখে মাস্ক না থাকায় একাধিক ব্যক্তিকে ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ফারজানা প্রিয়াংকা জরিমানাও করেছেন। গত সোমবার সরাইল পশুর হাট ঘুরে এমনটাই দেখা যায়। এর জন্য করোনার কারণে মানুষের অর্থনৈতিক দূরাবস্থাকেই দায়ী করছেন বাজারের ইজাদাররা। সরাইলে ৪টি অস্থায়ী পশুর হাটের চুড়ান্ত অনুমতি পক্রিয়াধীন আছে।
সরজমিনে সরাইল সদরের পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, সোমবারের হাট এমনিতেই সব সময় থাকে জমজমাট। আর কোরবাণীর ঈদের আগে তো হাটের কোথাও সরিষা ছাড়ার জায়গা থাকে না। সাথের লোকজন না পেলে মাইকে ঘোষণা দিতে হয়। ঈদের ২/৩ সপ্তাহ আগে বাজার নির্দিষ্ট জায়গা ছেড়ে অন্যদিকে সম্প্রসারিত হতে বাধ্য হয়। কিন্তু করোনা ভাইরাসের প্রভাবে এবার সরাইল সদরের পশুর হাটের চিত্র পাল্টে গেছে। হারিয়ে ফেলেছে পূরাতন জৌলুস। প্রচুর পরিমাণ পশু ওঠলেও হাটে ক্রেতার সংখ্যা ছিল একেবারেই নগণ্য। আর গরূর চেয়ে মহিষের সংখ্যা বেশী। গরূ ছাগলের কাছে কিছু ক্রেতার উপস্থিতি ছিল। মহিষের হাটে ক্রেতার উপস্থিতি ছিল খুবই কম। বাজারে বলদ ও ভারতের কোন গরূ চোখে পড়েনি। তবে এমন অবস্থায় পশুর দাম ছাড়ছেন না বিক্রেতারা। পরিস্থিতি ভাল না। এবার অনেকেই কোরবাণী দিবে না। অর্থাভাবে একক কোরবাণীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। বৃদ্ধি পাচ্ছে অংশিদারিত্বের কোরবাণী। ফলে পশু ক্রয়ের চাহিদা কমে যাচ্ছে। একসময় পশু হবে সস্তা। এমন সব ভেবে এখনই পশু ক্রয় করছেন না অধিকাংশ ক্রেতা। এত কিছুর পরও পশুর দাম ছাড়ছেন না বিক্রেতারা। বেপারী রহমান মিয়া। ৪টি ষাঁড় নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। প্রায় তিন মণ ওজনের লাল রং-এর ষাড়টির দাম চাইলেন ৮৫ হাজার টাকা। ক্রেতা অনেক ভেবে চিন্তে দাম হাকালেন ৫০ হাজার টাকা। বিষয়টি আমলেই নেননি বেপারী। পরে জানালেন, গত দুই হাটে গরূ তুলছি। ক্রয় মূল্যের ধারে কাছের দামও বলছেন না ক্রেতারা। তাই আর নতুন করে লাভের আশায় গরূ ক্রয় করছি না। এবার শেষ পর্যন্ত আমাদের কাঁদতেই হয় কিনা খোদাই জানেন। মহিষের হাটের পাইকার মন্টু মিয়া বলেন, সকাল থেকে এতগুলো মহিষ নিয়ে বসে রইলাম। এখন ৪ টা বাজে। মাত্র ২টি মহিষের দাম জিজ্ঞেস করেছেন। তাও ক্রেতার ভাব দেখে বুঝেছি ওঁরা ক্রয় করবেন না। ঘুরে বাজার বুঝতে এসেছেন। তবে সন্ধ্যার আগ মূহুর্তে কয়েকটি ছোট আকৃতির ষাঁড় বিক্রি হয়েছে। ৪০/৫০ ও ৫৫ হাজার টাকা দামে। পশু বিক্রি কম হওয়ায় ক্ষতির টেনশনে পড়েছেন ইজাদাররা। আর মাত্র দুটি হাট বাকি আছে। এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য টাকার হাসিল কাটতে পারেননি ইজাদাররা। নির্বাহী কর্মকর্তার দফতর সূত্র জানায়, সরাইলের অরূয়াইল, আজবপুর, পানিশ্বর ইউনিয়নের দেওবাড়িয়া ও বেড়তলা এলাকায় অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর অনুমোদন পক্রিয়াধীন আছে। দ্রƒতই তারা অনুমতি পেয়ে যাবে।
সরাইল বাজারের ইজারাদারদের একজন মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, করোনার প্রভাবে এবার বাজারের অবস্থা খুবই খারাপ। এরপর বৃষ্টিও আমাদের বড় ধরণের ক্ষতি করছে। অর্থনৈতিক সমস্যায় অনেকেই এবার কোরবাণী দিবেন না। এবার বাজার ডাকের টাকাই ওঠবে না। সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ এস এম মোসা বলেন, করোনার কারণে ছোট খাট ব্যবসায়ী, প্রাইভেট চাকরিজীবীসহ সর্বক্ষেত্রই অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। তাই এবার কোরবাণী তুলনামূলক ভাবে অনেক কমে যাবে। সেই প্রভাবটাই পশুর হাটে পড়েছে। আর জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কার্যালয় থেকে সরাইলের ৪টি অস্থায়ী হাটের প্রস্তাবনা গত সোমবারে আমার দফতরে এসেছে।