অপেক্ষা শুধু সরকারি ছাড়পত্রের। তার পরেই অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনা-টিকার পরীক্ষানিরীক্ষা তথা হিউম্যান ট্রায়াল শুরু হয়ে যাবে ভারতে। একই সঙ্গে টিকার উৎপাদনও শুরু হয়ে যাবে। এমনই জানিয়েছে এই টিকা-গবেষণায় অংশীদার ভারতীয় সংস্থা তথা বিশ্বের বৃহত্তম টিকা প্রস্তুতকারক সংস্থা সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া। সেরামের প্রধান আদর পুনাওয়ালা জানিয়েছেন, “অক্সফোর্ডের টিকায় বিপুল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। সে জন্য আমরা যারপরনাই খুশি।” পুনাওয়ালা জানিয়েছেন, দিন কয়েকের মধ্যেই লাইসেন্সের জন্য ভারতীয় নিয়ামক সংস্থাগুলির কাছে আবেদন জানাবেন তাঁরা। অনুমতি দিলেই ট্রায়াল এবং ভ্যাকসিন উৎপাদন একই সঙ্গে শুরু হয়ে যাবে। ল্যানসেটে প্রকাশিত হল প্রথম দুই ধাপের পরীক্ষার ফল বস্তুত, মানবশরীরে এই কোভিড ১৯ (ঈড়ারফ ১৯) টিকার প্রথম ও দ্বিতীয় দফার যে পরীক্ষা হয়েছিল (যঁসধহ ঃৎরধষ) সোমবার তার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে দ্য ল্যানসেট জার্নালে (ঞযব খধহপবঃ ঔড়ঁৎহধষ)।এই পরীক্ষায় ১১০৭ জনের শরীরে টিকা প্রয়োগ করা হয়। দেখা যায়, করোনাভাইরাস ঠেকাতে এই টিকা শরীরে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডি ও টি সেল তৈরি করতে সক্ষম। টিকার একটা ডোজেই শরীরে টি-কোষ সক্রিয় হয়েছে। ভ্যাকসিন যাদের দেওয়া হয়েছে তাদের ৯০ শতাংশের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। পর্যাপ্ত অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেড়েছে। প্রথম পর্যায়ের ট্রায়ালের রিপোর্ট দেখে ইতিমধ্যেই দশ কোটি ভ্যাকসিনের অর্ডার দিয়ে দিয়েছে ব্রিটিশ সরকার। অল্প পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেবে এই টিকা নিরাপদ। তবে কিছু পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া আছে। তবে সেই সব পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া বিপজ্জনক নয়। ৭০ শতাংশ মানুষের হয় জ¦র বা মাথাব্যথা হতে পারে। গবেষকরা জানিয়েছেন, প্যারাসিটামলের সাহায্যে এই পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার মোকাবিলা করা যাবে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সারা গিলবার্ট বলেন, “এই টিকা যে কোভিড ১৯ অতিমারির পুরোপুরি মোকাবিলা করতে পারবে সেটা নিশ্চিত করে বলার আগে আরও অনেক কাজ করতে হবে। তবে প্রাথমিক ভাবে যে ফল পাওয়া গিয়েছে তা খুবই আশাব্যঞ্জক। তৃতীয় দফার পরীক্ষা : অক্সফোর্ডের এই টিকার তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল চলছে ব্রাজিল ও সাউথ আফ্রিকাতে। ব্রাজিলে করোনার হটস্পট সাও পাওলো ও রিও দে জেনিরোতে তিন হাজারজনকে টিকা দেওয়া হয়। অন্যদিকে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির তত্ত্বাবধানেই সাউথ আফ্রিকায় এই টিকার হিউম্যান ট্রায়াল শুরু করে উইটওয়াটারস্র্যান্ড ইউনিভার্সিটি তথা উইটস। বেছে নেওয়া হয় ২ হাজার জন স্বেচ্ছাসেবককে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দাবি, এই পরীক্ষানিরীক্ষাতেও আশাব্যঞ্জক ফল পাওয়া যাচ্ছে। কোভ্যাকসিন’-এর পরীক্ষা: মানবশরীরে স্বদেশে প্রস্তুত করোনা টিকা ‘কোভ্যাকসিন’ (ঈড়াধীরহ)-এর পরীক্ষা এইমস-এ হতে চলেছে। এ প্রসঙ্গে ডা. গুলেরিয়া বলেন, তিন দফায় পরীক্ষা হবে। তিনি জানান, “প্রথম দফার পরীক্ষা হবে তাঁদের উপর যাঁদের বয়স ১৮ থেকে ৫৫-এর মধ্যে এবং কোনো কো-মর্বিডিটি নেই। এই পরীক্ষা করা হবে ৩৭৫ জনের শরীরে। দ্বিতীয় দফার পরীক্ষা হবে ১২ থেকে ৬৫ বছর বয়স এমন ৭৫০ জনের শরীরে।” এই টিকার কার্যকারিতা ও ফলপ্রসূতা পরীক্ষা করার জন্য তৃতীয় দফার ট্রায়ালও হবে এবং সেটা এইমস-এ হবে বলে জানান ডিরেক্টর।
সূত্র: খবরঅনলাইন