জামালপুরে তৃতীয় দফা বন্যায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে বানভাসি মানুষ। এ পর্যন্ত বন্যায় জেলার প্রায় দশ লক্ষাধিক মানুষ প্রায় ২৫দিন যাবত পানি বন্দি হয়ে পরেছে। গত ২৪ ঘন্টায় যমুনা নদীর পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ৩ সেন্টিামটার বৃদ্ধি পেয়ে জামালপুর ফেরীঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো.আবু সাঈদ ও পানি মাপক গেজ পাঠক,আব্দুল মান্নান।
তৃতীয় দফা বন্যায় জেলার ৭টি উপজেলার ৬৭৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানি বন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ১০ লক্ষাধিক মানুষ। টানা প্রায় ২৫দিন পানি বন্দি নিন্ম আয়ের মানুষুষ গুলো চরম দুর্ভোগে পড়েছে। একদিকে প্রাণঘাতি করোনা থাবা, অপর দিকে দীর্ঘস্থায়ী বন্যা, এ যেন মরার উপর খাড়া গা। অন্যান্য বছরে বন্যা দেখা দিলে অসহায় মানুষের পাশের্^ দাঁড়িয়েছেন সমাজের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনসহ অর্থবৃত্তবান মানুষ। কিন্তু এবারের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। কারণ করোনার প্রভাবে এবার বেসরকারী ত্রান তৎপরতার দৃশ্য তেমন চোখে পড়েনি। করোনায় প্রভাবে এ বৎসর অনেকের আয় কমেছে,আবার অনেক বৃত্তশালীরা করোনার ভয়ে ত্রান সহায়তা থেকে নিজেকে বিরত রেখেছেন। এদিকে তৃতীয়'দফায় ২৫ দিনের বন্যায় পানিবন্দি মানুষসহ গো-বাদি পশুর খাদ্য সংকট চরমে পৌঁছিছে। এমন পরিস্থিতিতে শুধু সরকারি ত্রান বিতরণে চলছে বানভাসী মানুষের ভাগ্যে জুটছে দু’এক বেলার খাবার।
এদিকে জেলার ত্রাণ ও পূণর্বাসন কর্মকর্তা মো.নায়েব আলী জানান,বন্যায় সব চেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা। এ উপজেলায় দুই লক্ষ ১১ হাজার ৫০২ জন মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। এ ছাড়াও বন্যার পানিতে মাদারগঞ্জ উপজেলায় এক লক্ষ ৯৮ হাজার ২৭০ জন,মেলান্দহ উপজেলায় এক লক্ষ ৫১ হাজার ৯১১ জন,সরিষাবাড়ী উপজেলায় এক লক্ষ ৪৭ হাজার ৮৮৭ জন, ইসলামপুর উপজেলায় এক লক্ষ ৪৩ হাজার ৭৫০ জন,বকশীগঞ্জ উপজেলায় ৭৩ হাজার ৮৬৪ জন এবং জামালপুর সদর উপজেলায় ৬৭ হাজার ৫২৩ জন মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। ৭ উপজেলায় প্রায় ১০লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন। জামালপুরে এ বছর বন্যায় পানিতে ডুবে এ পর্যন্ত দুইজন শিশুসহ ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। অপর দিকে জেলা মৎস কর্মকর্তা কায়সার মুহাম্মদ মঈনুল হাসান জানান,এবারের বন্যায় জেলার মৎস জীবিদের প্রায় দশ কোটি টাকার মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক ও জেলার ত্রাণ ও পূণর্বাসন অফিস সুত্রে জানাযায়,বন্যার্তদের মাঝে এ পর্যন্ত ৪১০ মেট্রিক টন চাল,১৯ লাখ টাকা,৪ হাজার ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার,দুই লক্ষ টাকার শিশু খাদ্য ও দুই লক্ষ টাকার গো-খাদ্য এবং ভিজিএফ কার্ডধারীদের মাঝে আরো তিন হাজার ৪০৮ মেট্রিক টন চাল বিতরণ কাজ চলমান রয়েছে।