পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় করোনা ভাইরাস সংক্রমন রোধে গঠিত হয়েছে কোভিড-১৯ সেচ্ছাসেবী গ্রুপ। এ গ্রুপের সদস্যরা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়-য়া শিক্ষার্থী। সেচ্ছাসেবী এ গ্রুপটি কোরবানি ঈদে যাতে পশুর বাজার, জনসমাগম স্থানে মানুষ স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলে এবং পশুর বর্জ্য নির্ধারিত স্থানে ফেলে সেই বিষয়টি তদারকি ছাড়াও করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি ও পরিবার যাতে কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করে সে বিষয়টি নিশ্চিত করবে। কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর মেয়রের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার বিকালে পৌর শহরের বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ী ও মানুষকে সচেতন করতে কার্যক্রম শুরু করে। শুক্রবার থেকে শহরের সকল ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা মাস্ক পরিধান না করলে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়।
প্রশাসনের কঠোর নিষেধাজ্ঞা সত্বেও কলাপাড়ার বিভিন্ন হাট বাজারে স্বাস্থ্য বিধি না মেনে সাপ্তাহিক হাট বসছে। এসব বাজারের ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের অধিকাংশ সামাজিক দূরত্ব না মানাসহ মাস্ক পড়তে অনীহা প্রকাশ করছে। এ কারণে কলাপাড়ায় করোনা সংক্রমন দিনদিনই বাড়ছে। এ সংক্রমন যাতে কোরবানীতে না বৃদ্ধি পায় এজন্য পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলরের নেতৃত্বে ১১ সদস্য বিশিষ্ট এ সেচ্ছাসেবক কমিটি গঠিত হয়।
কলাপাড়া স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী ২৩ জুলাই পর্যন্ত করোনা পজেটিভ সনাক্ত হয়েছে ৮৮ জন। করোনায় অক্রান্ত হয়ে মারা গেছে তিন জন। এ সময়ে ৬১০ জনের নমুনা সংগ্রহ করলেও রিপোর্ট পাওয়া গেছে ৫৬৪ জনের। ইতোমধ্যে শহরের দুটি স্পটকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে লকডাউন করা হলেও তা মানতে অনীহা সাধারণ মানুষ। এই প্রেক্ষাপটে কোরবানীর ঈদ উপলক্ষে যাতে করোনার সংক্রমন না ঘটে এ কলাপাড়া পৌর শহরে গঠিত হয়েছে এ কোভিড ১৯ সেচ্ছাসেবী গ্রুপ। স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ¦ মহিব্বুর রহমানের উদ্যোগে ইঞ্জিনিয়ার তৌহিদুর রহমান ফাউন্ডেশনের সহযোগীতায় উপজেলা প্রশাসন গঠন করে এ সেচ্ছাসেবী সংগঠন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর মেয়রের নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার বিকালে এ সংগঠনের সদস্যরা পৌর শহরের নয়টি ওয়ার্ডে পৃথকভাবে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে কার্যক্রম শুরু করে। করোনায় অক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তির স্বজনদের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত ও মানুষকে বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ করে এবং মাইকিং করে সবাইকে সচেতন করে।
সংগঠনের সেচ্ছাসেবক রাহাত, শান্ত,শুভ ও রুদ্র জানায়, কোরবানি ঈদে যাতে বাজারগুলোতে মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে এবং নির্দিষ্ট স্পটে পশুর বর্জ্য ফেলা হয় এ বিষয়টি তারা তদারকি করবেন উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে। এ ছাড়া যেসব স্থানে প্রশাসন লকডাউন করবে সেসব স্থানে নির্ধারিত পরিবারকে সব ধরণের সহায়তায় কাজ করবে তারা।
পৌরসভার সাত নং ওয়ার্ডের সমন্বয়কারী কাউন্সিলর মাহবুব আলম বলেন, তাঁদের মুল উদ্দেশ্য শহরকে নিরাপদ ও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। শহরে যাতে করোনা সংক্রমন বিস্তার না ঘটে এজন্য মাঠে থেকে নয়টি ওয়ার্ডে ও পশুর বাজারে কাজ করবে ভলান্টিয়াররা।
কলাপাড়া পৌরসভার মেয়র বিপুল চন্দ্র হাওলাদার বলেন, সরকার সবাইকে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে। শুক্রবার থেকে পৌরশহরে কেউ মাস্ক পরিধান না করে বাইরে বের হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এজন্য সকল ব্যবসায়ীদেরও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সেচ্ছাসেবকরা ভলান্টিয়ার হিসেবে এ গোটা বিষয়পি তদারকি করবে। তাদের সাথে থাকবে পৌর কাউন্সিলররা।
গত এক সপ্তাহে হঠাৎ করে কুয়াকাটা পৌরসভার বিভিন্ন হোটেলে কোয়ার্টোইনে থাকা ১৮ জনের করোনা সনাক্ত হওয়ায় কলাপাড়া পৌর শহরকে নিরাপদ রাখতে এ উদ্যোগ নেয় পৌর কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা প্রশাসন। এ সময় উপজেলা প্রশাসন থেকে কোয়ার্টোইনে থাকা পরিবারকে খাদ্য সহায়তা ছাড়াও তাদের সব ধরনের সহায়তা প্রদান করা হবে এ সেচ্ছাসেবদের মাধ্যমে। পর্যায়ক্রমে গোটা উপজেলায় এ সংগঠন গঠন করা হবে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয।
এ ব্যাপারে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক বলেন-কোরবানী ঈদে যাতে করোনার সংক্রমন বিস্তার না ঘটে সে লক্ষ্যে এ সেচ্ছাসেবীরা কাজ করবে। শহর, বাজার পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখাসহ মানুষ যাতে সচেতন হয় সে বিষয়টি দেখবে এ সেচ্ছাসেবীরা। স্থানীয় সংসদ সদস্যের নির্দেশে কলাপাড়াকে করোনা মুক্ত রাখতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।