চট্টগ্রামে মাইডাস ফাইন্যান্সিং লিমিটেড কর্তৃক গ্রাহক হয়রানি এখন চরমে। ওই আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি ঋণ দেয়ার নামে এই করোনার মধ্যেও গ্রাহকদের হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে। ওই প্রতিষ্ঠানের মামলার ভয়ে ইতোমধ্যে বহু ঋণগ্রহীতা বসতভিটাও ছেড়েছেন। কেউ কেউ স্বপরিবারে পালিয়ে যাযাবরের মত অন্যত্র দিনযাপন করছেন। ফলে তাদের স্কুল-কলেজ পড়-য়া সন্তানরাও শিক্ষা এবং চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এই প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ডে সুধী সমাজও হতাশ। ভুক্তভোগীরা দরিদ্র হওয়ায় টাকার অভাবে এবং ভয়ে হয়রানির মামলাও করতে পারছেন না।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মাইডাস ফাইন্যান্সিং লিমিটেডের প্রধান কার্যালয় হচ্ছে নাহার গ্রীণ সামিট (৩য়তলা), বাড়ী-৪৩, রোড-১৬(নতুন) ২৭(পুরাতন), ধানম-ি, ঢাকা। এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি বিগত ১০বছরে প্রতি জনকে ১লক্ষ থেকে শুরু করে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ দিয়েছে। এতে সীতাকু-েই অন্তত শত কোটি টাকার ঋণ দেওয়া হয়। এর মধ্যে কোম্পানীর সীতাকু-ের নামার বাজারস্থ অফিসের ঋণ গ্রহীতার সংখ্যাই বেশি। ওই ঋণ দেয়ার সময় ঋণ গ্রহীতার কাছ থেকে প্রতি বছরে ১২টি স্বাক্ষরিত ব্লাঙ্ক চেক নেওয়া হয়। পরে ঋণগ্রহীতা ব্যাংকে তাঁর নিজস্ব একাউন্টে মাসিক কিস্তির টাকা জমা দেন। সেই টাকা মাইডাস কর্তৃপক্ষ উত্তোলন করেন। এক্ষেত্রে কোন ঋণগ্রহীতা এক কিস্তির টাকাও জমা না দিলে পরবর্তীতে পূর্বালী ও এবি ব্যাংকে ঋণ গ্রহীতার কাছ থেকে পূর্বে আদায়কৃত চেকে মাইডাস কর্তৃপক্ষ মনগড়া টাকার অঙ্ক লিখে ব্যাংকে চেক ডিজঅনার করেন। এতে ১লক্ষ পাওনা হলে ৫ লক্ষ, ৫ লক্ষ হলে ২০ লক্ষ এবং ২০ লক্ষ হলে ৮০লক্ষ টাকা চক্রবৃদ্ধি হারে আদায় করার লক্ষ্যে ইচ্ছামত এসব চেক লিখে নেন তারা।
এছাড়াও কোম্পানীর অডিট অফিসারেরা গ্রাহক থেকে প্রতি লাখে ৭হাজার টাকা ঘুষও নেয়। ঋণগ্রহীতারা জানায়, ইতোমধ্যে ওই টাকা আদায় করার জন্য চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালতে অন্তত এক হাজার ষড়যন্ত্রমূলক চেক প্রতারণা মামলা করেছে কর্তৃপক্ষ। ফলে টাকা দিতে না পেরে ভয়ে ইতোমধ্যে কয়েক হাজার ঋণগ্রহীতা বসতভিটা ছেড়েছেন। স্বপরিবারে পালিয়ে যাযাবরের মত দিনযাপন করছেন অন্যত্র। তাদের স্কুল-কলেজ পড়-য়া সন্তানরাও শিক্ষা এবং চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দিশেহারা এসব ঋণ গ্রহীতারা মাঝে মাঝে চট্টগ্রামের আদালতে চেক ডিজঅনার মামলায় হাজিরা দিতে আসেন। সেখানেই সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন তাদের হয়রানির এসব তথ্য। পাহাড়তলীর কাপড় ব্যবসায়ী নুর মোহাম্মদ সওদাঘর, হাজী মিয়াধন, ভবতোষ বাবু, বিজয় বাবু ও সবজি ব্যবসায়ী আবদুর রব সীতাকু- অফিস থেকে ঋণ নিয়েছেন। এখন তারা এলাকা থেকে পালিয়ে গেছেন।
স্বাক্ষরিত কারও কাছ থেকে ব্লাঙ্ক চেক নেয়া বেআইনী হলেও এই আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে ব্যাংকের আইনের অপব্যাখ্যা দিয়ে এমন ধরণের হয়রানিমূলক চেক নিচ্ছেন। করোনা ভাইরাসের মধ্যেও তারা গ্রাহকদের ওপর চরম অত্যাচার চালাচ্ছেন। গ্রাহকদের কারও কারও কাছ থেকে ঋণের কিস্তি বাবদ এবি ব্যাংকের চেক নিয়ে সেটি পূর্বালী ব্যাংকে ডিজঅনার করেন। ওই বিষয়ে গণমাধ্যমের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, র্যাবের মহাপরিচালক, পুলিশের আইজি ও দুদকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট তদন্তপূর্বক আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের জোরালো দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। ওদিকে মাইডাসের সীতাকু- শাখার ম্যানেজার মো. ইদ্রিস মিয়া বলেন, এসব অভিযোগ কাল্পনিক। ঋণ খেলাপিরা অপপ্রচার চালাচ্ছেন। আমরা গ্রাহকদের হয়রানি করার প্রশ্নই আসেনা।