রংপুরের পীরগাছায় ৩২টি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের ৪ শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকা গত ৫ মাস ধরে মানবেতর জীবন যাপন করছে। করোনা ভাইরাসের কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে বে-সরকারি ভাবে পরিচালিত এসব কিন্টারগার্টেন স্কুল। দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ থাকা এসব কিন্টারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারীরা পড়েছেন চরম বেকায়দায়। বেতন-ভাতা না পেয়ে অনেকের পেশা বদল করে অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়লেও বেশির ভাগ শিক্ষক দূর্বিসহ জীবন কাটাচ্ছেন। অন্যদিকে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ভাড়ায় পরিচালিত অধিকাংশ স্কুল। সরকারি সুযোগ সুবিধা না থাকায় বন্ধ এসব স্কুলের প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে।
নর্থবেঙ্গল কিন্ডারগার্টেন এ- প্রি-ক্যাডেট স্কুল সোসাইটির উপজেলা সাধারণ সম্পাদক ও পাওটানাহাট কিন্ডারগার্টেন স্কুলের পরিচালক শামসুজ্জোহা চঞ্চল বলেন, কিন্টারগার্টেন স্কুলগুলোর একমাত্র আয়ের উৎস ছিল শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন। স্কুলগুলো বন্ধ থাকায় বেতনও বন্ধ রয়েছে। অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের পড়ালেখায় বিকল্প ব্যবস্থায় চালিয়ে নিলেও কিন্টারগার্টেন স্কুলের শিক্ষকরা রয়েছে চরম বেকায়দায়।
বৃহত্তর রংপুর কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের উপজেলা সভাপতি ও আবদুস কুদ্দুছ কিন্ডারগার্টেনের পরিচালক খোরশেদ কবির বাবুল বলেন, কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোতে অনেক বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছিল। অথচ তারা আজ বেকার। আমরা সরকারকে অনেক চিঠি, স্মারকলিপি দিয়েছি কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।
উপজেলার পাকারমাথায় অবস্থিত মেধাবিকাশ শিক্ষা নিকেতনের পরিচালক শিশির কুমার বলেন, বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান ভাড়ায় চালিত। মালিকেরা ভাড়ার টাকা দিতে না পারায় অনেক প্রতিষ্ঠান বাড়ী ছেড়ে দেয়ার মতো হয়ে যাচ্ছে। বাড়ির মালিকরা ভাড়ার টাকার জন্য চাপ দিচ্ছেন। স্কুলগুলো বন্ধ থাকায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে অবকাঠামোসহ আসবাবপত্র।
পীরগাছা সদরের আবদুস কুদ্দুছ কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক মোরর্শেদা বেগম, রোকেয়া বেগম বলেন, কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোর শিক্ষকরাই মেধাবী শিক্ষার্থী জন্ম দেবার কারিগর। অথচ তারা আজ অবহেলিত। সরকার আমাদের দিকে তাকাচ্ছে না। আরেক শিক্ষক আনছার আলী বলেন, আমি ১০/১২ বছর ধরে এই কিন্টারগার্টেনে চাকুরী করে সংসার চালিয়েছি। গত ৫ মাস ধরে স্কুল বন্ধ থাকায় কুলহারা পাখির মত ঘুরে বেড়াচ্ছি। এই বয়সে ভারী কাজ করতে পারি না। তাই বাধ্য হয়ে ছোট একটি পান-সিগারেটের দোকান দিয়ে কোন মত জীবন যাপন করছি।
এদিকে এসব কিন্টারগার্টেন স্কুলের পক্ষ থেকে শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য প্রণোদনা চেয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি প্রদান করা হলেও কিছুই জোটেনি তাদের ভাগ্যে। তারা সরকারের কাছে প্রণোদনা বা সহজ শর্তে ঋণ দানের ব্যবস্থা করার আহবান জানান।
এ বিষয়ে পীরগাছা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আতিকুর রহমান বলেন, কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোর জন্য এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। যদি আসে তাহলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।