দেশের উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা দিয়েছে বন্যা। বন্যার পূর্ভাভাসে বরিশালের আগৈলঝাড়ার আড়াই লাখ জনগনের মধ্যে দেখা দিয়েছে আগাম বন্যার আশংকা।
আগৈলঝাড়াকে স্থায়ীভাবে বন্যা মুক্ত রাখতে স্থানীয় প্রশাসনের প্রস্তাবিত আটদফা প্রকল্প বাস্তবায়নের শুপারিশ একযুগেও বাস্তবায়ন না হওয়ায় বর্ষা মৌসুম আসলেই পাহাড়ি ঢলে বন্যার আশংকায় ফসল, মাছের ঘের, পান বরজ ও ঘর বাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় উদ্বেগ আর আশংকায় দিনাতিপাত করছেন এ উপজেলার জনগন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের ১৫৫.৪ বর্গ কিলোমিটার নিন্মাঞ্চলের জলাবদ্ধতা মুক্ত রাখতে ও বর্ষা মৌসুমে উত্তরাঞ্চলের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল ও নদীর পানি ঢুকে প্রায় বছরই বর্ষা মৌসুমে কৃত্রিম বন্যার সৃষ্টি হয়।
গত তিনদশক ধরে কৃত্রিম বন্যায় এলাকার প্রায় ২৬ হাজার কৃষক পরিবারসহ আড়াই লক্ষাধিক জনগনের উঠতি ফসল, মৎস্য সম্পদ, পশু সম্পদ, পান বরজসহ বিভিন্ন প্রকার সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে আসছে। একারণে বোরো চাষের পরে বন্যায় ফসলের ক্ষতির কথা চিন্তা করে উপজেলার চাষিরা জমিতে আউশ আবাদ করা থেকে বাধ্য হয়ে বিরত থাকছেন। ফলে এলাকার জমিগুলো এক ফসলীতে পরিণত হয়ে শুধুমাত্র বোরো চাষের উপর নির্ভরশীল হয়ে পরেছে। এক ফসলী জমির কারণে বর্ষা মৌসুমে মাঠের পর মাঠ অনাবাদি জমিতে ঘাষ ও জঙ্গলে ভরে থাকে। বোরো মৌসুমে ওই ঘাষ ও জঙ্গল পরিস্কার করতে চাষিদের গুনতে হয় অতিরিক্ত অর্থ।
উপজেলার কিছু এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেরী বাঁধ থাকলেও বন্যার পানি থেকে রেহাই পাচ্ছেন না কৃষক ও মৎস্যজীবিরা। কারণ, বন্যা দেখা দিলে বাঁধের বাহিরে পানির চাঁপ থাকায় পানির চাঁপ কমাতে বাঁধের বাহিরের ক্ষতিগ্রস্থরা রাতের আঁধারে বেরী বাঁধগুলো কেটে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে মুহুর্তের মধ্যে হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের অদূরদর্শিতা ও অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মান ও পানি নিস্কাসনের জন্য নির্মিত ইনলেট ও আউটলেটের কারণে বেরী বাঁধ বেষ্টিত এলাকার হাজার হাজার কৃষক পরিবারসহ সাধারণ জনগণের দুর্ভোগ বেড়েছে। পানি নিস্কাশনে অব্যবস্থাপনার কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি পানি হলেই উপজেলায় কৃত্রিম বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
উপজেলাকে স্থয়ীভাবে কৃত্রিম বন্যার কবল থেকে মুক্ত রাখতে এবং চাষিদের ফসল উৎপাদনের স্বার্থে প্রতিনিধিদের সহায়তায় উপজেলা প্রশাসন ২০০৭সালে সিডর পরবর্তি সময়ে উপজেলা ঘুরে উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ থেকে জেলা প্রকৌশল বিভাগে বিভিন্নস্থানে কালভার্ট, স্লুইজ গেইট নির্মাণের সাম্বাব্যতা যাচাইসহ প্রজেক্ট প্রপোজাল (পি.পি)’র মানচিত্র প্রেরণ করেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তৎকালিন নির্বাহী প্রকৌশলীর মাধ্যমেও পাউবো’র প্রধান প্রকৌশলীর কাছেও ওই আটদফা সুপারিশ সংক্রান্ত প্রজেক্ট হস্তান্তর করা হয়। ওই বছর ১৩ আগস্ট সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তৎকালিন মৎস্য ও পশু সম্পদ, বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রধান উপদেষ্টার পরামর্শক মানিক লাল সমদ্দার এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক, গৃহায়ন গণপুর্ত, ভূমি এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্যারিষ্টার মাইনুল হোসেন বরিশাল ডাক বাংলোয় অবস্থানকালীন সময়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা ওই প্রকল্প বাস্তবায়নের শুপারিশগুলো তাদের হাতে তুলে দিয়েছেন। তবে ওই প্রকল্প গত ১৩ বছরেও আর আলোর মুখ দেখেনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্র থেকে জানা গেছে, উপজেলার দাখিল করা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে অন্তত আট কোটি টাকার প্রয়োজন। উপজেলাকে স্থায়ীভাবে বন্যা মুক্ত করার সুপারিশগুলোর মধ্যে ছিল-বাকাল থেকে রাজিহার-মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেরী বাঁধে ১নং ব্রীজ সংলগ্ন খালের মুখ উন্মুক্ত করে নৌ-চলাচলের সুবিধাসহ ব্রিজ বা কালভার্ট নির্মাণ, বাকাল-রাজিহার-মাগুরা বেরি বাঁধের রাজিহার ব্রিজ সংলগ্ন রাজিহার-ত্রিমুখি খালের মুখ উন্মুক্ত করে নৌ-চলাচলের সুবিধাসহ ব্রীজ বা কালভার্ট নির্মাণ, বাশাইল-মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের মধ্যবর্তি স্থানে একটি বড় কালভার্ট নির্মাণ, পয়সারহাট-ত্রিমূখী বাজারের সুবিধাজনক স্থানে ৮/১০টি দরজা বিশিষ্ট স্লুইজ গেইট নির্মাণ, পয়সারহাট-কালুরপাড়-রত্নপুর বেরী বাঁধের রামের বাজার খালের মুখে স্লুুইজ গেইট বা ব্রিজ নির্মাণ, পয়সারহাট-কালুপাড়-রত্নপুর বেরীবাঁধে কাঠিরা খালের মুখে কালভার্ট নির্মাণ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন গোপালগঞ্জের রামশীল স্লুুইজ গেইট, ছয়গ্রাম (মিশ্রীপাড়া) স্লুইজ গেইটসহ বেরী বাঁধে ইনলেট, আউটলেটগুলো জরুরী ভিত্তিতে সংস্কার ও রক্ষনাবেক্ষণ। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন খালের মুখের বাঁধ অপসারণ করে সেখানে ব্রিজ নির্মাণসহ খালগুলো পুণঃখননের সুপারিশ।
সূত্রমতে, চলতি বছর বাকাল ১নং ব্রীজ এলাকা ও রাজিহার-বাকাল খালের মুখে বক্স কালভার্ট নির্মান হলেও পানি প্রবাহর হচ্ছেনা। একযুগপরেও অন্য প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে আলোর মুখ না দেখায় বন্যার আশংকায় দিন কাটাচ্ছেন উপজেলাবাসী। বন্যায় ফসলসহ সার্বিক ক্ষতি মোকাবেলায় জাতির পিতার ভাগ্নে, মন্ত্রী পদমর্যাদায় পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আব্দুুল্লাহ এমপি’র আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।