শেষ রক্ষা হল না সরাইল-অরূয়াইল সড়কের। মাত্র সাড়ে ৩ ঘন্টায় হাওরে বিলীন হয়ে গেল স্বপ্নের সরাইল-অরূয়াইল সড়কটি। একবারেই বন্ধ হয়ে গেল যœ চলাচল। সোমবার বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ এস এম মোসা। এত দ্রƒততম সময়ে সড়কটি বিলীন হয়ে যাওয়ায় আশ্চর্য্য হয়েছেন অনেকে। তবে ইউএনও বলছেন যাহা ধারণা করেছিলাম, তাহাই সত্যে পরিণত হয়েছে। স্থানীয়রা জানায়, বন্যার পানির বৃদ্ধির শুরূতেই ঢেউয়ের আঘাতে সদ্য সংস্কার হওয়া এ সড়কের বিভিন্ন জায়গায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছিল। উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এরপর এলজিইডি এগিয়ে এসেছে। বালির বন্তা ও বাঁশের খুঁটি দিয়ে চেষ্টা করেছেন সড়ক রক্ষার। ভাটি এলাকার লোকজনের মনে কিছুটা হলেও আশার সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু তাদের সকল স্বপ্ন ও আশা ধুলিস্যাৎ হয়ে গেল। গতকাল সোমবারের বৃষ্টি কেড়ে নিয়েছে তাদের সড়কের সুখ। নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, লোপাড়ার ছোট ব্রীজ থেকে বড় ব্রীজের (কুড়) মাঝামাঝি স্থানটি। দুপুর ১২ টা ৩০ মিনিটে সড়কের ওই জায়গাটির উপর আমার গাড়িটি স্বাচ্ছন্দে চলে গেল। ত্রাণ সামগ্রি নিয়ে সুন্দর ভাবে সড়কের উপর থেকে নৌকায় করে অরূয়াইল গেলাম। দুই ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ত্রাণ সামগ্রি বিতরণ শেষ করে রওনা দিলাম। তখন খুব বৃষ্টি পড়ছিল। হওরে প্রচন্ড ঢেউ ছিল। মনে মনে ভেবেছিলাম এমন ঢেউ অব্যাহত থাকলে সড়কের এ জায়গাটুকু ঠিকবে না। বিকাল ৫ টায় এসে আর সড়কের ওই জায়গা চিনতে পারছি না। বুঝতে আর বাকি রইল না। মূল বিষয় হচ্ছে সাড়ে ৩ ঘন্টা সময়ের মধ্যে হাওর গিয়ে ফেলেছে সড়কটি। সড়কের এ জায়গাটি দিয়ে আর কোন গাড়ি চলছে না। এর পরের অংশ তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে। সড়কটি বিলীনের খবর জায়গায় দাঁড়িয়েই আমি জেলা প্রশাসক মহোদয় ও জেলা এলজিইডির’র নির্বাহী প্রকৌশলীকে অবহিত করেছি। সেখানকার একাধিক লোক বলেন, গত ২-৩ সপ্তাহ ধরে এ সড়কের ভাঙ্গন রোধে কাজ হচ্ছে। অনেকেই পরিদর্শন করতে আসছেন। কিন্তু এই এলাকার বাসিন্ধা স্থানীয় সংসদ সদস্য উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া একবার এসে চুপিও দেননি। অথচ একসময় এই সড়কের কোথাও সামান্য ভাঙ্গন দেখা দিলেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছবিসহ গরম হয়ে যেত। লেখা হত-“ সড়কটি ভেঙ্গে যাচ্ছে দেখার কেউ নেই।” সাত্তার সাহেব না আসলেও ওইসব কথা এখন আর কেউ লিখেন না। প্রসঙ্গত: ২০১০ সালে হাওর বেষ্টিত অরূয়াইল-পাকশিমুল ও চুন্টা ইউনিয়নের দীর্ঘদিনের স্বপ্নের সরাইল-অরূয়াইল সড়কটি নির্মিত হয়েছে। সরাইল হাসপতালের মোড় থেকে সড়কটির দৈর্ঘ্য ১৪ কিলোমিটারেরও বেশী। নির্মাণের পর একধিকবার সংস্কার কাজও হয়েছে। কাজে অনিয়মের অভিযোগও ওঠেছে। জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় অনিয়মের প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে। সর্বশেষ সড়কটির ১২ কিলোমিটার জায়গায় ৩ জন ঠিকাদার ১১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা খরচ করে সংস্কার কাজ করেছেন। একাজেও ছিল অনিয়মের অভিযোগ। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও গত জুনে তড়িগড়ি করে ঠিকাদাররা তাদের অধিকাংশ বিলই উত্তোলন করে নিয়ে গেছেন। সড়কটি সংস্কারের পর শ্বাস ফেলতে পারেনি। এর আগেই বাণের পানির নীচে চলে যেতে হল। সড়কটি ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন শঙ্কিত ওই এলাকার বাসিন্ধারা।