বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার এমপিওভুক্ত একটি কলেজের জমি গ্রাসের চক্রান্ত, অনিয়ম ও ব্যবস্থাপনা কমিটির নেতৃত্বের দ্বন্দে শতাধিক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। অবহেলা, অনিয়ম ও আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির হওয়ার আশঙ্খার অভিযোগ পেয়ে জাতীয় নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) তদন্ত শুরু করেছে। কলেজটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে প্রাণ নাশের হুমকি দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগে জানা গেছে।
প্রতিষ্ঠানটির স্থাপনা পড়ে রয়েছে অযন্ত অবহেলায়। এমন পরিস্থিতিতে একটি এনজিও দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত এই কলেজের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) জাতীয় নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) ফিল্ড কর্মকর্তা মো. শাহিদুর রহমান জানান, রিজিওনাল পিস এ- ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. মহিদুর রহমান গত ১৪ জুন এনএসআইয়ের মহাপরিচালক বরাবর ওই কলেজের নানা অনিয়ম তুলে ধরেন। অভিযোগে তিনি আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির হওয়ার আশঙ্খা প্রকাশ করেন। যার প্রেক্ষিতে গত সপ্তাহ হতে তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তকালে এর চেয়ে বেশি কিছু বলা যায় না।
মঙ্গলবার চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মারুফুল আলম বলেন, সরকারী বিধিবহির্ভূত কাজ করার সুযোগ কারো নেই। যে কোন অন্যায়ের প্রতিকারের জন্য ন্যায় বিচারের ব্যবস্থা রয়েছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত তিনি কোন লিখিত অভিযোগ পাননি বলে জানান।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ওই কলেজে ১২৭ জন শিক্ষার্থী রয়েছে (মানবিকে ৫৩ জন, কারিগরিতে ৭৪ জন)।
রিজিওনাল পিস এ- ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. মহিদুর রহমান অভিযোগে জানান, কেএম রহমত আলী, এফএম বদরউজ্জামান ও মো. কামরুল ফকির কলেজের জায়গাসহ তার সংস্থার সম্পদাদি গ্রাস করার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন। বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার বড়বাড়িয়া ইউনিয়নের বড়বাড়িয়া গ্রামের স্বেচ্ছাসেবীদের উদ্যোগে ২০০২ সালে তাদের সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। সংস্থাটি ২০০৪ সালে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে নিবন্ধিত হয় (নিবন্ধন নং-বাগের-৬৫১/০৪)। এরপর মোল্লা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ প্রায় এক একর জায়গা দান করেন। সেখানে ২০০৫ সালে ‘বড়বাড়ীয়া আইডিয়াল কমার্স কলেজ’ স্থাপিত হয়। চিংগুড়ি-চিতলমারী-বাগেরহাট প্রধান সড়কের পাশে এই কলেজের অবস্থান। বাগেরহাট-১ আসনের এমপি শেখ হেলাল উদ্দীনের প্রচেষ্টায় ২০০৯ সালে কলেজটি এমপিওভুক্ত হয়। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের বিধিমালা-২০০৯ অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠিত হয়ে কলেজটি চলছিল। সংস্থার চেয়ারম্যানের মনোনীত হয়ে পর্যায়ক্রমে সংশ্লিষ্ঠদেও নেতৃত্বেও পাশাপাশি সর্বশেষ এফএম বদরউজ্জামান ওই কলেজের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
মহিদুর রহমান আরো জানান, তিনি খুলনা শহরে থাকেন। বড়বাড়ীয়া গ্রামের বাড়িতে মাঝেমধ্যে যাওয়া হয়। বর্তমান করোনার কারণে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। এর মধ্যে ব্যবস্থাপনা কমিটির দুই বছরের মেয়াদকাল শেষ দিকে চলে আসে। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বিশ্বজিৎ বালা তাকে জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় নিয়মিত কমিটি গঠন সম্ভব নয়। আহ্বায়ক কমিটি গঠনের জন্য বোর্ডের অনুমতি প্রয়োজন। মোবাইল ফোনে এসব কথা জানানোর পর এক মাস গত হলেও তার কোন খবর পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে, কেএম রহমত আলী, এফএম বদরউজ্জামান ও মো.কামরুল ফকির কলেজের জায়গাসহ তার সংস্থার সম্পদাদি গ্রাস করতে গোপনে সমাজসেবা, জয়েন্ট ষ্টক কোম্পনীজ এ- ফার্মস, শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে বিধিবহির্ভূতভাবে নতুন কমিটি করে জমা দিয়েছে। বিষয়টি ফাঁস হওয়ায় এলাকায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তিনি এই অন্যায়ের প্রতিকার ও কলেজটি বাঁচানোসহ শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবন নিশ্চিত করার জোর দাবী জানান।
ঢাকায় অবস্থান করেন কলেজের জায়গা দানকারী ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোল্লা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ। তিনি অভিযোগ করেন, এফএম বদরউজ্জামান, কেএম রহমত আলীসহ কয়েকজন অসৎ কাজে লিপ্ত হয়েছেন। তাদের ষড়যন্ত্র হতে কলেজটিকে রক্ষা করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
এদিকে, সকল অভিযোগ অস্বীকার করে এফএম বদরউজ্জামান জানান, তিনিও খুলনায় অবস্থান করেন। তার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ আনা হয়েছে তা ভিত্তিহীন। নিয়ম মেনে কলেজের নতুন কমিটি গঠিত হয়েছে। মো.কামরুল ফকিরও অভিযোগ অস্বীকার করেন। মহিদুর রহমানের লোকেরাই অনিয়ম করে আমাদের উপর দোষ চাপাচ্ছেন। অপরদিকে, কেএম রহমত আলীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।