বগুড়ায় বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) বন্যা কবলিত মানুষদের ত্রাণ সহায়তা দেওয়া ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করাসহ বিনামূল্যে করোনা টেস্ট নিশ্চিত করার দাবিতে মানববন্ধন সমাবেশ করেছে।
বুধবার (২৯ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে শহরের সাতমাথা এলাকায় তারা এই মাননবন্ধন সমাবেশ করে। সমাবেশে নেতারা অভিযোগ তুলেন সরকার উদাসীনভাবে আমলাদের নিয়ে সংকীর্ণ পথে এগোচ্ছে।
অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাসদ জেলা আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম পল্টু।
বক্তব্যে তিনি বলেন, প্রবল বর্ষণ ও উজানের ঢলে বগুড়ায় যমুনা ও বাঙালী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তৃতীয় দফা বন্যা দেখা দিয়েছে। বগুড়ার সারিয়াকান্দিসহ যমুনা তীরবর্তী সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার প্রায় ৩২ হাজার ৩৪২ পরিবারের ১ লাখ ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। জেলার এই তিনটি উপজেলায় পৌরসভাসহ ১৯ ইউনিয়নের ১৬২টি গ্রাম এখনও পানির নিচে রয়েছে। পাট, আউশ, আমনের বীজতলাসহ বিভিন্ন ফসলের প্রায় ৯ হাজার হেক্টর জমি পানিতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কিন্তু বন্যাকবলিত মানুষদের মাঝে পর্যাপ্ত পরিমাণ সরকারি ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, করোনার মতোই বন্যার ক্ষেত্রেও সরকার শুরু থেকেই আমলাদের নিয়ে উদাসিনভাবে সংকীর্ণ পথে এগোচ্ছে। সরকারি সংস্থার আমলারা ও দলীয় কর্মীদের দিয়ে বন্যা মোকাবিলার প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি উৎসাহিত হচ্ছে এবং অব্যবস্থাপনা বাড়ছে। পত্র পত্রিকায় সাম্প্রতিক সময়ে ত্রাণ চুরি ও অনিয়মের অনেক খবর প্রকাশ হয়েছে। এতে সরকার দলীয় লোকদের সম্পৃক্ততার তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এভাবে চললে সামনের দিনের পরিস্থিতি আরও জটিল হবে।’ তাই অবিলম্বে এই পথ পরিহার করে সকল রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, সেচ্ছাসেবী সংগঠন, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল ব্যাক্তিবর্গকে যুক্ত করে এক সাথে করোনা ও বন্যার মত মহামারী দুর্যোগ মোকাবিলার উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি জোর দবি জানানো হলো।
বক্তব্যে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট বগুড়া জেলা সভাপতি ধনঞ্জয় বর্মন বলেন, করোনার কারণে তিন মাস ধরে অর্থনৈতিকভাবে বিপদে থাকা মানুষ এখন দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কবলে। বন্যা পরিস্থিতির ক্রমান্বয় অবনতি হচ্ছে। দেশের ২১ জেলায় প্রায় ৩০ লাখের বেশি মানুষ এখন পানিবন্দী। আগস্ট পর্যন্ত বন্যার পানি থাকবে বলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন। ইতোমধ্যে বন্যার্ত মানুষের মধ্যে বিপদ হয়ে হাজির হয়েছে বিভিন্ন রোগবালাই।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে গত ৩০ জুন থেকে এ পর্যন্ত ৮৬ জন বন্যায় মারা গেছেন। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে জামালপুরে। এ জেলায় ২৩ জন বন্যার পানিতে ডুবে ও অন্যান্য কারণে মারা গেছেন। সেখানে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে ২৮৯ জন। কুড়িগ্রাম জেলা আক্রান্ত হয়েছেন ৬৫৬ জন। আর মারা গেছেন ১৮ জন।
গাইবান্ধায় ৪৩৬ জন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। সেখানে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। রোগের মধ্যে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। মৃত্যু ৮৬ জনের মধ্যে ৭১ জন বন্যাকবলিত হয়ে পানিতে ডুবে মারা গেছেন।
অনুষ্ঠিত সমাবেশ আরও বক্তব্য রাখেন সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট বগুড়া জেলা সাধারণ সম্পাদক শ্রমিক নেতা মাসুদ পারভেজ, সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্ট বগুড়া জেলা সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম বগুড়া জেলা সদস্য রাধা রানী বর্মন প্রমুখ।