আর দুই-এক দিন পরেই ঈদণ্ডউল আযহা। এই ঈদের প্রধান কর্তব্য হলো ঈদের নামাজ শেষে হালাল পশুকে যবাই করে কোবানি দেওয়া। আর কোরবানির পশুর গোস্ত ও হাড় কাঁটার জন্য প্রয়োজন হয় কাঠ। এই কাঠ মাঝারি ও ছোট গাছের গোড়ার দিকের কাঠ। প্রত্যেকটা গোলাকার। চারপাশটায় গাছের তাজা ছালবাকল। নিচটা সমতল। গোস্ত কাঁটার কাজে ব্যবহার করা হয় এ কাঠ। স্থানীয় ভাষায় যাকে বলা হয়ে থাকে গুঁড়ি বা খাটিয়া। এই খাটিয়া সারা বছর ব্যবহার করেন কসাইরা। তবে প্রত্যেক বছর কোরবানি ঈদের সময়ে এসব কাঠের আলাদা কদর দেখা যায়। তেমনি এবারও জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার কোরবানিদাতারা তাদের হালাল পশু যবাই করে পশুর গোস্ত ও হাড় কাঁটার জন্য গুঁড়ি বা খাটিয়া ক্রয়ের ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে,এই কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে খাটিয়া ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যস্ততা রেড়েছে। পশুরহাটের সঙ্গে অস্থায়ী ভাবে গুঁড়ি বা খাটিয়ার দোকান বসিয়েছেন তারা। গুঁড়ি বা খাটিয়াগুলো একটির ওপর আরেকটি রেখেছেন। থরে থরে সাজিয়ে রেখেছেন এসব কাঠের গুঁড়ি বা খাটিয়া। মাঝারি ও ছোট আকৃতির তেঁতুল, বেল,নিম, জাম, আম,শিশু ও মেহগুনি গাছের শেষ ভাগের চাকা চাকা করে কাটা হয়েছে। এর পুরত্ব রাখা হয় ১০ থেকে ১৪ ইঞ্চি এবং ১৬ থেকে ২০ ইঞ্চি পর্যন্ত। দেড়শ’ থেকে ৪শ’ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হচ্ছে এসব গুঁড়ি বা খাটিয়া। পুরত্ব এবং সাইজ অনুসারে এসবের দাম কম-বেশি হচ্ছে। ক্রেতারা গুঁড়ি বা খাটিয়াগুলো এদিক-সেদিক করে দেখে কিনছেন। ক্রেতাকে দেখাতে অনেক সময় খাটিয়াগুলো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। তবে মুহূর্তেই সেগুলো আবার গুছিয়ে রাখতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন খাটিয়া বিক্রেতারা। গত কয়েক দিনে ধরে উপজেলার বিভিন্ন হাট ঘুরে কোরবানি পশুর গোস্ত ও হাড় কাঁটার খাটিয়া বিক্রির এমন দৃশ্য নজরে পড়ে।
সূত্রমতে, ঈদণ্ডউল আযহায় পশু কোরবানি করার পরে গোস্ত টুকরা করা ও হাড় কাঁটার অন্যতম অনুসঙ্গ হলো গুঁড়ি বা খাটিয়া। যাতে ধারালো দেশীয় অস্ত্র দিয়ে গোস্ত ভালোভাবে ছাটাই করা যায়। সব গাছ দিয়ে খাটিয়া তৈরি করা যায়না। গুঁড়ি বা খাটিয়া তৈরি করতে প্রয়োজন তেঁতুল, বেল,নিম, জাম, আম, শিশু ও মেহগুনি গাছের। কারণ অন্য গাছের কাঠের তুলনায় ঐসব গাছের কাঠে দা-ছুরির আঘাত সহ্য করার ক্ষমতা অনেক বেশি। তাই ঐসব গাছ ছাড়া অন্য গাছ দিয়ে গুঁড়ি বা খাটিয়া তৈরি করলে গোস্তের সাথে গাছের গুড়ি উঠে গোস্তের মান নষ্ট হয়ে যায়। তাই ঈদণ্ডউল আযহা আসলেই ঐসব গাছের চাহিদা বেড়ে যায়। স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ীরা গ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে তেঁতুল, বেল,নিম, জাম, আম,শিশু ও মেহগুনি গাছ সংগ্রহ করে স্ব-মিলে খন্ড খন্ড করে খাটিয়া তৈরি করে থাকেন। আর এই কোরবানি ঈদ দিন যতোই ঘনিয়ে আসছে চড়াদামে কোরবানি দাতারা ঐসব গাছের তৈরি গুঁড়ি বা খাটিয়া ক্রয় করছেন।
খাটিয়া বিক্রি করতে আসা উপজেলার মাত্রাইহাটে আবদুল কাদের ও পুনটহাটের আনিচুর রহমান জানান, ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী ছোট, মাঝারি ও বড় তিন ধরনের গুঁড়ি বা খাটিয়া রয়েছে। একটি ছোট খাটিয়া ১শ’ ৫০থেকে ২শ ৫০’ টাকা, মাঝারি ৩শ থেকে ৩শ ৫০ টাকা এবং বড় ধরনের খাটিয়া ৪শ থেকে ৪শ ৫০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে বলে তারা জানান।
মোলামগাড়ী-হাটে খাটিয়া কিনতে আসা মো. জহুরুল, খালেক ও জাকিসহ অনেকেই জানান, ঈদের নামাজ পড়ে এসে পশু কোরবানি দেওয়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়তে হয়। তখন জিনিসপত্র খোঁজাখুঁজি করা বা অন্যের কাছ থেকে নেওয়া অনেকটা বিড়ম্বনা হয়ে দাঁড়ায়। তাই গোস্ত ও হাড় কাঁটার অত্যন্ত প্রয়োজনীয় জিনিস গুঁড়ি বা খাটিয়া ক্রয় করেন তারা।