সম্প্রতি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) কর্মরত সাংবাদিকদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুটিকয়েক শিক্ষকদের সংগঠন ‘নব প্রজন্ম শিক্ষক পরিষদ’র দেয়া অনৈতিক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন বিবৃতি এবং তৃতীয় শ্রেনীর এক কর্মচারী খোরশেদ আলম কর্তৃক শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের কটূক্তির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন অধিকার সুরক্ষা পরিষদ।
বৃহস্পতিবা দুপুরে বেরোবি অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মতিউর রহমান এবং সদস্য সচিব খাইরুল কবির সুমনের পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে এ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায় অধিকার সুরক্ষা পরিষদ।
‘নব প্রজন্ম শিক্ষক পরিষদ’র বিবৃতি উদ্দেশ্য প্রণোদিত উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলেন- বিগত ২৪ জুলাই ২০২০ তারিখে শিক্ষার্র্থীদের নিয়ে প্রকাশিত এই সংগঠনের বক্তব্য আমাদের আহত করেছে। নতুন শিক্ষকবৃন্দের এই সংগঠন কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ ভোমরা শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের বিষয়ে সংবিধান বিরোধী, অনৈতিক এই বক্তব্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা শিক্ষক হিসেবে “নবপ্রজন্ম শিক্ষক পরিষদ” এর এহেন অশিক্ষকসুলভ বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখান করছি এবং ভবিষ্যতে কেউ যেন শিক্ষক পরিচয় ব্যবহার করে এভাবে শিক্ষার্থীদের হেয় প্রতিপন্ন এবং শিক্ষক সমাজের মর্যাদা ক্ষুণœ করতে না পারে সে জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে সচেতন থাকার জন্য আহবান জানাচ্ছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেনীর কর্মচারী খোরশেদ আলমের ফেসবুক পোস্ট মানহানিকর উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়- বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কিছু শিক্ষকের অশিক্ষকসুলভ বক্তব্যকে ভিত্তি করে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য নিযুক্ত একজন কর্মচারী খোরশেদ আলম শিক্ষার্থীদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে যে কুরুচিপূর্ন ও মানহানীকর বক্তব্য প্রদান করেছে তা নজিরবিহীন একটি ঘটনা। অবেক্ষাধীন থাকা একজন কর্মচারীর এই ধরনের আচরণ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এইযে, এই কর্মচারী তার কৃত অপরাধের সঙ্গে অত্যন্ত ঔদ্ধতভাবে সরাসরি উপাচার্যকে জড়িয়ে মিডিয়াতে বক্তব্য প্রদান করেছে এবং এখন পর্যন্ত ঔদ্ধত্যপূর্ণভাবে সংক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদেরকে ফেইসবুকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে চলেছে। অথচ এ বিষয়ে সংক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট লিখিতভাবে অভিযোগ করার পরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্লিপ্ত রয়েছে। এহেন পরিস্থিতিতে আমরা মনে করি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ এ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় সম্পূর্ণরূপে নৈতিকতা হারিয়েছেন।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়- “নবপ্রজন্ম শিক্ষক পরিষদ’’ বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার সমর্থন দিয়ে আসছে। এই পরিষদের সদস্যদের নানা সময়ে মৌখিক ও লিখিত বক্তব্য আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের হেয় প্রতিপন্ন করে তারা বিভিন্ন সময়ে যে বিবৃতি দিয়েছে তা আমাদের বিব্রত করেছে।
বিবৃতিতে তারা বলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক শিক্ষার্থীবৃন্দ তাঁদের লেখাপড়ার পাশাপাশি নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সাংবাদিকতার মত মহান পেশায় নিয়োজিত থেকে অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। সাংবাদিকতা একটি স্বাধীন পেশা। কোন সংবাদ পরিবেশিত হবে আর কোনটি পরিবেশিত হবে না, তা অবশ্যই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সংবাদ প্রকাশের নীতির উপর নির্ভর করে। এ বিষয়ে জোর-জবরদস্তি বা নির্দেশনা গ্রহণে বাধ্য করা সম্পূর্ণরূপে নৈতিকতা বিবর্জিত কাজ, একটি অপরাধ এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থি।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় আজ এক শনির চক্রে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। করোনা মহামারী চলাকালীন শিক্ষার্থীদের পাঠদান প্রক্রিয়া যেখানে বন্ধ রয়েছে, সেখানে এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঢাকাস্থ লিয়াজোঁ অফিস থেকে নানা অন্যায়, অনিয়ম, ও র্দুনীতি করেই চলেছে। এহেন অরাজক পরিস্থিতির হাত থেকে এ বিশ্ববিদ্যালয়কে বাঁচাতে ‘অধিকার সুরক্ষা পরিষদ’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা’র সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করছে।
প্রসঙ্গত, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গুটিকয়েক শিক্ষকদের সংগঠন ‘নব প্রজন্ম শিক্ষক পরিষদ’র অনৈতিক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন বিবৃতি এবং খোরশেদ আলমের এমন কটূক্তির প্রতিবাদে সারাদেশে চলছে সমালোচনার ঝড়। বেরোবি ক্যাম্পাসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাংবাদিক সংগঠন ও সামাজিক সংগঠনগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে এর তীব্র প্রতিবাদ, নিন্দা ও বিচার দাবি করেছেন।