পীরগঞ্জের দুঃস্থদের জন্য সাড়ে ৩’শ গবাদিপশু কোরবানী দিলেন সিঙ্গাপুর প্রবাসীরা। তারা সকলেই মুন্সিগঞ্জের বাসিন্দা। গত রোববার ২য় দফায় উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের গনিরবাজারে রাজুর চাতালে ৩৫টি গরু কোরবানী করা হয়। এর আগে ঈদের দিন ৩১০ টি খাসি কোরবানী করা হয়। জানা গেছে, পীরগঞ্জের রামনাথপুর ইউনিয়নের চেরাগপুর গ্রামের মাহমুদুন নবী রাজু মাষ্টার (৩৬)। প্রায় ৪ বছর আগে তার কাছ থেকে সিঙ্গাপুর প্রবাসী মুন্সিগঞ্জের আব্দুল মাজিদ একটি ছোট ট্রাকযোগে পীরগঞ্জ থেকে কোরবানীর গরু ক্রয় করে মুন্সিগঞ্জে নিয়ে যান। তারপর থেকেই রাজুর সাথে মাজিদের সু-সম্পর্ক হয়ে তা হৃদয়িকভাবে গড়ায়। মুন্সিগঞ্জের মাজিদের সাথে সিঙ্গাপুরে প্রায় সাড়ে ৫’শ বাংলাদেশী বসবাস করেন। কিন্তু সেখানে বিশেষ কারণে ঈদুল আজহায় কেউ কোরবানী দিতে পারেন না বলে জানা গেছে। ফলে মাজিদেরা ৫ বছর ধরে সমন্বিতভাবে দেশেই তাদের এলাকায় এবং বাইরের জেলায় ঈদুল আজহার কোরবানী দিয়ে আসছেন। যারা কোরবানী দিতে পারেন না, তাদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতেই ওই প্রবাসীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে তারা কোরবানীর জন্য গবাদিপশু পাঠায়। এরই ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদে পীরগঞ্জবাসীর জন্য প্রবাসী মাজিদ ৩৫ টি গরু এবং ৩১০ খাসি কোরবানীর জন্য দিয়েছেন। যার বাজার মুল্য প্রায় ৪০ লাখ টাকা। ঈদের দিন (শনিবার) উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের গনিরবাজারে রাজু মাস্টারের চাতালে ১ম দফায় সব খাসি কোরবানী দিয়ে ইউনিয়নটির দ্বারিয়াপুর, করিমপুর, জামদানী, চেরাগপুর ও মাদারপুর গ্রামে এবং পাশ^বর্তী চতরা, কাবিলপুর ও রায়পুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের ১ হাজার ১’শ মানুষের মাঝে ওই মাংস বিতরন করা হয়। গতকাল রোববার একই স্থানে ২য় দফায় ৩৫টি গরু কোরবানী করা হয়। এর আগে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা নাম তালিকাভুক্ত করে মাজিদের দেয়া টোকেন প্রদান করে। দুঃস্থরা স্বাস্থ্য বিধি মোতাবেক মাংস সংগ্রহ করেন। মাংস পেয়ে ধনশালা গ্রামের সুমন মিয়া তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, এমন মহৎ মানুষদের উদ্যোগের কারণে আজ কয়েক হাজার মানুষ মাংস পেলাম। আমরা তাদের জন্য দোয়া করছি। করোনা ও বন্যায় পীরগঞ্জে প্রায় ৫ হাজার মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরনকারী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সহকারী অধ্যাপক জাহিদুল ইসলাম রুবেল তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, কোরবানী হলো মহব্বত ভিত্তিক ত্যাগ। এই ত্যাগের মহিমায় পীরগঞ্জবাসীর পক্ষ থেকে মাজিদ ভাইদের জন্য দোয়া করি। তারা যেন আরও বেশি করে দান করেন। রাজু মাস্টার বলেন, মহামারী করোনার কারণে এবারে ঈদুল আজহায় পীরগঞ্জে অনেকেই কোরবানী দিতে পারেননি। তাদের জন্য সিঙ্গাপুর প্রবাসী মুন্সিগঞ্জের আব্দুল মাজিদ ভাইকে বলে আমি ৩১০ টি খাসি এবং ৩৫টি গরু নিয়ে কোরবানী করেছি। ওই মাংস প্রায় ৩ হাজার মানুষের মাঝে বিতরন করেছি। এ ছাড়াও কিছু হাফিজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানায় ৫/১০ কেজি করে মাংস দেয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, সিঙ্গাপুরে বসবাসরত ৫৫৫ জনের নামেই কোরবানী করা হয়েছে। এরমধ্যে ১ টি করে নামে ৩১০ টি খাসি এবং প্রতিটি গরুতে ৭ টি করে ২৪৫ জনের নাম দিয়ে মোট ৫৫৫ জনের নামে কোরবানী করা হয়েছে।